খ্রিষ্ট পূর্বাব্দেও ব্যবহার হত কন্ডোম! ইতিহাস জানলে চমকে উঠবেন

একাধিক ঐতিহাসিক দাবি করেন, ১১ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ফান্সের গুহাচিত্রে প্রথম কন্ডোম ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় অর্থাৎ, তখনও জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন রোগের হাত থেকে বাঁচতে কন্ডোম ব্যবহারের প্রচলন ছিল।

নামটি কানে আসলেই রীতিমতো সঙ্কোচের মধ্যে পড়ে যান অনেকেই। অনেকে আবার প্রকাশ্যে এই শব্দোচ্চারণের জন্য কিঞ্চিত লজ্জা পান। এমনকি, এই সংক্রান্ত আলোচনাতেও অদ্ভুত এক অস্বস্তির মুখোমুখি হন কেউ কেউ। যদিও, বর্তমান সময়ে যুগ পরিবর্তনের পাশাপাশি বদলেছে মানুষের চিন্তাধারাও। বিশেষ জিনিসটি ব্যবহারের সুফল সম্বন্ধে জানাতে লাগাতার সরকারের তরফে লাগাতার সচেতনতামূলক প্রচার সর্বত্র করা হলেও এখনও যেন বিষয়টি নিয়ে মানুষের মনে অনেক ট্যাবু (Taboo) রয়েছে। হ্যাঁ, আজ আলোচনা করব কন্ডোম (Condom) নিয়েই বলা ভালো কন্ডোমের ইতিহাস (History) নিয়ে।

অনেকেরই মনে হতে পারে, কন্ডোমের আবিষ্কার হয়তো আধুনিক যুগেই ঘটেছে। যদিও, ইতিহাস ঘাটলে উঠে আসবে অনেক অজানা কথা। একাধিক ঐতিহাসিক দাবি করেন, ১১ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ফান্সের (France) গুহাচিত্রে প্রথম কন্ডোম ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় অর্থাৎ, তখনও জন্ম নিয়ন্ত্রণ (Birth Control) এবং যৌন রোগের হাত থেকে বাঁচতে কন্ডোম ব্যবহারের প্রচলন ছিল। এছাড়াও, ১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজা তুতেনখামেনের সমাধির আবিষ্কার করেন এক শ্রমিক। ওই সমাধিস্থল আবিষ্কারের পর তার আভ্যন্তরীন ঐশ্বর্য দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ। সেখানেই মমির সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছিল একটি ছোট চামড়ার থলি। পাশাপাশি, সেটিকে কোমরে বেঁধে নেওয়ার ফিতেও ছিল।

তবে দীর্ঘ সময় গবেষণার পর বোঝা যায় যে, জিনিসটি আসলে একটি আদি কন্ডোম অর্থাৎ, কয়েক হাজার বছর আগেও প্রাচীন মিশরীয়রাও কন্ডোমের ব্যবহার জানতেন। শুধু তাই নয়, কন্ডোমের মধ্যে পাওয়া ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা যায়, সেটি স্বয়ং তুতেনখামেনই ব্যবহার করেছিলেন। ওই কন্ডোমটি গরুর পাতলা চামড়া দিয়ে তৈরি হয়েছিল অর্থাৎ সেটি গর্ভনিরোধক সরঞ্জাম হিসাবেই মমির সঙ্গে সমাধিতে দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, প্রাচীনকাল থেকেই মিশরবাসী বিভিন্ন রঙের কন্ডোমের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। মূলত, তৎকালীন যুগে বিভিন্ন সামাজিক স্তরের লোকজনের জন্য নির্দিষ্ট বর্ণের কন্ডোমের প্রচলন ছিল। পাশাপাশি, পুরোনো কিছু নথি ও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, প্রাচীনকালে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের রাজা মিনোস এক গভীর সমস্যায় পড়েছিলেন। ওই রাজার সঙ্গে সঙ্গমের পরেই মারা যাচ্ছিলেন রানিরা। সেই সময় রাজার বুদ্ধিমতী রানি পাসিফি একটি দুর্দান্ত উপায় বার করেন। তিনি শুয়োরের পাতলা চামড়া নিজের যৌনাঙ্গে লাগিয়ে রাজার সঙ্গে মিলিত হতেন। যার ফলে প্রাণে বাঁচার পাশাপাশি ৮ টি সন্তানের জন্মও দেন তিনি।

ফলে ইতিহাস একটু খতিয়ে দেখলে এমন অনেক অজানা বিষয় আপনার সামনে আসবে, মা দেখে আপনি চিন্তা করতে বাধ্য। এছাড়া, প্রাচীন মিশরীয়রা কুমিরের মলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঔষধি মিশিয়ে তৈরি করতেন গর্ভনিরোধক পদার্থ। তবে, প্রাচীন ভারতীয়রা অবশ্য কুমিরের বদলে হাতির মল দিয়ে গর্ভ নিরোধনের চেষ্টা করতেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, রোমানরা (Roman) যৌন রোগ সিফিলিসের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে প্রাণীর চামড়ার ব্যবহার শুরু করেন। অন্যদিকে, নিউগিনির প্রাচীন বাসিন্দারা আবার গর্ভনিরোধক (Contraceptives) হিসেবে কিছু নির্বাচিত উদ্ভিদের নির্যাস স্ত্রীদেহে ব্যবহার করতেন।

এরপর ধীরে ধীরে সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে বহুল ভাবে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে কন্ডোমের প্রচলন শুরু হয়। পাশাপাশি, ১৮৫৫ সালে প্রথম রাবার কন্ডোম তৈরি হয়। যদিও, সেই সময়ে কন্ডোমের দাম অনেক বেশি হওয়ায় শুধুমাত্র সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তা ব্যবহার করতেন। এদিকে, এটি তৈরির পর রাবার কন্ডোমের ত্রুটি রয়েছে কি না জানতে কন্ডোমের মধ্যে গ্যাসোলিন এবং বেঞ্জিন ভরা হত। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর ছিল। এমতাবস্থায়, ১৯২০ সালে ল্যাটেক্স আবিষ্কারের ফলে অনেকটাই পরিবর্তন আসে কন্ডোমে।

 

 

Previous articleগোয়ায় হোটেল, ত্রিপুরায় চা বাগানের তত্ত্ব উড়িয়ে ‘ঠিকানা’ চাইলেন কুন্তল
Next articleমাস্টারমাইন্ড কেজরিওয়াল, শীঘ্রই গ্রেফতার হবেন: বিস্ফোরক বিজেপি