নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচার করতে পারবেন না অভিজিৎ গাঙ্গুলি! নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

আভাস আগেই মিলেছিল। এবার বাস্তবেও সেটাই হল। কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আর বিচারক থাকতে পারবেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই সংক্রান্ত সমস্ত মামলা তাঁর এজলাস থেকে অন্য বেঞ্চে সরানোর নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। আজ, শুক্রবার শুনানির পর এমনই নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং ও বিচারপতি পি নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চ।

একটি স্পর্শকাতর ও হাইভোল্টেজ বিচারাধীন মামলা নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে একের পর এক বিতর্কিত ও চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করার জেরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে এই মামলার বিচার ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবর্তে এখন থেকে এই মামলাগুলিতে অন্য বিচারপতি নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে।

গত প্রায় এক-দেড় বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা সংক্রান্ত বিচারপ্রক্রিয়া চলছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তাঁর একের পর এক রায় ছিল চমকে দেওয়ার মতো। তারই মধ্যে গ্রেফতার হতে হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ক সহ শাসক দলের একাধিক নেতা-বিধায়কদের। বস্তুত অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া একাধিক নির্দেশকে রাজনীতির ময়দানে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল বিরোধীরা। এবার সেই বিচারপতিকেই সরে যেতে হল নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা থেকে।

কিন্তু গত, সেপ্টেম্বর মাসে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিরাট সাক্ষাৎকার দিয়ে বসেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিযোগ, ওই সাক্ষাৎকারে একাধিক বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি। সেখান থেকেই প্রশ্ন ওঠে, যে মামলা তাঁর বেঞ্চে বিচারাধীন, সেই মামলা নিয়ে কীভাবে একজন দায়িত্বশীল বিচারপতি টেলিভিশন চ্যানেলে গড়গড় করে মন্তব্য করে যেতে পারেন?

একটি মামলায় এ বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিষেক মনুসিংভির মতো দেশের তাবড় ও সফল আইনজীবীরা। বিষয়টি নজরে আসতেই কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। শুক্রবার হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি হলফনামা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জানান। শীর্ষ আদালত সেই সাক্ষাৎকার খতিয়ে দেখার পর জানিয়ে দিয়েছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আর নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলা শুনতে পারবেন না।

শুধু তাই নয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার কাণ্ডে অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই বা ইডির তদন্ত সংক্রান্ত কোনও মামলা হলে, সেগুলিও শুনতে পারবেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে এই মামলাগুলির জন্য অবিলম্বে নতুন বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শুধু এই মামলাটি নয়, আরও বেশকিছু বিষয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল মুকুল রোহতগী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শীর্ষ আদালতে একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন।

আরও পড়ুন:নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিচার করতে পারবেন না অভিজিৎ গাঙ্গুলি! নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের