যত্র-তত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার! চ.রম বি.পদ ডেকে আনছেন কি?

অ্যান্টিবায়োটিক- আবিষ্কারের পরেই একে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ তকমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অতি ব্যবহারে সেই অ্যান্টিবায়োটিকই এখন ভয়ের কারণ হয়ে উঠছে! এমনটাই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গ পশু এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রধান সিদ্ধার্থনারায়ণ জোয়ারদার। নিজের গবেষণাপত্রে এই বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। আর এই সমস্যা শুধু এদেশেই নয়, বিভিন্ন দেশেই মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধ গড়ে ওঠা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোন রোগের দাওয়াই হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic) খাওয়ামাত্রই আগে যেমন তৎক্ষণাৎ ফল পাওয়া যেত, ইদানীং পুরো কোর্সের পরেও নিরাময় হচ্ছে না। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধার ফলেই ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু সেই ব্যাকটিরিয়া কোথা থেকে শরীরে ঢুকছে? সিদ্ধার্থনারায়ণ জোয়ারদারের গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic) প্রতিরোধী ওই ব্যাকটিরিয়া রোজকার খাবার পাতের মাছ-মাংস থেকেই দেহে বাসা বাঁধতে পারে।

ওই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, গৃহপালিত মুরগি, শূকর বা গবাদির শরীরে থাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া-ই-কোলাই, সালমোনেলা। যখন আমরা সেই সব প্রাণির মাংস খাই- তখন তার মাধ্যমে ব্যাকটিরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। সিদ্ধার্থনারায়ণের মতে, একটি ব্যাকটিরিয়াও মানব দেহে ঢুকলে পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

কলকাতা এবং আশপাশের জেলার পোলট্রি ফার্মের মুরগির উপর পরীক্ষা চালান সিদ্ধার্থনারায়ণ। দেখা যায়, মুরগিকে রোগমুক্ত রাখতে এবং অল্প দিনে তাদের মাংসল করতে দেদার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে পোলট্রি ফার্মগুলি। মূলত মুরগির খাবারে মেশানো হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার’৷ আর সেই অ্যান্টিবায়োটিকই বিপদ ডেকে আনছে মানুষের জীবনে৷

 

তবে, শুধু মাংস থেকেই নয়, ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের মতে, পশুদের শরীরের যে অংশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, সেটা ডিম, মাংস, মাছ যে কোনও কিছু হতে পারে বা পশুদের মল-মূত্রর মধ্যেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া থেকে যায়। সেটা মানব দেহে প্রবেশ করলে তা বাসা বাঁধে। পরবর্তীতে সেটা বংশানুক্রমে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে কোনও অ্যান্টিবায়োটিকই তার মানুষের দেহে কাজ করবে না।

চিকিৎসক বক্তব্য, “পৃথিবীতে যেমন মানুষ রয়েছে, পশুরাও রয়েছে। পশুদের সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে হলেই যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলত

 

যদিও ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের দাবি, এখন আর মুরগিদের অ্যান্টি বায়োটিক দেওয়া হয় না। পোলট্রি বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অসুবিধার কথা জেনেই সম্পূর্ণ বিকল্প পদ্ধতি এনেছেন। গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, পোস্ট বায়োটিক এবং অ্যাসিডিফায়ার ব্যবহার করা হয়।

 

তাহলে মানুষের শরীরের এত পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া আসছে কোথা থেকে? চিকিৎসকদের মতে, সরকারকে যেমন নজরদারি রাখতে হবে, তেমনই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মুড়ি-মুড়কির মতো দোকান থেকে যখন তখন অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেলে চলবে না। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে হবে বলে মত চিকিৎসকদের।

Previous articleছট পুজো সেরে বাড়ি ফেরার পথে শু.টআউট! প্রতিবেশীর গু.লিতে মৃ.ত ২, কারণ নিয়ে ধোঁ.য়াশা
Next articleসুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি-র সব মা.মলা ছাড়লেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়