এবার ‘গণতন্ত্র’কেই ছেঁটে ফেললেন নরেন্দ্র মোদি!

নমো সরকার যে অন্যের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেয় না এবং নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দেশ পরিচালনা করতে ব্যস্ত তা তাঁদের সাম্প্রতিককালের কার্যাবলীর মধ্যে দিয়ে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

দিন কয়েক আগেই গণতন্ত্রের (democracy) পীঠস্থান সংসদ ভবনের (New Parliament House) উদ্বোধনে নিজের নাম ফলাও করে প্রচার করতে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানাননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। জীবদ্দশায় নিজের নামে স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। শুধু তাই নয় নিজের ইচ্ছেমতো ভারতের ইতিহাস বদলানোর খেলায় নেমেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বারবার এমনই অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। এবার গণতন্ত্রকেই ছেঁটে বাদ দিয়ে দিলেন নমো। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। দশম শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় স্কুল সিলেবাস থেকে গণতন্ত্র সংক্রান্ত গোটা একটা অধ্যায় ছেঁটে ফেলল কেন্দ্র। এরপরই রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলতে শুরু করেছে এ যেন হীরক রাজার দেশ।

কথায় কথায় ধর্মের ধ্বজা উড়িয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করার অপচেষ্টা বিজেপি সরকারের (BJP Government)। হিন্দুত্বের নামে সুড়সুড়ি দিয়ে দেশের প্রাচীন ইতিহাস বদলে ফেলার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত করছে বিজেপি তাতে ক্ষুব্ধ দেশবাসী। গণতন্ত্রকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করেছেন মোদি (Narendra Modi)। চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার চেষ্টা করছে নমো সরকার, বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। মুঘল সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের হিন্দুত্ববাদী পরিচয়, আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, দেশভাগ, ঠান্ডা যুদ্ধ এমনকি প্রজনন, ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব- এই সব কিছুকেই দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠক্রম থেকে বাদ দিয়েছে এই স্বৈরাচারী সরকার। এবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার খেলায় নেমেছে বিজেপি। ‘ডেমোক্রেটিক পলিটিক্স-২’ (Democratic Politics -2) বই থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হল মোট তিনটি অধ্যায়, ‘গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য’, ‘জনপ্রিয় আন্দোলন’ এবং ‘গণতন্ত্রের সঙ্কট’। একদিকে দেশে-বিদেশে গণতন্ত্র নিয়ে গালভরা ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে গিয়ে গণতন্ত্রের পাঠ পড়াচ্ছেন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের, অথচ তাঁর সরকারই সিলেবাস থেকে গণতন্ত্র বিষয়ক অধ্যায় পুরোপুরি ছেঁটে দিচ্ছে! শুধুমাত্র নিজের প্রচার করা ছাড়া আর অন্য কোন দিকেই লক্ষ্য নেই মোদি – শাহের। পাঠক্রমের সিলেবাসের এই অযৌক্তিক পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখছে না শিক্ষক মহল। সাধারণ মানুষকে ভুল যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে নিজেদের স্বৈরাচারী শাসনের সাফাই দিতে চাইছেন মোদি। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি ও শক্তির উৎসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ও সিলেবাস থেকে সরিয়ে দিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)। এত বড় কাণ্ডের পর বুধবার মধ্যরাতে টুইটারে সেই খবর পোস্ট করেন ব্রিটিশ বায়োলজিস্ট রিচার্ড ডাওকিন্স। সঙ্গে লেখেন, ‘ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে নিদারুণ অপমানের প্রতীক মোদির বিজেপি।’

মোদির এই বদলনীতির বিরোধিতায় বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনি বলেন, ‘আজকাল স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে সব বদলে দেওয়া হচ্ছে। বিবর্তন তত্ত্ব বাদ পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, ইসরো প্রধান যুক্তি দিচ্ছেন সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নাকি বেদে আছে। কোনদিন দেখব আইনস্টাইনকেও বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ মোদির সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বিবর্তনবাদ ছেঁটে ফেলার প্রতিবাদে সরকারকে খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। কিন্তু নমো সরকার যে অন্যের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেয় না এবং নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দেশ পরিচালনা করতে ব্যস্ত তা তাঁদের সাম্প্রতিককালের কার্যাবলীর মধ্যে দিয়ে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জানা যাচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকেও বাদ পড়েছে গণতন্ত্রের উপাদান, ভারতের জলবায়ু ও বন্যপ্রাণের মতো অধ্যায়গুলি। সপ্তম শ্রেণির সিলেবাসে নেই সাম্য প্রতিষ্ঠান সংগ্রাম বিষয়ক চ্যাপ্টার।

 

Previous articleপ্রকাশ‍্যে ব্রিজভূষণের নামে একাধিক অভিযোগ, ১০ অভিযোগ আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের
Next articleআচমকাই পড়ে গেলেন মঞ্চে! মার্কিন প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জোর জল্পনা