সাঁইবাড়ি দিবসে অধীর চৌধুরীরা সিপিএমের নিন্দা করবেন তো? প্রশ্ন কুণাল ঘোষের

বাংলার হিংসার অতীত কথা বললে, বার বার ঘুরে ফিরে সাঁইবাড়ির প্রসঙ্গ উঠে আসে। সময়ের সঙ্গে অতীতের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে সাঁইবাড়ির র*ক্ত। কিন্তু কলঙ্কিত অধ্যায়কে এখনও মুছে দিতে পারেনি সিপিএম। অর্ধ শতাব্দী পার করে তাই আজও বাংলার বুকে আলোচিত সাঁইবাড়ি হ*ত্যাকাণ্ড।

বালি সিমেন্টের পরত কবেই খসে পড়েছে। বট-অশ্বথ ডালপালা বিস্তার করেছে। জরাজীর্ণ দশায় বঙ্গ রাজনীতির এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে সাঁইবাড়ি (Sainbari)। ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ। বর্ধমানের (Burdwan) কংগ্রেসি সাঁইবাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের সামনেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয় দুই ছেলে মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁইকে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধা মায়ের। এমন হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও সেদিন লজ্জায় ফেলেছিল। শুধুমাত্র কংগ্রেস (Congress) করার অপরাধে যেদিন গলা কেটে তাঁদের রক্ত দিয়ে ভাত মেখে তাদের মায়ের মুখে ঠুসে দিয়েছিল সিপিএমের (CPIM) হার্মাদরা। এই ঘটনায় নাম জড়ায় একাধিক সিপিএম নেতার। হত্যা করা হয় ওই পরিবারের আরেক সদস্য নবকুমার সাঁইকেও হত্যা করা হয়।

অর্ধ শতাব্দী পার করে আজও বাংলার বুকে আলোচিত সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড। রাজনীতির আঙিনায় ফের নতুন করে কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। সত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সেই পটভূমি, সাঁইবাড়ি ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে রাজ্য রাজনীতিতে। একইভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে ১৯৯১ সালে হাওড়ার আমতার কান্দুয়া গ্রামে চার জননের হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার মতো বীভৎস ঘটনারও।

আসলে ব্যক্তিগত হোক সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক, কিছু অতীতকে ভোলা যায় না। কিছু অতীত নাড়িয়ে দিয়ে যেতে পারে গোটা সমাজকে, মানবজাতিকে। যদি সেই অতীত নারকীয় হয়, তাহলে নরপিশাচরা যুগে যুগে ঘৃণার পাত্র হয়ে থেকে যায় অভিশপ্ত স্মৃতিতে। তাই স্বাধীনতার পূর্বে জালিওয়ানাবাগ হোক কিংবা স্বাধীনতাউত্তর মরিচঝাঁপি, বারে বারে উঠে আসে আলোচনায়। বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ঠিক একইভাবে উঠে আসছে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড।

প্রসঙ্গ- বাংলার বুকে ভোট আসলেই বাম-কংগ্রেস জোট। ২০১৬-তে ব্যর্থ, ২০২১-এ চূড়ান্ত ব্যর্থ। মানুষ মেনে নেয়নি, মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই গতকালের আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সিপিএম ও কংগ্রেসের একজনও জনপ্রতিনিধি ছিল না। কারণ, বাংলার জনগণ চায়নি কোনওভাবে অশুভ আঁতাত করা বাম-কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি বিধাসভায় প্রতিনিধিত্ব করুক। আসলে বাংলার মানুষ এখনও ভোলেনি সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড। সদ্য সাগরদিঘি উপনির্বাচনে ফের জোট বেঁধেছিল বাম-কংগ্রেস। এখানে তাদের দোসর আবার বিজেপিও। রাজনীতির বাইরের কিছু ইস্যু ও সাময়িক বিভ্রান্তিতে অদ্ভুত এক সমীকরণে কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করেন। তারপরই অধীর চৌধুরীর (Adhir Chaudhury) সে-কী লম্ফঝম্ফ! রামধনু জোট করে উপনির্বাচনে একটি আসন জিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এমন এক শরীরী ভাষা, যেন পরশু মুখ্যমন্ত্রী পদে তিনি শপথ নেবেন। আসলে পচা শামুক পা কেটেছে শাসকের। সাময়িক কিছুটা অস্বস্তি হবেই। আন্টি সেপটিক (Anti Septic) লাগিয়ে ক্ষত সারাতে বেশিদিন লাগে না। কিন্তু পচা শামুক ভেবে বসে আছে, সে রাজপাট জয় করে ফেলেছে।

খুব স্বাভাবিকভাবেই অতীত মনে করিয়ে দিয়ে একসময় আরএসপি করা বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে খোঁচা মারতে ছাড়েনি শাসক দল তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন প্রতি বছরের মতো এ বছরও সাঁইবাড়ি দিবস পালন করবে তৃণমূল। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, অধীর চৌধুরী আর কংগ্রেস সেই নারকীয় ঘটনার নিন্দা করবে তো? কুণাল লিখছেন, “আগামী ১৭ মার্চ সাঁইবাড়ি দিবস। সিপিএমের হাতে কংগ্রেস পরিবারে গণহত্যা। মৃত ছেলের রক্তমাখা ভাত খাওয়ানো হল মাকে। তৃণমূল এই ভয়ঙ্কর দিনটিতে আবার সিপিএমের যাবতীয় সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন তুলে ধরে নিন্দা করবে। অধীর চৌধুরী আর কংগ্রেস নিন্দা করবে তো?”

১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ দিনটি বাংলার রাজনীতিতে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। কী ঘটেছিল সেদিন? কংগ্রেস সমর্থক প্রণয় ও মলয় সাঁইয়ের ভাগ্নের তখন এক মাস বয়স। তাঁর নামকরণ অনুষ্ঠানের সময়ই আচমকা হামলা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন। সেদিন সিপিএমের হার্মাদরা আচমকা গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলে প্রথমে বোমা মারে। পরে কাঁচগুলো খুচিয়ে ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেয়। দিনের আলোয় বাড়ি ঢুকে কংগ্রেস কর্মী মলয়বাবু ও প্রণয়বাবুকে নৃশংস ভাবে খুন করে সিপিএমের হার্মাদরা। সেই রক্ত ভাতে মাখিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয় তাঁদের বৃদ্ধা মা-কে। সেদিন কপাল জোরে বেঁচে গেলেও বছরখানেক পর আহ্লাদিপুরে ঘিরে ধরে খুন করা হয় বাড়ির বড় ছেলে নব সাঁইকে। ডেডবডিও আনতে দিচ্ছিল না পরিবারের লোককে। দেহ আনতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।

বাংলার হিংসার অতীতের কথা বললে, বার বার ঘুরে ফিরে সাঁইবাড়ির কথা উঠে আসে। সময়ের সঙ্গে অতীতের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে সাঁইবাড়ির রক্ত। কিন্তু ভেকধারী কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীদের হাত ধরলেও কলঙ্কিত অধ্যায়কে এখনও মুছে দিতে পারেনি সিপিএম। ১৭ মার্চ সাঁইবাড়ি। দিবস পালন করবে তৃণমূল, কংগ্রেসের ভূমিকা কী হয় সেটাই দেখার।

 

 

Previous article‘বাদাম’ শব্দই উচ্চারণ করতে পারছেন না ভুবন বাদ্যকর !
Next articleপরীক্ষার্থীর মায়ের কোল আলো করে ‘অঙ্ক’ !