জয় গরামের পরিবর্তে মুখে জয় শ্রীরাম স্লোগান! ওরা আসলে কুড়মি তো, নাকি বিজেপির জল্লাদ?

সোমনাথ বিশ্বাস, ঝাড়গ্রাম: কুড়মি আন্দোলনের নামে গুন্ডামি। জঙ্গিপনা। নিজেদের দাবি নিয়ে বনধ, অবরোধ, বিক্ষোভকে ছাপিয়ে এবার ভয়ঙ্কর হামলা কুড়মিদের একাংশের। শুক্রবার ছিল তৃণমূলের নবজোয়ারের ৩০তম দিন। ঝাড়গ্রামে কর্মসূচি ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জনজোয়ারে ভাসতে ভাসতে অভিষেক যখন অধিবেশন মঞ্চ ও জনসভার এলাকায় ঢুকছেন, ঠিক তার কয়েক কিলোমিটার আগে গড় শালবনিতে একদম কুড়মি আন্দোলনকারীদের পতাকা হাতে তাঁর কনভয়ের হামলার চেষ্টা। আদিবাদী সম্প্রদায়ের মহিলা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটবৃষ্টি। আক্রান্ত সংবাদ মাধ্যম। বিক্ষোকারীদের মুখে “জয় শ্রীরাম স্লোগান’!

আর সেই জায়গা থেকেই সন্দেহ, বিতর্কের সৃষ্টি। কুড়মি সমাজের স্লোগান তো “জয় গরাম”, কিন্তু এদিন তাদের পতাকা হাতে যারা আন্দোলনের নামে গুন্ডামি করল, তাদের মুখে “জয় শ্রীরাম স্লোগান!” প্রশ্ন উঠছে, “ওরা আসলে কুড়মি তো, নাকি বিজেপির জল্লাদ?” কুড়মি আন্দোলনকে সামনে রেখে গেরুয়া শিবিরের নোংরা রাজনীতি নয় তো?” কিছু উন্মাদকে মদ আর মাংস খাইয়ে কুড়মিদের মুখোশ পরিয়ে এই ঘটনা বিজেপি ঘটায়নি তো? সেটা কুড়মি আন্দোলনের
নেতাদের জবাব দিতে হবে। ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন অভিষেক। কারণ, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এই কাজ কুড়মিদের নয়, তাঁদের নাম ভাঙিয়ে বিজেপির কারসাজি।

শুক্রবার তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচির ৩০তম দিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঝাড়গ্রামে জনসুনামিতে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলেছেন গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত গজাশিমুলের অধিবেশনের দিকে, ঠিক তখনই গড় দহিজুড়ির গড় শালবনিতে একদল উৎশৃঙ্খলের তুমূল বিক্ষোভ কিছুটা তাল কাটল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের উপর লাঠি-বাঁশ নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা। অভিষেক গাড়িতে উঠে যাওয়ার পর কার্যত ইট-বৃষ্টি করা হয় কনভয়ের বাকি গাড়িগুলিতে। মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়ির কাচও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন কুড়মি আন্দোলনকারীদের একাংশ। গড় শালবনীতে সেই ঘটনার পরেই ৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লোধাশুলিতে পৌঁছে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অদ্ভুতভাবে তখন আর কোনও আন্দোলনকারীর পাত্তা পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনাকে ‘আন্দোলনের নামে গুন্ডামি’ বলে দাবি করেছেন অভিষেক। আরও জানিয়েছেন, তাঁর বিশ্বাস, কুড়মিরা নন, এর পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার কনভয়ে হামলার নিন্দা করে লোধাশুলির সভা থেকে এদিন অভিষেক বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। এটা কোনও আন্দোলনের পদ্ধতি হতে পারে না।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘পাথর ছুড়ে আপনারা স্মারকলিপি জমা দিচ্ছিলেন?’

বীরবাহার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অভিষেকের প্রশ্ন, যাঁরা জনজাতির স্বীকৃতির জন্য লড়ছেন তাঁরা কী করে জনজাতি মহিলার উপর হামলা চালালেন? ‘এসব হতাশা থেকে করছে’, দাবি তাঁর। কুড়মি আন্দোলনের নামে কিছু লোক বর্বরতা করেছে। একজন একজন এসটি মহিলা বীরবাহা হাঁসদা রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁর উপর আক্রমণ হয়েছে। আন্দোলনের নামে গুন্ডামি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে ইংরেজদের বিতাড়িত করেছে গান্ধীজি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৬ দিন অনশন করে আন্দোলন করে রাস্তায় ছিল।

অভিষেকের বক্তব্য, “দাবি একটি, দশটি গ্রুপ কেন। ইট ছুঁড়ে আন্দোলনের নামে জল্লাদদের উল্লাস মঞ্চে ঝাড়গ্রামকে অশান্ত করছে। সবাই একজোট হোন। কারা পিছনে আছে জানি। খুঁজে বার করব। তাদের মুখে জয় শ্রীরাম স্লোগান কেন? মদের বোতল ছুঁড়ে আন্দোলন? যেখানে বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতে এমব ঘটনা ঘটলো না, সেখানে ঝাড়গ্রামে কেন? প্রশ্ন অভিষেকের।

আরও পড়ুন- ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের নবজোয়ারে জনসুনামিতে ভাসলেন অভিষেক

 

Previous articleআমবাঙালির আম পার্বণ! কাউন্সিলর সোমা চৌধুরীর উদ্যোগে আমহার্স্ট স্ট্রিট আম উৎসব 
Next articleতৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে আজ শালবনিতে একমঞ্চে মমতা-অভিষেক, নজরে নেত্রীর বার্তা