লোকসভা নির্বাচনের বাকি হাতে গোণা আর কয়েক মাস। তাহলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধন নিয়ে কেন তাড়াহুড়ো করছেন কেন্দ্র! এই বিল নিয়ে তাড়াহুড়োর পক্ষে নন বলে জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি পাঠালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধনে সংসদে তিনটি বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিলগুলি হল, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। এই ৩ বিল নিয়ে রাজ্যের মতামত চাওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে জানান, এই তিন বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। লোকসভা ভোটের আর বেশি বাকি নেই। ভোটের পর নতুন লোকসভায় এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ব্রিট্রিশ আমল থেকে চলে আসা ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধন করতে চেয়ে সংসদে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম নামে তিনটি বিল পেশ করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ২২ অগাস্ট দণ্ড সংহিতা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের থেকে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন অমিত শাহ। এদিন সেই চিঠির জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লেখেন, তাঁর মতে এই তিন বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। আসন্ন লোকসভা অধিবেশনে এই বিল নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Have been reading the drafts prepared by the Union Home Ministry to substitute the Indian Penal Code, Code of Criminal Procedure and Indian Evidence Act. Stunned to find that there is a serious attempt to quietly introduce very harsh and draconian anti-citizen provisions in these…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) October 11, 2023
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “নতুন এই বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো করবেন না। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই বিলটি আনার জন্য তাড়াহুড়ো করলে এর আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। কারণ, আমরা বিলটি ভাল করে যাচাই করে দেখেছি এতে অনেক ফাঁকফোকর আছে। যা নিয়ে আরও বেশি গবেষণা ও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের ‘I.N.D.I.A.’র শরিকদের মধ্যেও বিলটি নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। সকলের মতামত নিয়ে এ-ধরনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিল আইনে পরিণত হবে। না হলে আইনগত কোনও ত্রুটি- বিচ্যুতি থাকলে দেশবাসীর ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা। বর্তমানে বিলটি যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাতে এটি এলে তাতে অসুবিধা হবে এবং এর অপব্যবহারের সম্ভাবনা থাকছে। তাই আরও দীর্ঘ আলোচনা করেই বিলটি আনা হোক।“

মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই তিন বিল ভারতের সামগ্রিক নীতির উপরই যে শুধু প্রভাব ফেলবে তাই নয়, ভারতের জনজীবনের উপরও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অবধারিতভাবেই পড়বে। সুতরাং এই তিনটি বিল নিয়ে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যতবেশি সম্ভব আলোচনা করা উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “সেই কারণেই, আমার মতে, অতিরিক্ত সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় অধ্যাবসায় মেনে চলতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সংসদ এই বিষয়টি নিয়ে আইন তৈরির আগে সমস্ত পক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।“

আরও পড়ুন: কোন পথে নিয়োগ মামলার তদন্ত? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে রিপোর্ট জমা CBI-এর
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, আইনজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী, সাধারণ মানুষ সবার এ বিষয়ে মত নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তিনটি বিলের ধারা নিয়েই রাজ্য সরকারের কিছু সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্যসভার সচিবালয়ে নবান্নের জবাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, “বর্তমান লোকসভা প্রায় শেষ হতে চলেছে। ফলে, আমার মতে, পরবর্তী লোকসভার সদস্য এবং নতুন সরকার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।”

গত বাদল অধিবেশনে লোকসভায় বিলটি পেশ করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, সেটি বিস্তারিত আলোচনা না করিয়েই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রথম থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, ডিএমকের মতো ইন্ডিয়া জোটের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দলের পাশাপাশি সামনের সারিতে থেকে এই বিলের বিরোধিতা করেছে।
