ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে জমি বিবাদের মধ্যেই এ বার সরাসরি আশ্রমিক এবং বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের একটি অংশকে তোপ দাগলেন তিনি। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, আশ্রমিক, প্রাক্তনী এবং রাবীন্দ্রিকেরা বিশ্বভারতীকে ভোগ করতে চান। কোনও দায়িত্ব পালনে তাঁদের নাকি উৎসাহ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকার হয় এমন কোনও কাজে তাঁদের অনীহা।

আরও পড়ুন:উপাচার্য হতে ‘ঘুষ’ দিতে হয়! কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর
উপাচার্যের দাবি, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা চিরকাল বিশ্বভারতীর বিভিন্ন কাজে মূল্যবান মতামত দিয়ে থাকেন। কিন্তু ২০১৮ সালে বিশ্বভারতীতে যোগ দেওয়া কাউকে এ কাজে এগিয়ে আসতে দেখেছেন, এমন অভিজ্ঞতা তাঁর এত দিনে হয়নি। তাঁর কথায়, “ওঁরা শুধুমাত্র অধিকার ভোগ করতেন। কিন্তু অধিকার থেকে যে দায়িত্ব তৈরি হয় সেটা যে কোনও কারণে তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন। আমি যে দায়িত্বের কথা তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছিলাম তার পর তাঁরা আর আসেননি।”

উপাচার্যের এমন মন্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া এসেছে আশ্রমিকদের কাছ থেকে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “আমি ওঁর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনও কারণ দেখি না। সবাইকে খারাপ বলেন, উনি একাই ভাল। কী আর করা যাবে! উনি যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। অমর্ত্য সেনের মতো মানুষের নামে যা খুশি তাই বলছেন। সুতরাং, ওঁকে নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর কারণ নেই। উনি এটাই করে যাবেন। এটাই স্বভাব।” আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘আজ থেকে তিন-চার বছর আগে ওঁর যখন ছাত্রদের নিয়ে কিছু সমস্যা হয় তখন আমরা আশ্রমিকরা চিঠি দিয়েছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। কিন্তু সেই চিঠির আজ পর্যন্ত কোনও রকম উত্তর নেই। কোনও দিন আলোচনা করতে আমাদের ডাকেননি। ওঁর সমস্যা ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে সমাধানের কোনও উপায় নেই।’’

এখানেই শেষ নয়, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী মনোজিৎ মণ্ডলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কটাক্ষ করেছেন।সম্প্রতি মনোজিৎবাবুকে পাঠানো তাঁর একটি ই-মেল সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছে। যেখানে বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোজিৎকে মণ্ডলকে তিনি লিখেছেন, “আমি জানি, আপনি আপনার পারিবারিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন না”।

জবাবি ই-মেলে মনোজিৎ লিখেছেন, “আমার অতীত ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কিত বাকি চিঠির বিষয়বস্তু ততটাই নিচু এবং ঘৃণ্য, যতটা নিচু আপনার অধ্যাপক সেনকে সংবাদমাধ্যমে জমি দখলকারী তকমা দেওয়া।” উপাচার্যের প্রতি তাঁর আর্জি, বিশ্বভারতীর প্রতি যে দায়িত্ব পালন করছেন, তা তিনি কঠোর ভাবে বিবেচনা করুন। একই সঙ্গে শেষ এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতীর অবনমন (৩১ থেকে ৯০ স্থানে) নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মনোজিৎ। তাঁর কথায়, “প্রথমে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম যে, কোনও উপাচার্য এমন মেল পাঠিয়েছেন, আমার রাজনৈতিক মন্তব্যর প্রেক্ষিতে। যদিও তা অসম্মানজনক ছিল না। পরে বুঝলাম যিনি অনায়াসে অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে জমি চোর আর মুখ্যমন্ত্রীকে প্রায় পাগল সাজাতে পারেন, তাঁর পক্ষে এই কুৎসিত মেলই মানানসই। আমার প্রতিবাদ জানিয়ে উত্তর পাঠিয়েছি।”
