এক্সিট রুট খুঁজছেন পাওয়ার?

অর্পিতা চৌধুরী

এবছরই পরপর দুটি ঘটনা। শারদ পাওয়ারের ভূমিকায় সন্দেহের মেঘ তাতে আরও ঘন হয়েছে। মঙ্গলবার এনসিপির শীর্ষপদ থেকে সরতে চেয়ে বার্তা দেন পাওয়ার। কর্মীদের অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গে তা বদলাতে নিমরাজিও হয়ে যান। কিন্তু কে বলতে পারে তাঁর এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অঙ্ক বদলানোর পরিকল্পিত চাল নয়?

প্রথমত, যে আদানি ইস্যুতে সংসদে কার্যত এককাট্টা অধিকাংশ বিরোধী দল, তা নিয়ে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো অবস্থান শারদ পাওয়ারের। মোদিঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি যে তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ এবং পারিবারিক সুহৃদ, তা অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে জানিয়েছেন, কংগ্রেস ও আরও কিছু বিরোধী দল আদানিদের বিরুদ্ধে যে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবি করছে তা সমর্থন করেন না। নেহাত বিষয়টা নিয়ে জলঘোলা হতে পারে তাই সবাই চাইলে জেপিসি হোক। এই অবস্থানের দ্বিমুখী অর্থ হতে পারে। ১) বিজেপি এবং খোদ আদানিদের বার্তা দেওয়া হল, বিরোধী শিবিরে থাকলেও আমি কিন্তু ওদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছি না। দূরত্ব রাখছি। ২) বিরোধী শিবিরকেও বোঝানো গেল, আদানির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উর্ধে উঠে আমি বাকিদের সম্মিলিত ভাবনার শরিক হওয়ার উদারতা দেখাতে পারি। এমন নয় যে জেপিসির দাবিকে সব বিজেপি বিরোধী দল সমর্থন করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসই তো জেপিসির বিরুদ্ধে। তারা চায় সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত। কিন্তু ভিন্নমত হলেও আদানি ইস্যুতে বিজেপি বিরোধিতার অবস্থান নিয়ে অন্য বিরোধীদের আচরণে এরকম সংশয় তৈরি হয়নি। যা হয়েছে বিরোধী জোটের ঘোষিত অংশ এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ারকে নিয়ে। আদানি বিতর্কের মধ্যগগনে তিনি মুম্বইতে গৌতম আদানির সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এতে যে অন্যরকম সন্দেহ হবে তা কি আর জানতেন না মারাঠা স্ট্রংম্যান? উল্টে তাঁর পদক্ষেপগুলি দেখে মনে হয়েছে, এসবই সচেতনভাবে জল্পনা জিইয়ে রেখে ভবিষ্যতে অন্য রাস্তায় হাঁটার পথ তৈরির চেষ্টা।

দ্বিতীয় ঘটনা, প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি বিতর্কে পাওয়ারের ভূমিকা। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আপ শিবির যখন নরেন্দ্র মোদির কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ডিগ্রির সত্যতা যাচাইয়ের দাবি তুলেছে, তখন বাকি বিরোধীরা কেউই এনিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি জানায়নি। এখানেও ব্যতিক্রম শারদ পাওয়ার। তিনি খোলাখুলি বলেছেন, মোদির ডিগ্রি-বিতর্ক অবান্তর। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে অসম্মান করা ঠিক নয়। এনসিপি প্রধানের এই বার্তায় নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খুশি হয়েছে বিজেপি।

পরপর এই দুই ঘটনার পর নিজের বই প্রকাশ মঞ্চটিকে কৌশলে ব্যবহার করে বোমা ফাটালেন পাওয়ার। তাঁর যুক্তি, ১৯৬০ সাল থেকে রাজনীতি করছেন। কয়েক দশক কেটে গিয়েছে। কোনও না কোনওসময় তো দায়িত্ব ছাড়তেই হয়। তাই সরে যেতে চান এনসিপির শীর্ষপদ থেকে। এই ঘোষণার পর প্রথমেই একটি খটকা জাগে। তা হল, ২০২২ সালের জুনে ১৭ টি বিরোধী দলের সম্মিলিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে যে ব্যক্তি বলেন, এখনই সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেব না, তিনি কয়েক মাস পর হঠাৎ নিজের দলের দায়িত্ব ছাড়তে এত উৎসাহী কেন? তাঁর দলের অন্যতম নেতা প্রফুল প্যাটেল জানিয়েছেন, দলের শীর্ষপদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে ঘুণাক্ষরেও তাঁরা কিছু জানতেন না!

তাহলে কি বিরোধী জোটের মুখ এবং বিজেপি বিরোধী মহা বিকাশ আগাড়ির হোতার ভূমিকা থেকে সরতে চাইছেন শারদ পাওয়ার? তিনি নিজে দলের শীর্ষপদে থাকাকালীন বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হতে পারে, বিশ্বাসঘাতকের তকমা জোটাও অসম্ভব নয়। তাই কি সচেতনভাবে নিজেকে আড়ালে রেখে বিজেপিপন্থী ভাইপো অজিতকে এগিয়ে দিতে চান? লোকসভা ভোটের আগে সরাসরি বিজেপি জোটে ভিড়লে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আবার বিরোধী শিবিরের সঙ্গে বেশি গা ঘেঁষাঘেষি করলে পরিবারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সক্রিয়তা বাড়াবে সিবিআই-ইডি। সেই চাপ নিতে রাজি নন তাঁর দলের প্রথম সারির নেতারাই। অন্যদিকে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে থাকা ভাইপো ফের বিদ্রোহ করলে দল ভেঙে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তাই কি পদ ছাড়ার নাটক করে জল মেপে নতুন ইনিংস শুরুর প্রস্তুতি? আগাম চিত্রনাট্য খাড়া করে কি বিরোধী শিবির থেকে এক্সিট রুট খুঁজছেন মহারাষ্ট্রের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী? সত্যিই যদি তা হয় তখন বিজেপির সঙ্গে প্রকাশ্যে গাঁটছড়া বাঁধতে শারদ পাওয়ারের অসুবিধা হবে না।

 

Previous articleআইপিএলের বাইশ গজে কোহলি-গম্ভীর বিবাদ এবার ইস্যু হল কর্ণাটক ভোটেও
Next articleবিধানসভায় বলেছিল শুভেন্দু! রায়গঞ্জের বিধায়কের বাড়িতে হানা দিল আয়কর