“বাজেটে আশার আলো নেই, অন্ধকারের অমাবস্যা”, মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় কেন্দ্র

বীরভূমে সভা থেকে কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই বাজেটে গরিব মানুষের কোনও উপকার হবে না। এই বাজেট জনবিরোধী, শ্রমিক-কৃষক বিরোধী বলেই মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে একেবারেই খুশি নন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাজেটকে তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমে সভা থেকে কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই বাজেটে গরিব মানুষের কোনও উপকার হবে না। এই বাজেট জনবিরোধী, শ্রমিক-কৃষক বিরোধী বলেই মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, “সব বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। বেকার জন্য কি একটাও কথা বলেছে?” যে যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দক্ষিণের কিছু রাজ্য রয়েছে, তাদের আয়টা অন্যভাবে হয়। সেটা বাংলায় করা যায় না বলেও জানান তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই বাজেটে আশার আলো নেই, বরং অন্ধকারের অমাবস্যা আছে। এটা অপরচুনিস্টিক বাজেট। বাজেটে একশ্রেণির লাভ হয়েছে, আর দরিদ্ররা বঞ্চিত হয়েছেন। টোটাল অ্যান্টি পুওর বাজেট। ওরা বলছে, সারা ভারতে ৮১ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্রুপ করবে। কিন্তু এটা তো রাজ্য করে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ছিল ১ লক্ষ। এখন ১১ লক্ষ। সেটাকেই যুক্ত করে বলছে। রাজ্য যা করে, তাকেই যুক্ত করে বলছে। তোমার ক্রেডিট কোথায়? কী করেছে আইসিডিএস, আশাকর্মী, কৃষক, বেকারদের জন্য? নিত্য জিনিসের দাম বাড়ছে, কী করেছো? বাজেটে দরিদ্ররা বঞ্চিত। একাংশ বঞ্চিত হয়েছে। তবে স্ল্যাবের নামে যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, কোনও লাভ নেই, টোটালটাই লোকসান। আজ পর্যন্ত কোনও কথা রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমবার বলেছিল, প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, কেউ পেয়েছেন? এই বাজেট দিশাহীন। এখানে একটা কথাও বেকারদের জন্য বলা নেই। চাকরি যা ছিল, তাও প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে। সব বিক্রি করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সেক্টরগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।বলেছিল ২ কোটি লোকের চাকরি দেওয়া হবে, ৪০ শতাংশ চাকরি কমে গিয়েছে গরিবদের দিকে ফিরে তাকায়নি।

কেন্দ্রকে নিশানা করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সত্যিকারের চোরডাকাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই। কাল সারা দেশ জুড়ে রেইড হয়েছে। কেন টাকা নেই বুঝি? লোকের পকেট মারতে হবে? কেন্দ্রীয় ভান্ডারে টাকা নেই। ৮ শতাংশের নামে ৬ শতাংশে নামবে। শুধু বক্তৃতা, চিঠি পাঠানো। আমি এরকম সরকার আগে দেখিনি। কথায় কথায় পুলিশ সুপার, ডিএমদের ডেকে বৈঠক করছেন। বিজেপির চুনোপুটিগুলো মিটিং করছে। তাদের মুখেও বড় বড় কথা। সবাইকে ইনকাম ট্যাক্স ধরাচ্ছে, সবাইকে ইডি ধরাচ্ছে, সিবিআই ধরাচ্ছে আর টিকটিকিও আপনার ঘরে ঢোকে, তাহলে এনআইএ ঢুকে যাচ্ছে। তাদের কাজ কী, দেশের সিকিওরিটি রক্ষা করা।”

কেন্দ্রের আবাস যোজনা নিয়েও তোপ দাগেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের টাকা কেন্দ্রের কাছে জমা পড়ূবে, সেখান থেকে রাজ্যের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আমার টাকা আমি জমা করছি। সেই টাকা ওরা ফিরিয়ে দেবে। ওরা সেই টাকা দেয় না। কেন বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র? এখন জিএসটির মাধ্যমে চলে যায়। অথচ আমাদের টাকা আমাদের দেওয়া হচ্ছে না।”

কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়কর ছাড় নিয়ে যা ঘোষণা করা হয়েছে, সেই বিষয়টিকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ”মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে, আয়করে ছাড় দিয়ে লাভ নেই।”

গরিবকে বঞ্চনার এই কেন্দ্রীয় বাজেটকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “১০০ দিনের কাজের টাকা, আগের বছর কমিয়ে দিয়েছিল। এবার ‘ড্রাস্টিক কাট’ করে দিয়েছে। তার মানে ১০০ দিনের কাজ আর আপনারা ওদের কাছ থেকে পাবেন না। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মাইনি পর্যন্ত এখনও দেননি। আমাদের টাকা তোমরা আটকে রাখো কী করে? ইজ় ইট নট অ্যা ক্রিমিন্যাল অফেন্স? সংবিধানে বলা আছে, ১০০ দিনের কাজ করলে, সময় মতো টাকা দিতে হবে। এটা কম্পালসারি। এটা অপশন্যাল নয়। এটা সাংবিধানিক। দেয়নি। আইসিডিএস এ আগে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল ৯০ শতাংশ, রাজ্য দেবে ১০ শতাংশ। এখন তুলে দেওয়ার জন্য ৬০-৪০ করে দিয়েছে। আশার মেয়েরা দেড় হাজার টাকা করে পেত, হঠাৎ সব বন্ধ। কিন্তু আমরা টাকা দিই। লক্ষ্মীর ভান্ডারটা কেড়ে নিয়েছে বিজেপি, তাই আমরা এই ভান্ডার দিয়েছি। বাংলায় এখনও বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে। আজ আরও একটা বড় কেলেঙ্কারি করে ফেলেছে কেন্দ্র। ফুড সাবসিডি কমিয়ে দিয়েছে। তার মানে আগামী দিনে গরিব যাতে রেশন না পায়, ওখান থেকেও টাকাটা মেরে দেবে। আমরা বিনা পয়সায় রেশন দিই। আমরা যে রেশন দিই, সেই টাকাও বন্ধ। ওরা নাকি অনেক গ্যাসের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। গ্যাস বেলুন জানেন? গ্যাস বেলুনের মতো গ্যাসের দাম কমিয়েছেন। ধরুন, ছিল ৭০ টাকা, এখন ১ হাজার ১১০। ১১২০ টাকা!”

Previous articleবাংলার প্রাপ্তি নিয়ে ধোঁয়াশা, রেল বাজেটে শুধুই ‘রেকর্ড’ বরাদ্দ মোদি সরকারের
Next articleEntertainment : অভিনয় জগতে ইব্রাহিমের এন্ট্রি ,কাজলের সঙ্গে এক ফ্রেমে সইফ পুত্র !