Tuesday, August 26, 2025

ত্রিপুরায় সরকার গঠনে “কিং মেকার” তিপ্রার মহারাজা! ভোটের হারে হতাশ বিজেপি

Date:

Share post:

বহুচর্চিত ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের পর রাজনৈতিক মহল মনে করছে সরকার গঠন বড় ভূমিকা নিতে পারে রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মার তিপ্রা মথা। এই প্রথম বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দিয়েছিল মহারাজার দল। ত্রিপুরার রাজনীতিতে পরীক্ষিত নয় তিপ্রা। ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবেই লড়াই করেছে মহারাজা প্রদ্যুৎ মানিক্যর দল। ভোটের শেষে আত্মবিশ্বাস ঝড়ে পড়ছিল মহারাজার শরীরী ভাষায়। ৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরায় অন্তত পক্ষে ১০টি পাচ্ছেই তিপ্রা মথা। আর তাতেই কেল্লাফতে। “কিং মেকার” হতে পারেন ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যুৎ মানিক্য।

আরও পড়ুন:সিকিম, মেঘালয়ের পর শুক্রের সকালে ভূ*মিকম্পে কেঁপে উঠল জম্মু! বড় বিপদের আশঙ্কায় ভূবিজ্ঞানীরা

অন্যদিকে, ২০১৮ নির্বাচনে দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম জমানায় অবসান হলেও বাংলার মতো ত্রিপুরায় ভেঙে পড়েনি লাল সংগঠন। সেক্ষেত্রে বামেরা ২৫টি আসন পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জোটসঙ্গী কংগ্রেস আগরতলা সহ সমতলে চার থেকে পাঁচটি আসন জেতার জায়গায় আছে। সেক্ষেত্রে মাত্র পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যে জায়গায় পৌঁছেছিল, তাতে বিজেপির ঝুলিতে মেরেকেটে ২০টি আসন যেতে পারে। ফলে আগামী ২ মার্চ গণনার শেষে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের ফলাফল ত্রিশঙ্কুর দিকেই ইঙ্গিত করছে।

গেরুয়া শিবিরের সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ এবার বিধানসভা ভোটে কোথাও ৯৩ শতাংশ তো কোথাও ৯০%, ৮৮% ভোট পড়েছে, কোথাও আবার ৮২% থেকে ৮৫%. সার্বিকভাবে ত্রিপুরায় ভোটের হার ৮৮%. যা শাসক শিবিরের ঘুম কেড়েছে।

ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা নজর কেড়েছে। যা শাসকের জন্য মোটেও সুখকর নয়। গতকাল ভোটের দিন ড়ির কাঁটায় ভোটগ্রহণ শুরুর সময়ও হয়নি। তখনই বুথগুলির বাইরে শয়ে শয়ে মানুষের লাইন! মহিলাদের যোগদান ছিল চোখে পড়ার মতো। দিনভর তো বটেই, বৃহস্পতিবার বেলা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত এই ভাবেই ভোটারের লাইন দেখা গেল গোটা ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে। সমতলের সাধারণ কেন্দ্র হোক বা পাহাড়ি এলাকায় জনজাতি-অধ্যুষিত আসন, সর্বত্র একই ছবি।

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮১.১০%। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও প্রায় ১৬০০ ভোট-কেন্দ্রে যত মানুষ লাইনে ছিলেন, তাঁদের টোকেন দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেব ধরলে ভোটদানের হার ৯২% ছাড়িয়ে যাবে বলে কমিশনের বক্তব্য ছিল। গত বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় প্রায় ৮৮% ভোট পড়েছিল, সে বার পালাবদল হয়েছিল। আবার ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৯৩% ভোট পড়ার নজির আছে। তখন কিন্তু সরকার বদলায়নি।

এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম অপশাসন থেকে মুক্ত করতে ২০১৮ সালে রাজ্যে পরিবর্তন আনে ত্রিপুরাবাসী। অনেক প্রত্যাশা, ভরসা, বিশ্বাস থেকে মানুষ অত্যাচারী সিপিএমের হাত থেকে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল বিজেপির হাতে। কিন্তু গত পাঁচবছরে মানুষ বুঝেছেন ত্রিপুরায় খাল কেটে কুমির এনেছেন তাঁরা। রাজ্যকে রসাতলে পাঠিয়েছে ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি। অপশাসনে বামেদেরকেও টেক্কা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। গত পাঁচ বছরে শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, খাদ্য থেকে কর্মসংস্থানে ত্রিপুরাকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে বিজেপি। পরিবর্তে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, ত্রিপুরা বিজেপির আমলে জঙ্গল রাজ্যে পরিণত হয়েছে। শান্তিপ্রিয় ত্রিপুরায় অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় পৌরনিগমের নির্বাচন হোক নগর পঞ্চায়েত, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে ত্রিপুরা জুড়ে।বিরোধীদের রক্ত ঝরেছে। অবাধে ছাপ্পা, রিগিং থেকে ভোট লুট থেকে করেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিরোধীদের নামে দেওয়া হয়েছে ভুয়ো মামলা। মানুষকে ভয় দেখিয়ে বুথে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বাদ যাননি পুলিশ কর্মীরাও। আক্রান্ত হয়েছে মহিলা থানা। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এবার ত্রিপুরার ভোট ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

ত্রিশঙ্কু হলে ঘোড়া কেনাবেচা হবে তা নিশ্চিত। সব রাজনৈতিক দলের দাবি, সরকার গড়বে তারাই। কার দাবি ঠিক, শেষপর্যন্ত করা সরকার গঠন করবে, তা জানতে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

 

 

spot_img

Related articles

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...

ধনধান্যে ভরে, মা এসেছে ঘরে: মুখ্যমন্ত্রীর লেখা-সুরে গান এবার দুর্গাপুজোয়

বাংলা ও বাঙালির বড় উৎসব আর পুজোর গান— এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এখন দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা...

প্রধানমন্ত্রী বাংলা ছাড়তেই জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারি তৃণমূলকে অপদস্থ করার চক্রান্ত, তোপ কুণালের      

ইডির (ED) হাতে জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna Saha) গ্রেফতারি আসলে তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC) অপদস্থ করার চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী বাংলায়...