Tuesday, May 13, 2025
উৎপল সিনহা

এসো এসো হে তৃষ্ণার জল,
কলকল্ ছলছল্ —
ভেদ করো কঠিনের
ক্রুর বক্ষতল কলকল্ ছলছল্ ।।
এসো এসো উৎসস্রোতে
গূঢ় অন্ধকার হতে
এসো হে নির্মল কলকল্ ছলছল্ ।।

বিশ্বের তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল হলেও ভবিষ্যতে ‘ পেয় ‘ জলের অভাব দেখা দিতে পারে যে কোনো সময় । জলই জীবন । অথচ জলের অভাবে গলা শুকোবে মানবসভ্যতার , এ বড়ো ভয়ঙ্কর আশঙ্কা । পরিচ্ছন্ন জল ও জলসম্পদ সংরক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার ভাবনা থেকেই ‘ বিশ্ব জল দিবস ‘ পালনের সিদ্ধান্ত । ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ সভা ২২ মার্চ দিনটিকে বিশ্ব জল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে । ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় এবং তারপর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে । জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলি এই দিনটিকে নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমার মধ্যে জাতিসংঘের জলসম্পদ সংক্রান্ত সুপারিশ ও উন্নয়ন প্রস্তাবগুলির প্রতি মনোনিবেশের দিন হিসেবে উৎসর্গ করে । এর পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিচ্ছন্ন জল ও জলসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই দিনে বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে ।

একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে মানুষ প্রায় সবসময়ই খাবার জলের অপচয় করে চলে । বাসন মাজা , কাপড় কাচা , স্নান ইত্যাদি সব কাজেই অপচয় হয় খাবার জলের । মানুষের সেটা মনে থাকে না । মনে রাখতে হবে শুধু ভারত নয় , সারা পৃথিবীতেই ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে তো নামছেই । বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে ভারত । দেখা যাচ্ছে ভারতের ক্ষেত্রে ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা কমেছে ভয়াবহভাবে , প্রতি বছরে ১০ থেকে ২৫ মিমি । গড়ে কমেছে ৫৪ শতাংশ । চাষ আবাদের ক্ষেত্রেও ভারতে যে জল ব্যবহৃত হয় তার ৭০ শতাংশের উৎস হলো ভূগর্ভস্থ জল । তথ্য বলছে , যদি এইভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা কমতে থাকে তাহলে ভারতের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের জন্য পানীয় জলের গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে । ইতিমধ্যেই পাতকুয়ো , কুয়ো শুকোতে শুরু করেছে । মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করার বিপদ এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে । পুকুর , খাল , বিল ও নদীর অবস্থাও খারাপ । গুণগত মানের দিক থেকেও দেখা গেছে , ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা মোটেও ভালো নয় । পানীয় জলের সঙ্কট ইতিমধ্যেই গ্রীষ্মের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । কান্ডজ্ঞানহীনের মতো ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তোলা আটকাতেই হবে । প্রচুর গাছপালা লাগাতে হবে । ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ , যেগুলি ভীষণ পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল শুষে নেয় , এরকম গাছ লাগানো চলবে না । জমিতে কেমিক্যাল ব্যবহার করাও আটকাতে হবে । ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৩ শতাংশ জল পানযোগ্য অর্থাৎ পেয় । বাকি ৯৭ শতাংশ সমুদ্রে । মিঠা জলের মধ্যে ৬৯ শতাংশ হিমবাহ অবস্থায় , ৩০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ এবং ১ শতাংশের কম হ্রদ , নদী এবং জলাভূমিতে অবস্থিত ।

দূষিত জল ও দুর্বল স্যানিটেশন à§« বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি । সঠিক জল , স্যানিটেশন এবং হাইজিন ( ওয়াশ ) ছাড়া শিশুদের রোগের ঝুঁকি থেকেই যায় । পরিশুদ্ধ জল ছাড়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা অসম্ভব । বিশুদ্ধ জল বিশ্বের প্রথম ও প্রধান ওষুধ , এই কথাটি সর্বৈব সত্য । আমাদের জীবনের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান জল । জল প্রকৃত অর্থেই অত্যাবশ্যক সম্পদ । এই সম্পদকে তাই রক্ষা করতেই হবে । প্রতি বছর IGRAC দ্বারা একটি করে ‘ থিম ‘ জল সংক্রান্ত বিষয়বস্তু গ্রহণ করা হয় ।

জাতিসংঘের পরিকল্পনা অনুসারে , জল দিবসের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পরিশুদ্ধ পানীয় জল ও উপযুক্ত স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করা ।‌ বিশ্ব উষ্ণায়ন , জলবায়ুর পরিবর্তন , পানীয় জলের অপব্যয় ইত্যাদি নানা কারণে ক্রমশ কমছে বিশুদ্ধ জলের পরিমাণ তথা মাত্রা । জল রক্ষা করতে নেওয়া হচ্ছে নানান উদ্যোগ । তীব্র জল সঙ্কটে যাতে মানব সভ্যতাকে পড়তে না হয় , সেই ভাবনা থেকেই বিশ্ব জল দিবস উদযাপন । এই দিনের মূল উপজীব্য valuing water , জলের মূল্যায়ন । আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয় : জল ধরো জল ভরো , জল বাঁচাও প্রাণ বাঁচাও ।
কবি বিষ্ণু দে লিখেছেন :
… জল দাও আমার শিকড়ে ।
বিনয় মজুমদার লিখেছেন :
ডুব দিয়ে দেখে আসি
নধর জলের নিচে
এখনো রয়েছে কিনা
কোনো অবশেষ ।

মনে রাখতে হবে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে ২.২ বিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ জলের সুবিধা ছাড়াই জীবন কাটান । এও মনে রাখতে হবে যে বাস্তুতন্ত্রের প্রতি অবহেলা করা প্রায় অপরাধের সামিল । জল মূল্যবান সম্পদ , বিষয়টি শুধুমাত্র জলের মূল্য নিয়ে নয় , তার চেয়ে অনেক বেশি । বিষয়টি পরিবার , খাদ্য , শিক্ষা , স্বাস্থ্য , সংস্কৃতি , অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্রে জলের অবদানের সঙ্গে সম্পর্কিত । তাই জলসম্পদ সংরক্ষণ সম্পর্কিত প্রচারাভিযানের ভীষণ গুরুত্ব রয়েছে এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে ।

আমাদের দেশে সমস্ত জল ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কেন্দ্রিয় জল কমিশন । রাষ্ট্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা ব্যবহার ক’রে ভারতের জলসম্পদের সমন্বয় , উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার কাজ করে তারা । ২০২৩ সালের বিশ্ব জল দিবসের থিম হলো , ‘ পরিবর্তন তরান্বিত করতে আমাদের আরও পদক্ষেপের প্রয়োজন । ‘

জল ও স্যানিটেশন সঙ্কটের সমাধানে পরিবর্তনকে তরান্বিত করার তাৎপর্য সকলকে বুঝতে হবে । তরল স্বাদু পানীয় জলকে যে কোনো মূল্যে সংরক্ষণ করতে হবে মানবসভ্যতাকে দীর্ঘায়িত করার আশু লক্ষ্যে এবং একই সঙ্গে পানীয় জলের অপব্যয় বন্ধ করতেই হবে ।

আরও পড়ুন- বাড়ছে ডিগ্ৰি কোর্সের সময়সীমা! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নয়া নির্দেশ রাজ্যের

Related articles

বিরাটের অবসরে আবেগতাড়িত অনুস্কা

সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে টেস্ট ফর্ম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন বিরাট কোহলি(Virat Kohli)। কিং কোহলির এই হঠাত্ সিদ্ধান্তে যেমন...

১৭ মে শুরু আইপিএল, ছটি ভেন্যুতে ১৭ ম্যাচ

জল্পনাটা আগে থেকেই চলছিল। সোমবার রাতেই ঘোষণা হয়ে গেল আইপিএল(IPL) শুরু হওয়ার দিন। আগামী ১৭ মে থেকে শুরু...

বাড়িতে সিসিটিভি বসাতে লাগবে সকলের সম্মতি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পক্ষে রায় সুপ্রিম কোর্টের 

যৌথভাবে বসবাসকারী বাড়িতে অন্য বাসিন্দাদের সম্মতি ছাড়া সিসিটিভি বসানো যাবে না—এই গুরুত্বপূর্ণ রায় বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত।...

তাপপ্রবাহের পর ঝড়বৃষ্টি: ভিজল রাজ্যের একাধিক জেলা

বৃষ্টির স্বস্তি একদিকে, অন্যদিকে তাপপ্রবাহের তাণ্ডব—দুয়ের মধ্যে দোদুল্যমান রাজ্যের আবহাওয়া। আবহাওয়া দফতরের স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, সোমবার বর্ধমান হয়ে...
Exit mobile version