রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী ভূমিপুত্র প্রকাশ-সামিরুল, জানেন এদের পরিচয়?

পঞ্চায়েত ভোটের পরই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার আসনের জন্য নির্বাচন আগামী ২৪ জুলাই। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস আজ, সোমবার আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য শূণ্য পদে ৬টি প্রার্থী নাম ঘোষণা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল যাদের নাম সাংসদ পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে তাঁরা হলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, সুখেন্দু শেখর রায়, সামিরুল ইসলাম, প্রকাশ চিক বড়াইক, সাকেত গোখলে। যার মধ্যে প্রথম তিনজন আগেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। পরের তিনজন নতুন প্রার্থী।

ভুটান সীমান্ত লাগোয়া চা বাগানের আদিবাসী শ্রমিক পরিবারের এক সাধারণ চা বাগান কর্মীকে প্রকাশ চিক বড়াইককে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়ে উত্তরের রাজনীতিতে মাস্টার স্ট্রোক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী বছরের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে, বিশেষ করে বিজেপি কে মাত দিতেই যে তৃণমূল কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত,তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এন কে এস গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে প্রকাশ। তারপর ২০২১ এর বিধানসভার আগে জেলা তৃণমূলের কোর্ডিনেটর করা হয় প্রকাশকে । একুশের বিধানসভায় আলিপুরদুয়ার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ফল খারাপ হয়। এরপর জেলা সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বচ্ছ ভাব মূর্তির আদিবাসী মুখ প্রকাশ কে। দায়িত্ব নিয়েই আলিপুরদুয়ার ও ফালাকাটা পুরসভার নির্বাচনে দলকে বিপুল জয় এনে দেয় প্রকাশ। প্রকাশ চিক বড়াইক আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের নিউ ল্যান্ডস চা বাগানের বাসিন্দা। বি-কম পাশ করার পর ওই চা বাগানের করণিক হিসেবে যোগ দেন, পাশাপাশি বাবার সঙ্গে রাজনীতি কর্মকান্ডেও যুক্ত ছিল সে সময়।

জেলার রাজনৈতিক মহলে জোর প্রচার ছিল আগামী ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে প্রকাশকে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হতে পারে, কিন্তু সকলের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে চা বলয়ের তরুণ তুর্কি প্রকাশকে প্রার্থী করেন। এই খবর জেলায় পৌঁছতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভার প্রার্থী পদ পাওয়ার পর প্রকাশ বলেন ‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার উপর আস্থা রক্ষায় আমি কৃতজ্ঞ, সবার উন্নয়নে আগামী দিনে কাজ করতে চাই ।’

নতুন মুখ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন বীরভূমের রামপুরহাটের বাসিন্দা সামিরুল ইসলাম। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জেলা থেকেই ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান তোলেন সামিরুল। সামিরুল ইসলামের আরেকটি পরিচয় আছে সমাজসেবী হিসেবে। তিনি বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি। বিশ্বভারতী পৌষমেলা বন্ধ করে দেওয়ার পর বোলপুর পুরসভার সাথে যৌথভাবে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ পৌষমেলার আয়োজন করে। সেখানেই তৃণমূল সাথে তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে। বর্তমানে গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের রসায়নের অধ্যাপক তিনি। সামিরুলের স্ত্রী সবনম সুলতানা কোলকাতা উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী।

সামিরুল ইসলামের বড়ো কাজ হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। জেলা ছাড়িয়ে সারা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের ডাটাবেস তৈরী করেন সামিরুল ইসলাম। অসহায় প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে ন‍্যায় প্রদানের জন‍্য বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের ব‍্যানারে নেমে পড়তেন সামিরুল। তাই তো তৃণমূলের নেতৃত্ব তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে, প্রথমে তিনি বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সাথে কথা বলেন। কোভিডের সময় কিট পরে তাঁর টিমের সঙ্গে ময়দানে নেমেছেন। তাদের অক্সিজেন, ওষুধ, খাবার বিতরণ করেছেন। এন আর সি, সি এ আন্দোলন বা পঞ্জাবের কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন সবটাতেই তিনি অগ্রভাগে। বিজেপি সরকারের দমনপীড়ন নীতির বিরুদ্ধে কখনও সাংবাদিক জুবেয়ার আবার কখনও তিস্তা শেতলাবাদের হয়ে সোচ্চার হন। তাইওয়ানের লোভনীয় চাকরি তুচ্ছ করে দেশের কাজে নেমে পড়েন। রবীন্দ্র- নজরুল- লালন- বিবেকানন্দের মতো মনিষীদের বাংলাকেই তাঁর কাজের জায়গা হিসেবে বেছে নেন সামিরুল।

আরও পড়ুন- ভাবা যায়! টমেটো লুট রুখতে দোকানে বাউন্সার রাখলেন সবজি বিক্রেতা

Previous articleরাত পোহালেই গ্রাম বাংলার রায়, ব্যালটে প্রিসাইডিং অফিসারের সই ছাড়া ভোট বাতিল
Next articleসোমবার শান্তিতেই মিটল পঞ্চায়েতের ৬৯৬ বুথের পুনর্নির্বাচন