‘নাট্যশালা’র ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা ‘জোড়া-সাঁকো’, বহু ফিল্মের পর ফের মঞ্চে চিকিৎসক শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

অংশুমান চক্রবর্তী: বৃহস্পতিবার কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হল ‘নাট্যশালা’র নতুন নাটক ‘জোড়া-সাঁকো’। অরূপরতন মৈত্রর রচনা। পরিচালনা করেছেন রানা বসু। নাটকটি নির্ভেজাল পিরিয়ড ড্রামা। ধরা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর। যখন বাংলায় ঘটছে নবজাগরণ। কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা। সমকালে তিনি ছিলেন যথেষ্ট প্রভাবশালী। রাজা রামমোহন রায়ের অনুরাগী, অনুসারী। সাফল্যের পাশাপাশি দেখেছেন ব্যর্থতাও। প্রধান কারণ বেহিসেবি, আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন। তাঁর স্ত্রী দিগম্বরী দেবী নিজেকে তুলে ধরেছিলেন ঠাকুর পরিবারের আদর্শ বধূ হিসেবে। একটা সময় জানতে পারেন চারিত্রিক স্খলন ঘটেছে দ্বারকানাথের। তখন তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় সেটা সম্ভব ছিল না। তবে নিজেকে মানসিকভাবে স্বামীর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছিল দ্বারকানাথের। ‘জোড়াসাঁকো’র দুটি মানুষের সম্পর্কের ‘জোড়া-সাঁকো’ এইভাবেই চিরতরে ভেঙে যায়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর চরম একাকীত্ব নেমে আসে দ্বারকানাথের জীবনে। কালাপানি পেরিয়ে চলে যান বিলেতে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

বিষয়বস্তু মোটামুটি এই। পৌনে তিন ঘণ্টার নাটকে কিছু কাল্পনিক চরিত্র ও ঘটনা সংযোজন করা হয়েছে। পরিচালক রানা বসু জানালেন, “খুব কঠিন বিষয়। মঞ্চস্থ করার আগে তিন মাস সময় পেয়েছি। নাটকটির সময়সীমা হয়তো একটু দীর্ঘ। আরও সম্পাদনার প্রয়োজন আছে। ভাবনাচিন্তা করব। দ্বারকানাথের জীবন নিয়ে আগে নাটক হয়েছে বলে মনে হয় না। ঠাকুরবাড়ির কাদম্বরী নিয়ে যতটা চর্চা হয়, তার সিকি ভাগ চর্চাও হয় না দিগম্বরীকে নিয়ে। অথচ সেই যুগে তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী চরিত্র। সবাইকে অনুরোধ করব আগামী দিনে নাটকটা দেখার জন্য।”। প্রায় ৩০টা সিনেমায় অভিনয়ের পর মঞ্চে ফিরলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, “পেশাগত ব্যস্ততা রয়েছে। পাশাপাশি সময় বের করে নিই অভিনয়ের জন্য। অভিনয় আমার প্যাশান। এই নাটকে আমি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাহেব। ভারতীয়দের প্রতি যাঁর গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। চরিত্র নির্মাণে পরিচালক আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। আগামী দিনে আরও কিছু অন্য রকমের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে চাই।”

অন্যান্য চরিত্রে রূপদান করেছেন লোকনাথ দে, দেবযানী সিংহ, শুভ গুপ্তভায়া, অনসূয়া দে, ডাঃ শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, ইপ্সিতা কুণ্ডু, শুভরাজ মল্লিক, শ্রেয়া বিশ্বাস, বিভাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌলী দাশগুপ্ত, নিমাই চক্রবর্তী, শম্পা হোড়, সম্পিয়া কর, পৌলম বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা রায়চৌধুরী, অমর্ত্য চক্রবর্তী, সোহিনী সাঁতরা, অনিন্দ্য ভট্টাচার্য, সুপর্ণা সাধু। প্রত্যেকের অভিনয় এবং আলো, মঞ্চ, সাজসজ্জা, আবহ, পরিচালনা প্রশংসার দাবি রাখে। যাঁরা দেখেননি, অবশ্যই দেখবেন। জানতে পারবেন অজানাকে, চিনতে পারবেন অচেনাকে।

দর্শকাসনে ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র বসু। নাটকটির প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ভালো লেগেছে। একটা বিশেষ সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। সাধুবাদ জানাই পরিচালক এবং কলাকুশলীদের। আশাকরি নাটকটি আগামী দিনে আরও অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছে যাবে।”

 

Previous articleরাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশ, প্রথম-দ্বিতীয় কলকাতার স্কুলের
Next articleঅসুস্থ আপ নেতা সত্যেন্দ্র জৈনকে অন্তর্বর্তী জামিন দিল শীর্ষ আদালত