বর্ধমানের তালিত গ্রামের ভট্টাচার্য্য পরিবারের ‘দালান মা’ পঞ্চমুণ্ডি আসনের ওপরে বসেই পুজো নেন। জয়দুর্গা মন্দিরে ভট্টাচার্য্য পরিবারের এই দালান মাকে ঘিরে রয়েছে অনেক গল্পও।পরিবারের সদস্য প্রসূন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, বছর দশেক আগে দেবীর পাটাতনকে ১৬ জন মিলে সরানোর চেষ্টা করেও পারেনি। কিন্তু পরের দিন ৬ জন মিলেই তা সম্ভব করেছে। এমনকি বর্তমানে যিনি ঠাকুর গড়েন সেই পরিবারের এক সদস্য রাত্রি ১২টা নাগাদ প্রতিমার রংয়ের কাজ করতে এলে তিনি অজানা কারও বাধা পান। কাজ না করেই তাঁকে চলে যেতে হয় সেই রাত্রে।
প্রসূনবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বসূরীদের কাছ থেকে দেবীর এই ধরণের অনেক অলৌকিক গল্প তাঁরা শুনেছেন। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য তথা পুজোর পুরোহিত অবনীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এই পুজো। এই পরিবারের পূর্ব পুরুষ কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্যের হাত দিয়ে এই পুজোর প্রচলন শুরু হয়। এই তালিত গ্রামেই রয়েছে দেবী সিদ্ধেশ্বরী। কথিত আছে এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে এসেছিলেন সাধক কমলাকান্ত এবং সারদামণি দেবী। সাধক কমলাকান্ত এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে বসেই সাধনাও করেছিলেন বলে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে।
অবনীবাবু জানিয়েছেন, পরিবারের এক সদস্যের নাম দুর্গাপ্রসন্ন বলে দেবীকে এখানে দালান মা নামেই ডাকা হয়। দালান মা-নামেই দেবী পরিচিত। তিনি জানিয়েছেন, ষষ্ঠীর দিন নবপত্রিকাকে ভট্টাচার্য্য পুকুরে স্নান করিয়ে দুর্গামন্দিরে নিয়ে আসার পর হলুদ জল দিয়ে তাঁকে ফের স্নান করানো হয়। আগে8 মোষবলি হলেও করোনার সময় থেকে মোষবলি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দালান মায়ের পুজোও চণ্ডী পাঠ হয় না। হয়না কুমারী পুজোও। যেহেতু মায়ের বেদি পঞ্চমুণ্ডি আসনের ওপর রয়েছে তাই সম্পূর্ণ তান্ত্রিক মতে পুজো হয়। দেবীকে বলির মাংস তথা মহাপ্রসাদ দেওয়া হয়। দেবীর ভোগে আবশ্যিকভাবে দেওয়া হয় মাগুর মাছ। আগে ভট্টাচার্য্য পুকুর থেকেই এই মাগুর মাছ ধরা হত, কিন্তু এখন সেখানে না পাওয়া যাওয়ায় বাজার থেকে কিনে আনা হয়।
অবনীবাবু আরও জানিয়েছেন, দালান মায়ের পুজোর নৈবেদ্যতে কোনেও মহিলা থাকেন না। পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই নৈবেদ্য তৈরী করেন। অন্যদিকে, দেবীর ভোগ প্রস্তুত করেন পরিবারের দীক্ষাপ্রাপ্ত মহিলারা। আগে পুজোর সময় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হত। এখন তা বন্ধ হলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।