জম্মু ও কাশ্মীরে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার সিদ্ধান্ত সাংবিধানিকভাবে বৈধ ছিল, সোমবার এমনটাই জানাল সর্বোচ্চ আদালত। আর সুপ্রিম কোর্টের এই ‘ঐতিহাসিক রায়দান’-এর দিনই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল জম্মু ও কাশ্মীরের আরও দু’টি বিল। প্রসঙ্গত গত ৬ ডিসেম্বর লোকসভায় পাস হয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল, ২০২৩ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৩। এদিন এই দুটি বিলকে অনুমোদন দিল রাজ্যসভাও।
জানা গেছে, সোমবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল ও জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল পাশ করেন। বিল পেশের পরই রাজ্যসভায় হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বিরোধীরা আপত্তি জানায়। তবে এই দুই বিল পাশ করাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি মোদি সরকারকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই এই বিল সংশোধনী বিল দু’টি পাশ হয় রাজ্যসভায়।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার করে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করেছিল। এ জন্য সংবিধান সংশোধন করেছিল কেন্দ্রের সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সংবিধান বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়েছিল। প্রায় চার বছর বাদে সেই মামলার রায় ঘোষণা করে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ। শীর্ষ আদালত বলেছে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট এই রাজ্যের জন্য নির্ধারিত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করার যে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নিয়েছিলেন, তা অসাংবিধানিক নয়। কারণ, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন সঞ্জয় কিষাণ কাউল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই ও সূর্যকান্ত।
সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত মামলার রায়ে জানিয়েছে, ভারতে অন্তর্ভুক্তির সময়েই জম্মু-কাশ্মীর তার সার্বভৌমত্বের অধিকার হারিয়েছিল। এদিনের রায়ে আরও বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। কত দ্রুত, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত কোনও সময়সীমা নির্দিষ্ট করেননি। তবে রায়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন করতে হবে।
তবে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠন করার জন্য আগস্টে লোকসভায় যে তিনটি নতুন বিল পেশ করা হয়েছিল তা সরকার প্রত্যাহার করছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশোধনী সহ নতুন বিলের খসড়া তৈরি করবে কেন্দ্র।
সংসদে নতুন করে পেশ করা হবে ভারতীয় দণ্ডসংহিতা। গত বাদল অধিবেশনে বিলটিকে লোকসভায় পেশ করা হয়। তারপরই বিলটির পর্যালোচনায় বিলটিকে নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত নভেম্বরে রিপোর্ট জমা পড়ে রাজ্যসভায়। চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই বিলটি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং তারপরেই বিলটিকে পাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার। যদিও সোমবার সন্ধ্যায় জানা যায় সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে, নতুন করে খসড়া তৈরি করা হবে এবং পুনরায় পেশ করা হবে লোকসভায়।