অভিষেকের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা সুদীপ-মদন-বীরবাহা-শওকতের

দিল্লি থেকে ফিরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে ‘রাজভবন অভিযান’-এর ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। সেই মতো বুধবার দুপুর ২টোর পরে রবীন্দ্র সদন থেকে শুরু হয় মিছিল। অভিষেকের নেতৃত্বে রাজভবন পর্যন্ত সেই মিছিলে চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছিল। জনস্রোত নিয়ে রাজভবনে পৌঁছলেও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দেখা মেলেনি। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার দিল্লিতে ফিরে যান। কলকাতায় আসেননি। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁদের সমাবেশকে ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছেন।

রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে দেখা না করা পর্যন্ত রাজভবনের সামনেই বসে থাকবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার তেমনটাই ঘোষণা করছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন, টানা অবস্থানে বসবেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাতও কাটিয়েছেন ধর্নামঞ্চেই। শুক্রবার সকাল থেকে আবার রাজভবনের সামনে তৃণমূলের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

সেই ধরনা মঞ্চে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা নিজেরা ঠিক থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না।এজেন্সি দিয়ে অভিষেকের পুরো পরিবারকে ডেকে পাঠিয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে।কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দলের কাজে ব্যবহার করছে বিজেপি।সিবিআই-ইডি দিয়ে হেনস্থা করা ছাড়া আর কিছু করা যাবে না। অভিষেক তো বুক চিতিয়ে বলেছে, আমি যা বলে গেলাম, আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট আদালতে জমা করুক ইডি।৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসনে ইন্ডিয়া জোট যদি সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে পারে, তবে মোদি মুক্ত ভারত গড়া সম্ভব হবে।অভিষেক আগামী দিনে সঠিকভাবে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।

সর্বদলীয় বৈঠক নিয়ে দিল্লি চলুন রাজ্যপাল। আমি দলের হয়ে আপনার সঙ্গে যাব। দুদিন তিনদিন পর রাজ্যপাল যদি ভাবেন উঠে যাব তাহলে আমরা সেই দল নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ দিন, ২৬ দিনের অনশন করেছেন। সেই পথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন। দেখেও ভাল লাগছে অভিষেকের কথা চলা বলা চলে ফেরার মধ্যে মমতার ছাপ ফুটে উঠছে। অভিষেকের মধ্যে আমি আলাদা সত্ত্বা দেখতে পাই না, চাইও না। দেখছি মমতা চলছে। সেই পথে যেতে মমতা চলে যাবে। সেই পথেই আবার অভিষেক যাবে। এটাই তো সাফল্য।

২০১৯ এ ৩৭% ভোট পেয়েছিল। বাকি প্রতিপক্ষকে যদি একজোট করতে পারি তাহলে মোদিকে হারানো সম্ভব।অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন এই কজন সাংসদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর লড়াই! আই কে গুজরাল, দেবেগৌড়াদের একজন দুজন করে সাংসদ ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন হবেন না? তবে আমরা সেই আলোচনা করতে আসিনি। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া দাবি নিয়ে এসেছি।

প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে দলের নেতারা গরীব মানুষের বাড়ি গিয়ে তাদের বুকে নিয়ে ছবি তুলে আমরা ব্যবস্থা নেব বলে চলে আসত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র ব্যতিক্রম। আর এই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওর কাছে ‘সাফল্য কী হবে, কী হবে না পরের কথা। কিন্তু যেটা বলে এসেছি সেটা করে ছাড়ব। ময়দান ছেড়ে যাব না’

দিল্লিতে নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করলেন। ৫ মিনিটে বেরিয়ে চলে যেতাম। লজ্জা লাগে না আপনাদের? এই মুহূর্তে দুটো এম লড়াই করছেন। এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরেক মোদি। মার্ডারার অফ ডেমোক্রেসি রাজ্যপাল আর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবে না সুপ্রিম কোর্ট বলেছে। বাংলার মাটি থেকে আওয়াজ উঠছে এবার থেকে রাজ্যপালও অস্থায়ী হয়ে যাবে। যদি বেঁচে থাকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে লড়াই করে বেঁচে থাকব। মরার সময় একটা দলের পতাকা দিয়ে দেবেন। আমি গদ্দার নই। ময়দান ছেড়ে যাব না। শুভেন্দু অধিকারী নই, মদন মিত্র। আমাদের নেত্রীকে এখন আর নামতে হয় না, অভিষেক নামলেই হয়ে যাবে

বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানেন।বিজেপি নেতৃত্ব টিভিতে বসেও বেমালুম মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন।এত মিথ্যাচার শুধুমাত্র বিজেপি করতে পারে।তথ্য প্রমাণ থাকলে তদন্ত করুক ওরা, কিন্তু মন্ত্রী তো পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন।১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা যারা পায় তাদের অধিকাংশই পিছি্য়ে পড়া শ্রেণির মানুষ। ওদের টাকা আটকে দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে,আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য ওরা কিছু করবে না।রাজ্যপালকে জবাব দিতে হবে, যাদের টাকা আটকানো হয়েছে, তারা কোন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।

ভাঙড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন,অমিত শাহের পুলিশ যে দুর্ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করেছে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে আমরা আগে দেখিনি। রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার কোটি কোটি মানুষের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। দেশের অপদার্থ সরকার বাংলা বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। রাজভবনটাকে বিজেপির পার্টি অফিস বানিয়েছে। আর মানুষের দাবি নিয়ে তাঁর কাছে গেলে তিনি চোরের মতো পালিয়ে যান। আপনি রাজনীতির গন্ধ পেলে ভাঙড় বাসন্তীতে ছুটে যান তবে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে না। মাটির বাড়ি চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে সেখানে যাচ্ছেন না কেন?আজ অভিষেকের পুরো পরিবারকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। চারিদিকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চলছে। এক ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে। গোটা দেশের সব কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে অভিষেককে হেনস্থার চেষ্টা করলেও বিফল হবে। এই বাংলায় অনেক দুর্যোধন ও দুঃশাসন রয়েছে। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলার সর্বনাশ কীভাবে করা যায়।

Previous articleজঙ্গলে গণধর্ষ.ণের শি.কার আদিবা.সী নাবালিকা! পুলিশের জালে ৪ অভিযু.ক্ত
Next articleভোটের আগে নতুন পরিষেবা? আয়ের উৎস নিয়ে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশকে প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের