শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর খুশি চাকরিপ্রার্থীরা, পরবর্তী বৈঠক ২২ ডিসেম্বর

২২ ডিসেম্বরে ফের চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এই বিকাশ ভবনে বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী।

সোমবার বিকাশ ভবনে এসএলএসটি (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে সেই বৈঠক। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, রাজ্য সরকারের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। ২২ ডিসেম্বরে ফের চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এই বিকাশ ভবনে বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী।

গত, শনিবার এই ধর্নার ১০০০তম দিনে ন্যাড়া হয়ে আন্দোলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর ভোগপুরের বাসিন্দা রাসমণি পাত্র। তারপরই দেখা যায় চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন মঞ্চে পৌঁছে যান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। শনিবারই কুণালের মধ্যস্থতায় স্থির হয় সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

সেইমতো শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ৭ প্রতিনিধির শুরু হয় বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান রামানুজ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। চাকরিপ্রার্থীদের অনুরোধে এই বৈঠকে ছিলেন কুণাল ঘোষও। সকলের উপস্থিতিতে প্রায় ঘন্টাদুয়েক বৈঠক চলে। আইনি জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েও বৈঠক সমর্থক বলে জানিয়েছে সব পক্ষ। ৫ হাজার ৫৭৮ জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ নিয়ে সরকারের কী আইন আছে, তা দেখার জন্য ল ডিপার্টমেন্টের এক আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে চাকরিপ্রার্থীদের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, সরকারও চাইছে যোগ্যরা চাকরি পাক। কেউ বঞ্চিত হোক তা চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কীভাবে যোগ্যদের চাকরি দেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই নিয়োগের ব্যাপারে যে আইনি জটিলতা আছে, তা কাটাতে হবে আগে। সেটাই করবে সরকার। বৈঠক শেষে ব্রাত্য বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ছিলেন। মহামান্য আদালত যেভাবে চাইবে, আমরা সেভাবে নিয়োগ দেব। এখন বিষয়টা আইনি কিছু জটিলতায় আটকে আছে। আশা করছি যে এই আইনি জটিলতা সত্বর কেটে যাবে।”

বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী মতিউর রহমান বলেন, “বৈঠক ইতিবাচক। আমরা জানতে চেয়েছিলাম, নিয়োগে বাধা কোথায়? কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরের মধ্যে একটা যোগাযোগের সমস্যা ছিল। আইনি জটিলতা কাটানোর চেষ্টা ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী আইনি জটিলতা কাটিয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে বলছেন। ৫৫৭৮ জনকে নিয়োগের ব্যবস্থা হবে। সরকার কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। আমরা আশাবাদী যে এই পথে চললে খুব দ্রুত নিয়োগ জট কেটে যাবে।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে মুন্ডিত মস্তক হওয়া রাসমনি পাত্র বলেন, “প্রত্যেকেই কোথায় জট, কোথায় সমস্যা? সেটা জানতে পেরেছি। আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত নিয়োগ হবে। আগামী ২২ তারিখ আমরা জানতে পারব কী ফল হল। আশা করছি, মাননীয়ার উদ্যোগে আমরা দ্রুত স্কুলে ফিরব। আমাদের জীবন বাঁচবে।” আরেক চাকরিপ্রার্থী পলাশ মণ্ডলের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যত জটিলতা আছে সব কাটিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার। স্কুল সার্ভিস কমিশন আর শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে এই জটিলতা কাটার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।”

চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষ। বৈঠক শেষে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বৈঠকে আন্দোলনকারীরা মন খুলে কথা বলেছেন। তবে বৈঠক এই প্রথম নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই উদ্যোগ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চান, অভিষেক চান জটিলতা কাটুক। কিছু জটিল জায়গা রয়েছে। আইনের মাধ্যমে কাটাতে হবে। ওঁরা দাবি রাখছিলেন, সরকারের কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল। আজকের বৈঠক ইতিবাচক, ফলপ্রসূ। আইনি জট কাটাতে সরকারের তরফে, এসএসসির তরফে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যায় জটিলতা কাটবে। কোথাও না কোথাও ভুল হয়েছিল। তার জন্য জটিলতা। অনেক ছেলেমেয়েকে ভুগতে হয়েছে। সমস্ত দিক সামলে সমাধানের রুপোলি রেখা বার করা হচ্ছে। অনেকেই চায়, ধরনা মঞ্চ থাকুক। জট পাকানোর জন্য কিছু শকুনি বসে থাকে। আমরা চাইছি চাকরি হোক। সকলে চাকরি পাক। দফায় দফায় আইনি জটিলতা কাটবে বলে আশাবাদী।”

 

Previous articleশিবরাজ অতীত, মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মোহন যাদব
Next articleবাণিজ্যিক গাড়ির উপর কঠোর নজরদারির সুফল, বেড়েছে জরিমানা আদায়ের পরিমাণ