‘এপ্রিলে সাবধান’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

অমলবাবু বাড়ি আছেন ? মোবাইলে এই প্রশ্ন অমলবাবুর দীর্ঘদিনের পরিচিত শ্যামলবাবুর । শ্যামলবাবু জানালেন ভীষণ জরুরি প্রয়োজনে তিনি সস্ত্রীক আসছেন অমলবাবুর বাড়িতে । বৌদি যেন চা বানিয়ে রাখেন । চা তৈরি । এরপর অপেক্ষা । তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সস্ত্রীক শ্যামলবাবুর দেখা আর পেলেন না অমলবাবু । কিছুটা অবাক হয়েই গুনগুন করতে লাগলেন , তোমার দেখা নাই রে তোমার দেখা নাই । কিন্তু , ব্যাপারটা কী হলো ? এমন তো হওয়ার কথা নয় । অগত্যা শ্যামলবাবুকে রিং করলেন অমলবাবু , কিন্তু বিধি বাম । ফোন বন্ধ ।

বিমল , সত্য , সাধন , উত্তম , গৌতম ও অন্যান্য বন্ধুদের দল সকাল সাতটায় হাঁক পেড়ে ঘুম ভাঙালো মিন্টুর । ঘুম চোখে ধড়মড় করে উঠে এসে মিন্টু জানলো যে , আজ রবিবার পাড়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্টে একটা বিশেষ দলের হয়ে খেলতে হবে তাকে । সকাল দশটার আগেই পৌঁছাতে হবে মাঠে । সেইমতো সকাল দশটার আগেই মাঠে গিয়ে মিন্টু দেখলো ব্যাট , বল , উইকেট তো দূরের কথা , মাঠে কেউ নেই । জনমানবশূন্য ধুধু প্রান্তর । ভীষণ অবাক হয়ে মিন্টু ভাবতে লাগলো , কী ব্যাপার ? এমন তো হওয়ার কথা নয় ।

জয়তী ফোন করে জয়ন্তকে জানিয়েছে আগামীকাল মেট্রোয় ম্যাটিনি শো দেখতে চায় সে । জয়ন্ত যেন দুটো ব্যালকনির টিকিট কেটে রাখে । নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট কেটে প্রায় ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পর একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির পথ ধরলো জয়ন্ত । জয়তী এলো না । সিনেমা হলে এলো না জয়তী , মনে তার নিত্য যাওয়া-আসা । কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয় । হাঁটতে হাঁটতে হতাশ জয়ন্ত মগজের জট খোলার জন্য একটা সিগারেট ধরালো ।

শিলং থেকে শিকাগো , কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া সর্বত্রই উক্ত তিনটি ঘটনার মতো হাজার হাজার ঘটনা ঘটতে থাকে বছরে মাত্র একটি দিন । বড়ো মজার সেই দিনটি । পয়লা এপ্রিল । এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি । যে দিনটিকে ভালোবেসে ’ এপ্রিল ফুল দিবস ‘ বলা হয় । বোকা বানানোর দিন ।

কিন্তু এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটিকে বোকা বানানোর দিন হিসেবে উদযাপন করার পিছনে লম্বা ইতিহাস আছে । এক এক দেশে এক একরকম সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ রয়েছে ইতিহাসের এই গল্পগুলোর ।

১৫৬৪ সালে ফ্রান্স দেশের ক্যালেন্ডার বদল করে । এর আগে বছর শুরু হতো মার্চের শেষ থেকে । কিন্তু ওই বছর সেটি বদল ক’রে নতুন বছর শুরু করা হয় ১ জানুয়ারি থেকে । এই পরিবর্তন অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি । তাঁরা ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বছরের সূচনা পালন করতে থাকেন । যাঁরা পরিবর্তন মেনে নেন তাঁদের বোকাও বানাতে থাকেন । তাঁদের পিঠে কাগজের তৈরি মাছ লাগিয়ে দেওয়া হয় । নতুন ক্যালেন্ডারের পক্ষে যাঁরা , তাঁদের ডাকা হতো এপ্রিল ফিস নামে । সেই থেকেই এপ্রিল ফুলের গল্প শুরু হয় । এটিই এপ্রিল ফুল নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত গল্প ।

রোমান তত্ত্বও খুব আকর্ষণীয় । রোমান দেবতা প্লুটো যখন তাঁর স্ত্রী পারসিফনকে অপহরণ করে আনেন , তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেন । কিন্তু , পান না । তখন মেয়েটি মাটির নীচে , অথচ তার মা বোকার মত মাটির উপরে খুঁজতে থাকেন । সেই বোকামির কথা ভেবেই নাকি রোমানরা এই দিনে বোকামি দিবস পালন করতো ।

বৃটিশ লোককথা অনুযায়ী নটিংহ্যামশায়ারের গথাম শহরটি নাকি ছিল বোকাদের শহর । দেশের রাজা রাষ্ট্রের সম্পত্তির হিসেব নিতে সেই শহরে ঢোকার কথা ঘোষণা করতেই গথামবাসীরা রাজাকে আটকাতে নানা ধরনের বোকামি শুরু করেন । ফলে রাজা আর গথাম শহরে আসেন না । সেই থেকেই নাকি বোকা দিবসের সূচনা ।

১৯৫০ সালের ১ এপ্রিল জার্মানির অগসবারগ শহরে একটি আলোচনা সভা বসার কথা ছিল । অনেকেই আলোচনার ফলের কথা ভেবে বিপুল টাকার বাজি ধরেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সভা বাতিল হয় । বহু মানুষের টাকা জলে যায় । এই বোকামি থেকেই সেখানে এপ্রিল ফুলের শুরু ।

১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসের ডেন ব্রিয়েল শহরটি স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় । এই দিন বিদ্রোহীরা স্পেনের শাসকদের বোকা বানিয়ে ছাড়ে । তারপর থেকেই নাকি সেখানে এপ্রিল ফুলের সূচনা ।
ইতিহাস গবেষকদের কেউ কেউ বলেন , এপ্রিল ফুল ডে আবার হিলারা নামক উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । এই ল্যাটিন শব্দের অর্থ আনন্দদায়ক ।

আবার পারস্যের উৎসব সিজদাহি বেদার ও জিউয়িসদের পুর্ণিমের সঙ্গেও এপ্রিল ফুলের সাদৃশ্য খুঁজে পান অনেকেই । এ সমস্ত উৎসব আমাদের ভারতবর্ষসহ সব জায়গাতেই বসন্ত আগমনের সময় পালিত হয় এবং এগুলোর সঙ্গে আনন্দ ও ছেলেমানুষী জড়িয়ে আছে ।

এছাড়াও রয়েছে অন্য গল্প । জিওফ্রে চসার তাঁর চতুর্দশ শতাব্দীর ‘ দ্য ক্যান্টেরবারি টেলস্ ‘ – এ ৩২ মার্চ বা ১ এপ্রিলের উল্লেখ করেছেন । এই সংগ্রহের একটি গল্প ‘ নান্স প্রিস্টস টেল ‘ – এ লেখা আছে যে , রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ও বোহেমিয়ার রানি অ্যানির এনগেজমেন্টের তারিখ ৩২ মার্চ ঘোষিত হয় । জনগণ সেই ঘোষণাটিকে সত্য মেনে বিশ্বাস করে নেন । তখন থেকে ৩২ মার্চ অর্থাৎ ১ এপ্রিল , এপ্রিল ফুল ডে হিসেবে পালিত হতে শুরু করে ।

হাসিঠাট্টা , রঙ্গরসিকতা ও নানান মজা-মস্করায় পরিপূর্ণ এই দিনটি কিন্তু আজকের এই ভীষণ উদ্বেগে ভরা জীবনে অবশ্য পালনীয় । কেননা এপ্রিল ফুল দিনটিতে সেই বিশুদ্ধ ও নির্মল অক্সিজেন , যা একটা দিনের জন্য হলেও গোটা মানবসভ্যতাকে হাঁফ ছেড়ে সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়ে বাঁচার আশ্বাস দেয় ।

আরও পড়ুন- তৃণমূলের আইটি সেল-এর জরুরি ঘোষণা

Previous articleবিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় সোনা ভারতের, ৮১ কেজি বিভাগে সোনা জয় সুইটির, শুভেচ্ছা মমতার
Next articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ