সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে দেদার হিংসা, অশান্তি এবং প্রাণহানির ঘটনা সাামনে এসেছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও অব্যাহত হিংসা। তা নিয়ে বিরোধীরা যখন শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করছে, সেই সময় সরাসরি কলকাতা হাইকোর্ট এবং আদালতের বিচারপতিদের একাংশকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালত বিজেপির গুন্ডাবাহিনীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
হাইকোর্টের বিরুদ্ধে রাজ্য বিজেপিকে নিরাপত্তা দেওয়ার অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কী করে? অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হল, হাইকোর্ট এদের নিরাপত্তা দিয়ে রেখে দিয়েছে। আমি বার বার বলেছি, বিচারব্যবস্থার একাংশ যেভাবে বিজেপি-কে মদত দিচ্ছে, গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। এই স্তম্ভকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে চলেছে বিজেপি। যে দোষ করবে, সে যেন জেলে যায়। শুভেন্দু অধিকারীর ছত্রছায়ায় যাঁরা, তাঁদের কেন সুরক্ষা কবচ দিয়ে রেখেছে? আমি রক্ষাকবচ চাইলে দেবে না, বিজেপি নেতারা চাইলে কেন দিচ্ছে?”
এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয় বিচার ব্যবস্থা ও কলকাতা হাইকোর্টকে অপমান করেছেন অভিষেক। যদিও এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, অভিষেক আদালতকে অপমান করেননি, আক্ষেপ করেছেন মাত্র! যুক্তি দিয়ে ব্যখ্যাও করেন কুণাল।
তাঁর কথায়, “অনেকে বলছেন হাইকোর্ট নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। অভিষেক বা তৃণমূল বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখে। কোনও চরম আক্ষেপ থেকে কিছু কথা বলেছেন। যে আক্ষেপ নিয়েই মহামান্য আদালতের বিচার করা উচিত।”
কী আক্ষেপ? যুক্তি সহকারে কুণাল বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের পিছনে এজেন্সি ব্যবহার করছে বিজেপি। কিন্তু শুভেন্দু ও তার বাহিনী কোর্টে গেলেই রক্ষা কবচ পাচ্ছে। এই কথা আক্ষেপ থেকে বলেছেন। আদালত বা বিচার ব্যবস্থার কোনও সমালোচনা করেননি।”
এরপর আদালতের তথ্য তুলে ধরে কুণালের দাবি, “পঞ্চায়েতে নাকি তৃণমূল গণ্ডগোল করেছে। সেটা ঠিক নয়, পঞ্চায়েতের আগে বিজেপির লোকেরা রক্ষাকবচ পাচ্ছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বুঝতে পারছে কোন দুস্কৃতি ঝামেলা পাকাচ্ছে। কিন্তু রক্ষা কবচের জন্য কিছু করতে পারছে না। এটা নিয়েই অভিষেকের আক্ষেপ। কোনও অবস্থায় তিনি আদালতকে অপমান করেননি।”
তাঁর আরও সংযোজন, “কোর্ট রক্ষা কবচ দিচ্ছে। আবার তারাই বলছে সন্ত্রাস কেন হচ্ছে। বিজেপি প্রার্থী, প্রচারক ও সমর্থকদের রক্ষা কবচ দিচ্ছে। তাহলে পুলিশ সন্ত্রাস আটকাবে কী করে। আর সেই সুযোগ নিয়েই তৃণমূলের এক মহিলা প্রার্থী নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়ায় সোমা জানার উপর এই যুগেও মধ্যযুগীয় বর্বরতা হল। তাঁকে তিন ঘন্টা গাছে বেঁধে পেটানো হয়েছে। কোট কেন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে বলবেন না। আর যারা হামলা চালাবে তারা রক্ষা কবচ পেয়ে যাবে। আপনারাই বলছেন লজ্জা লাগছে, তাহলে লজ্জা মোচনের জন্য পদক্ষেপ নয় কেন? অভিষেক এই বিষয়ের উপরই নজর টেনেছেন। আদালতকে অপমান করেননি।”