মণিপুরে এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন নয়! সর্বদল বৈঠকের আগে আচমকাই ‘ভোলবদল’ কেন্দ্রের

শনিবারই দিল্লির সংসদ ভবনের লাইব্রেরি কক্ষে সব ক’টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বৈঠকে রাজ্যে শান্তি এবং স্থিতাবস্থা ফেরানোর উপরেই বেশি জোর দেওয়া হবে বলে সাফাই বিজেপির।

সময় যত গড়াচ্ছে ততই অশান্তি বেড়ে চলেছে মণিপুরে (Manupir)। আর এমন আবহে মণিপুরে হিংসার ঘটনা আয়ত্তে আনতে উত্তর পূর্বের রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছিল বেশ কিছু বিরোধী দল। কিন্তু নিজেদের মুখ বাঁচাতে এখনই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন (Presidents Rule) জারি করার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের (BJP Govt)। বিরোধীদের মতে, বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election)। আর সেই নির্বাচনের আগে কোনওরকমভাবেই পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ থেকে এক বিন্দুও ছাড়তে চাইছে না কেন্দ্রের মোদি সরকার। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার মণিপুর নিয়ে সর্বদল বৈঠকে (All Party Meeting) এই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে গেরুয়া শিবির। বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হতে পারে যে, এখনই তারা এই বিষয়টি নিয়ে এগোতে রাজি নয়। মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিজেপি সরকারের উপরই আস্থা রাখার কথা উঠে আসতে পারে শনিবারের বৈঠকে। আর এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পরই কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, সব জেনে বুঝেই লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ কেন্দ্রের।

সূত্রের খবর, মণিপুরের বাসিন্দাদের অনেকেই রাজ্য বিজেপি সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং (N Biren Singh) বিজেপি সমর্থক এবং মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ হওয়ায়। মেইতেইদের সঙ্গে কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরেই গত মে মাস থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। তার পর এতদিন দিন কেটে গেলেও এখনও শান্ত হয়নি মণিপুর। এই পরিস্থিতিতে বীরেনকে সরিয়ে অন্য কাউকে সরকারের মুখ করা হবে কি না, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও কম আলোচনা হয়নি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। তবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার (Himant Bishwa Sharma) সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) এক বৈঠকের পর পরিস্থিতিতে বদল আসে। গত ২১ জুন নয়াদিল্লিতে শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন হিমন্ত। তবে শাহের সঙ্গে বৈঠকের আগে গত ১০ জুন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন হিমন্ত। ঠিক তারপর দিন তিনি গুয়াহাটিতে কুকি বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হিমন্ত পরামর্শ দেন, এখনই মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কোনও প্রয়োজন নেই।

শনিবারই দিল্লির সংসদ ভবনের লাইব্রেরি কক্ষে সব ক’টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বৈঠকে রাজ্যে শান্তি এবং স্থিতাবস্থা ফেরানোর উপরেই বেশি জোর দেওয়া হবে বলে সাফাই বিজেপির। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের এমন ভোলবদলে বেশ চিন্তায় বিরোধীরা। গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’-এর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরেই জনজাতি সংগঠনগুলি বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

 

 

 

Previous articleদাড়ি কাটো, বিয়ে করো! গুরুগম্ভীর বৈঠকে রাহুলকে সরস পরামর্শ লালুর
Next articleরবিবার থেকে সময় সূচিতে বদল নর্থ-সাউথ মেট্রোর