‘ধমকে-চমকে আমাকে আটকানো যাবে না’, এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিষেক

সোমনাথ বিশ্বাস

ঘড়ির কাঁটা সকাল ১১ টা ছোঁয়ার দু মিনিট আগেই নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে হাজির হন অভিষেক। তারপর ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বুক ফুলিয়ে নিজাম প্যালেস থেকে বেরোলেন অভিষেক। সাফ জানালেন আপনারা যদি জিজ্ঞাসা করেন দশ ঘণ্টার ফলাফল কী? তাহলে বলব, শূন্য। আস্ত অশ্বডিম্ব। আমি তো আগেই বলেছি, জিজ্ঞাসাবাদের দরকার নেই। ফাঁসির মঞ্চ তৈরি রাখুন।

এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিষেক এদিন বলেন, এভাবে ধমকে-চমকে-ভয় দেখিয়ে আমাকে আটকানো যাবে না। আমি দিল্লির পোষা কুকুর হয়ে বাঁচতে চাই না। বাঁচতে চাই রয়্যাল বেঙ্গল হয়ে। বলেছেন, ফের সোমবার সকালে দশ গুণ শক্তি নিয়ে জনসংযোগ যাত্রায় বের হবো। রাতে বাড়ি ফেরার আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক।

বিজেপিকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, নবজোয়ারে মানুষের ঢল দেখে বদহজম হয়েছে বিজেপির। তাই ৬০ দিনের টানা কর্মাসূচি আটকাতে মরিয়া। এজেন্সি ডেকেছে। তখন আমি বাঁকুড়ার ওন্দায়। বিকেল। ইমেলে নোটিশ পেয়েছি। বাঁকুড়া থেকে কলকাতা ফিরতে কম করে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। আমাকে ২০ ঘণ্টারও কম সময়ে এজেন্সির মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে। ওরা প্রথমে দিল্লিতে ডাকছিল। আদালত বলল কলকাতায় ডাকতে হবে। ডাকল ২০ ঘণ্টারও কম সময় দিয়ে। কেন ৪৮ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে না? আমার ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। আসলে রাজনৈতিক চক্রান্ত। ভাবছে এভাবে ধমকে-চমকে আমাকে বসে আনবে। মুর্খের স্বর্গে বাস করছে। আমি তারপরেও সময়ে এসেছি। সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। তারপরেও বলব, যারা ডেকেছে তাদের সময় নষ্ট। আমারও সময় নষ্ট। পারলে গ্রেফতার করুন। এনআইএ, ইনকামট্যাক্স, ইডি-সিবিআই, কতো কিনা পিছনে লাগানো হয়েছে। কেন পারছেন না!

আরও পড়ুন- সওয়া ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে নিট ফল শূন্য: অভিষেক

কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তিনি বলেন, সিবিআই-ইডির হাতে কত মামলা রয়েছে। সারদা, নারদা, এসএসসি। একটারও ইতিবাচক কিছু হয়েছে? ১০ বছর ধরে সারদা মামলা চলছে। নারদা চলছে ৭ বছর ধরে। নারদার মূল অভিযুক্ত বিজেপির কোলে বসে দোল খাচ্ছে। নোবেল চুরি গিয়েছে ১৫ বছর। খোঁজ পেয়েছেন? কিংবা জ্ঞানেশ্বরী মামলা? এসব কী তদন্ত হচ্ছে? যারা তদন্ত করছেন আর যাদের কথা তদন্ত হচ্ছে, দু’পক্ষেরই ইস্তফা দেওয়া উচিত। তবে এজেন্সিকে আমি দোষ দিই না। ওরা ওদের কাজ করছে। কেন্দ্রের সরকার রাজনৈতিকভাবে ওদের পরিচালনা করছে। ফলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিঠির ভিত্তিতে যেভাবে আমাকে ডাকা হয়েছে, এর থেকেও আরও বিস্ফোরক চিঠি যাদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে, তাদের ডাকা না হলে কী করে এজেন্সিকে নিরপেক্ষ বলব?

শুভেন্দুকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আমাকে কিছু নাম বলে চিনি কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ৯০ শতাংশ নামই পূর্ব মেদিনীপুর আর মুর্শিদাবাদের। প্রশ্ন হল দলের তরফে কে দায়িত্বে ছিল এই দুই জেলার? সবাই জানে বাংলার গদ্দার। তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না? আসলে দিল্লির পোষা কুকুর হয়ে, গলায় বকলেশ বেঁধে যে মিউ মিউ করছে তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে! আমি ওদের মতো হয়ে বাঁচতে পারব না। বাঁচলে রয়্যাল বেঙ্গলের মতো বাঁচব।

বিজেপিকে একহাত নিয়ে অভিষেক বলেন, কুন্তল ঘোষের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ডাকা হয়েছে। এবার আমার প্রশ্ন, যদি ডাকার ক্ষেত্রে চিঠিটাই মূল ভিত্তি হয় তাহলে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, শুভেন্দু অধিকারী, সুজন চক্রবর্তী বা অধীর চৌধুরীকে কেন ডাকা হবে না? সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে পরিস্কার ওদের নাম রয়েছে। দিলীপ ঘোষের বাড়ির দলিল পাওয়া গিয়েছে অভিযুক্ত প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে। বিজেপির লোকজনকে কেন ডাকা হচ্ছে না? ডাকা হবে কেন? বিজেপি মানেই তো ওয়াশিং মেশিন। সাত খুন মাফ। সবকটা চোর বিজেপিতে গিয়ে ঢুকেছে। কুলটির বিজেপি নেতা আর এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ করছে। কোথায় এজেন্সি? বাকিরা তো সব মেরুদণ্ড বিক্রি করেছে। আমরা করিনি তাই বারবার ডাকা হচ্ছে। ১৫০ শতাংশ সম্পত্তিবৃদ্ধি হওয়ায় অনুব্রত মণ্ডলের মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ছেলের ১৬ হাজার গুণ সম্পত্তি বৃদ্ধির পরেও ফুর্তিতে ঘুরে বেড়ায়। বিচারব্যবস্থার একাংশের ভূমিকা সকলে দেখছেন। কনভয়ের ধাক্কায় মানুষ মারা গেলেও অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা যাবে না। কতো দিন এসব চলবে? চলবে না। ২০২১-এ মানুষ দিয়েছেন, পরেও জবাব দেবেন।

আরও পড়ুন- রয়্যাল বেঙ্গলের মতো মরা ভালো: সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর বেরিয়ে হুঙ্কার অভিষেকের

Previous articleরয়্যাল বেঙ্গলের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচব: সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর বেরিয়ে হুঙ্কার অভিষেকের
Next articleআশা শেষ কলকাতার, লখনৌর কাছে হারল ১ রানে