রাজভবন-নবান্ন সংঘাতে এবার নয়া মোড়। শনিবার ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজার ঠিক আগেই নিজের জেদ এবং কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে অ্যাকশনে নামেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Anand Bose)। দিল্লি ও নবান্নে খামবন্দি রহস্য চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। আর সেই চিঠি প্রসঙ্গেই এবার রাজ্যপালকে একহাত নিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি বলেন, এটা মধ্যরাতের ব্যাপার, নিশাচরীয় কাজকর্ম। আমরা চাই রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে কাজকর্ম করুন এবং আমরা আশা রাখব তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার তিনি করবেন না। এরপরই কুণাল প্রশ্ন তোলেন, রাত জাগে কারা? রাত কেন জাগবেন? এই প্রসঙ্গে কবিগুরুর প্রসঙ্গ টেনে কুণাল বলেন, “জাগরণে যায় বিভাবরী, আঁখি হতে ঘুম নীলহরি”। আসলে রাজ্যপালের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। রাজ্যপাল রাত জেগে বসে আছেন এবং চিঠি লিখছেন। গভীর প্রেম বা গভীর ভালোবাসা না থাকলে তো কেউ রাত জেগে চিঠি লেখেন না। তবে তিনি চিঠিতে কী লিখেছেন তিনিই জানেন।

কুণাল আরও বলেন, রাজ্যপাল বিজেপির একজন এজেন্ট হিসাবে চিঠি লিখছেন। কিন্তু কোনও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। উনি বিজেপির এজেন্ট হিসাবে চিঠি লিখছেন। আর শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজের প্রতিবাদ করায় তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে। রাজ্যপালের যদি সত্যি কোনও সদর্থক আলোচনা করার বিষয় থাকত সেক্ষেত্রে উনি শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে আলোচনা করতে পারতেন। তাঁর বদলে বিবৃতি, প্রতিহিংসার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। অন্যদিকে, এদিন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের পাশাপাশি দিলীপ ঘোষকেও (Dilip Ghosh) কটাক্ষ করেন কুণাল। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে লেনিনের মূর্তি ভেঙে ফেলার হুমকি প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, লেনিনকে শ্রমজীবী নেতা হিসাবে মানুষ ভক্তি করেন। তাঁর মতাদর্শের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তাঁর মুতি থাকবে না এটা হতে পারে না। বাংলা তথা মনীষীদের গায়ে হাত দেবে এটা বরদাস্ত করবেনা। দিলীপ ঘোষ যা বলছেন তা কুরুচিকর, বাংলায় এসব চলবে না। বিজেপির কোনও ইতিহাস নেই। তাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রাম, দেশের স্বার্থে লড়াইতে বিজেপি ছিল না, ছিল না, ছিল না। বিজেপি যাঁদের নেতা বলে মনে করেন তাঁরা ব্রিটিশের তাঁবেদারি করেছেন। ব্রিটিশকে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশদের হাত শক্ত করেছেন। মহত্মা গান্ধীর আততায়ী যারা তাঁদের বিজেপি পুজো করে।
পাশাপাশি ইন্ডিয়ার নাম বদলে ভারত হবে যাঁদের পছন্দ হবে না তাঁরা বেরিয়ে যেতে পারেন দিলিপ ঘোষের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে কুণালকে প্রশ্ন করা হলে রীতিমতো ক্ষোভপ্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা কী দিলিপ ঘোষের বাবার দেশ? দিলীপ ঘোষ দুয়ারে সরকারের লাইনে দড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করায়। জোর করে এই বিতর্ক করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোট দেখে ভয় পেয়ে এসব করছে বিজেপি। অন্যদিকে, এদিন ডেঙ্গু নিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার বার্তা দেন কুণাল। তিনি বারবার বলেন, ডেঙ্গি মরসুমি সমস্যা। রাজ্য সরকার ডেঙ্গি প্রতিরোধে সদা সতর্ক। তবে ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্যের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

এরপরই রাজ্যের বিরোধী দলেনেতা তথা দলবদলু শুভেন্দুকে (Suvendu Adhikari) একহাত নিয়ে কুণাল বলেন, ধূপগুড়ির নির্বাচনে হেরে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বিরোধী দলনেতা তথা দলবদলু শুভেন্দু অধিকারীর। আর সেকারণেই রামায়ন, মহাভারতের লেখকদের নাম ভুলে যাচ্ছে। শুভেন্দুর এখন পাগল পাগল অবস্থা।
