পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংখ্যালঘুদের প্রতি কৃত্রিম দরদ দেখানোর কৌশল নিয়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতারা। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী হঠাৎ করে মুসলিম দরদী হয়ে উঠেছেন। এবার সেই পথেই হাঁটলেন বিজেপির পরিযায়ী নেতা তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। আজ, শুক্রবার ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে যাওয়ার আগে বিমান বন্দর থেকে মুসলিমদের জন্য বার্তা দিলেন মিঠুন। বললেন, “বিজেপি কোনওদিনই মুসলিম বিরোধী নয়, আমি চাই আমার মুসলিম ভাইবোনেরা ভাল থাকুক।” মিঠুনের এমন বক্তব্যের পাল্টা দিতে ছাড়েননি তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। মিঠুন-সহ বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, এরা মুসলিমদেরও বন্ধু নয়, হিন্দুদেরও বন্ধু নয়। বিজেপি রাবণের রাজনীতি করছে।

এদিন সাংবাদিকরা মিঠুনকে প্রশ্ন করেন বিজেপির নয়া স্ট্র্যাটেজি কি সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের দিকে নেওয়া? মিঠুনের উত্তর ছিল, “কেন আবার একথা বলছেন? বিজেপি কবে সংখ্যালঘু বিরোধী ছিল? ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল, বিজেপি মানেই সংখ্যালঘু বিরোধী। এটাকে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি মুসলিম বিরোধী নয়। বাংলার ‘হিন্দুস্থানি মুসলিম’দের কথা আমরা ভাবি। আমি চাই আমার পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ভাইবোনরা ভাল থাকুক।”

মিঠুনের এমন মন্তব্যের পর কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি বিজেপি মুসলমানদের বন্ধু নয়,হিন্দুদেরও বন্ধু নয়, বিজেপি মানবতার বন্ধু নয়, বিজেপি দেশেরও বন্ধু নয়। এই বিজেপি তো একটা সময়ে উগ্র হিন্দুত্বের কথা বলে ভোট করার দিকে গিয়েছিল। আজকে তারা বুঝতে পেরেছে তাদের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মানুষ। কারণ ধর্ম দিয়ে কারও পেট ভরে না। সেই কারণে এখন আবার ছুটে বেড়াচ্ছে চারপাশের মানুষকে ঠিক করার জন্য। তৃণমূল হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সকলের কথা বলে। আমরাবিভাজনের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের পক্ষে। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ উন্নয়ন পাক এটাই চায় তৃণমূল।”

কুণালের আরও সংযোজন, “এই বিজেপি তো এতদিন বলে এসেছে আমরা হিন্দু রাষ্ট্র চাই। এই বিজেপি তো বলে আসছে অন্য দলগুলি মুসলমানদের পক্ষে, তারাই শুধু হিন্দুদের পক্ষে। শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের বলেছে জেহাদি। বিভাজনের রাজনীতি করে বলেছে হিন্দু বুথ, মুসলিম বুথ। বলেছে ৩০ শতাংশের ভোট লাগবে না, ৭০ শতাংশ বিজেপির পক্ষে। উগ্র হিন্দুত্ববাদের জন্য বিভিন্নরকম ভেদাভেদ মূলক কথাবার্তা তারা বলেছেন। এখন এসব কথা বলে চলবে না। তাদের দ্বিচারিতা, দেউলিয়াপনা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।”

বিজেপির ছদ্মবেশী রাজনীতি নিয়ে কুণালের কটাক্ষ, “দিলীপ ঘোষ থেকে সুকান্ত মজুমদার কিংবা শুভেন্দু অধিকারী থেকে মিঠুন চক্রবর্তী দিশাহীন রাজনীতিতে নেমেছে। তারা এখন নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করতে মরিয়া। বিজেপি আসলে রাবণের রাজনীতি করছে আর মুখে জয় শ্রীরাম বলছে। মা সীতাকে যখন রাবণ অপহরণ করেছিল, তখন ছদ্মবেশে গিয়েছিল সাধুর বেশে। আর অপহরণের পর রাবণের প্রকৃত রূপ ধরা পড়েছে। এই বিজেপিও বুঝেছে জয় শ্রীরাম দিয়ে আর চলবে না, তাই এখন ছদ্মবেশে রাবণের রাজনীতি করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। রাম মানে শুধুই বিজেপি এমনটা নয়, বহু রামভক্ত আছেন, যাঁদের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।”

হজ যাত্রীদের সঙ্গে এখন বিজেপি নেতারা দেখা করছেন সেলফি তুলছেন। এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “বিজেপি বুঝে গিয়েছে ধর্মের বিভাজনের রাজনীতি করে আর কিছু করা যাবে না। বিজেপি নিজেদের স্বার্থে ধর্মে ধর্মে বিভাজন করে ভোট ব্যাঙ্ক বানিয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটে জিতেছে এটা সম্পূর্ণ ভুল। তৃণমূল কংগ্রেস হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সকলের ভোট পেয়ে জিতেছে। যে মানুষগুলি ৩৪ বছরে সিপিএমের অপশাসন দেখেছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। আবার পরিবর্তনের পর যাঁরা দেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলার বুকে উন্নয়ন হচ্ছে, কোন না কোন পরিবারের কিছু না কিছু প্রকল্প থেকে উপকার পাচ্ছেন তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করছেন। ফলে এখানে জাতি ধর্ম বর্ণের কোনও বিষয় নেই। মুসলমান ভোট তৃণমূলের, আর হিন্দু ভোট বিজেপির এই ধারণাটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং ভুল। তৃণমূল অনেক বুথে ৯০ শতাংশ করে ভোট পেয়েছে, ফলে এখানেই পরিষ্কার তৃণমূল সব ধর্মের মানুষের সমর্থন পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষে বিশ্বাস করে আর বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগাভাগির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।”
