নিয়মভঙ্গকারীদের মদত দিতে পুরস্কার রাজ্যপালের! অভিযোগে সরব সদ্য প্রাক্তন উপাচার্যরা

নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও রিপোর্ট আমরা উচ্চ শিক্ষা দফতরকে দিই। সেখান থেকে রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়।

রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং উপাচার্যদের কাছে অপমানকর বলে স্পষ্ট জানালেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া উপাচার্যরা। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ওমপ্রকাশ মিশ্র সহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অভিযোগ, উপাচার্য নিয়োগের নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামত নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। এমনকি নিয়োগপত্রে ‘নিয়োগ’ কথাটির উল্লেখ নেই। কারণ, তিনি নিজেও জানেন যে তিনি উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন না।

এমনকী, যারা নিয়ম মানলেন না তাদের তিনজনকে পুরস্কার হিসাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করলেন, আর আমরা যারা নিয়ম মেনে উচ্চ শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট দিলাম তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে না বলে হুমকি দিলেন।আসলে নিয়মভঙ্গকারীদের তিনি মদত দিলেন, আর নিয়ম মেনে চলা দের শাস্তি! এর মাধ্যমে আমরা কোন বার্তা দিলাম ছাত্র-ছাত্রীদের।  এ প্রসঙ্গে ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন,আচার্য প্রত্যেক সপ্তাহে উপাচার্যদের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিলেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, কখনও শিক্ষার জগত ছেড়ে প্রশাসনিক বিষয়ে নাক গলানো আমাদের কাজ নয়। তার জন্য উচ্চশিক্ষা দফতর আছে। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও রিপোর্ট আমরা উচ্চ শিক্ষা দফতরকে দিই। সেখান থেকে রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়।

যদিও প্রত্যেক সপ্তাহে রিপোর্ট দেওয়ার মতো কোনও নিয়ম উচ্চ শিক্ষা দফতরের নেই। কিন্তু রাজ্যপালের নির্দেশ মতো আমরা সেই নিয়ম কখনওই ভাঙতে পারি না। অথচ ২৪ জন উপাচার্যের মধ্যে যে তিন জন উপাচার্য সেই নিয়ম ভেঙে রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাদেরকে এক্সটেনশন করেছেন রাজ্যপাল। আমরা যারা নিয়ম মানলাম তাদেরকে এক্সটেনশন দেবে না বলে জানিয়েছেন সেই জানানোর অধিকারও রাজ্যপালের নেই। কারণ, উপাচার্য নিয়োগ হয় একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে। রাজ্যপাল যা করলেন তাতে শিক্ষক হিসাবে আমরা অপমানিত, ব্যথিত, অবাক। রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত থাকতে পারে। কিুন্তু উপাচার্যদের এইভাবে অপমানিত করার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে।

এদিন তারা জানান,  বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নিয়ে গড়া সন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) নামের তালিকা দেবে এবং আচার্যের (পদাধিকারবলে রাজ্যপাল) অনুমোদনের পর সেই তালিকা থেকে উপাচার্যকে বেছে নেওয়া হয়। এত দিন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের আমলে প্রচলিত সেই পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, যাদের মেয়াদ ৩ মাসের জন্য দেওয়া হয়েছিল, একাধিক ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ বৃহস্পতিবারই শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপরই রাজ্যভবনের তরফে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানকার বিভিন্ন ব্যক্তিকে অন্তবর্তী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন এই দায়িত্ব বণ্টন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রীও।ফলে বৃহস্পতিবার থেকে উপাচার্যহীন রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় । ২৮ মে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বুধবার আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার উপর কলকাতা ও দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই এই মুহূর্তে উপাচার্যহীন ছিল।

রাজ্যপালের নয়া নির্দেশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হলেন সহ উপাচার্যের পদে থাকা অমিতাভ দত্ত। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হল অমলেন্দু ভুঁইয়াকে। সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন সেখানকার সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক বিশ্বজিত ঘোষ।দশটি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। এই নিযুক্তি দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা ব্যতিরেকে করা হল, যা বর্তমানে উপাচার্য নিয়োগের যে নিয়ম আছে তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং বেআইনি।

Previous articleসফল মহেন্দ্র সিং ধোনির অস্ত্রোপচার
Next articleনন্দীগ্রামের ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল সুপ্রিমোর ফোন অভিষেককে, কাকদ্বীপের সভায় থাকবেন মমতাও