তদন্তের নামে নি.র্লজ্জ পক্ষপাত আর নজর ঘোরানোর চ.ক্রান্ত বিজেপির

অর্পিতা চৌধুরী

সংসদ-হামলার (attack in parliament) তদন্তের নামে কি পরিকল্পনামাফিক চক্রান্ত চলছে? তদন্তের গতিপ্রকৃতি আর বিজেপি (bjp) নেতাদের নানা মন্তব্যে তেমনই ইঙ্গিত। খোদ বিজেপি সাংসদের (bjp MP) সুপারিশে পাস নিয়ে দুই ব্যক্তি সংসদকক্ষে তাণ্ডব চালালো, অথচ খনও তদন্তের বৃত্ত থেকে বাইরে রাখা হয়েছে শাসক দলের ওই সাংসদকে! সংসদ হামলার তদন্তে মোদি সরকারের (modi government) এই নির্লজ্জ পক্ষপাত ঘিরে প্রশ্ন আর সংশয় জোরালো হচ্ছে। তদন্তের নামে ঘটনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন। নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে নিজেদের অস্বস্তি কাটাতে পুলিশি হেফাজতে থাকা ধৃতদের চাপ দিয়ে ইচ্ছেমতো বয়ান প্রচার হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? তদন্তের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ। ফলে পক্ষপাতের সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিজেপি সাংসদের পরিচিত ব্যক্তিরা সংসদের ভিতরে হামলা চালিয়েছে এমন প্রচার রাজনৈতিকভাবে মোদির দলের কাছে অস্বস্তির। ফলে মুখ বাঁচাতে তদন্তের অভিমুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকছে। আর তদন্তের আঁচ থেকে দলীয় সাংসদকে আড়াল করতে লোকসভার স্পিকার, সরকারপক্ষ ও তদন্তকারীদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাও নজর এড়াচ্ছে না।

ইতিমধ্যেই একাধিক বিরোধী (opposition) দলের নেতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপির বদলে কোনও বিরোধী দলের সাংসদের নাম উঠে এলে তাঁর অবস্থাও মহুয়া মৈত্রর মতো হত। সংসদ থেকে বহিষ্কার, গ্রেফতারি বা দেশদ্রোহের মামলা কিছুই তখন বাদ দিত না মোদি সরকার। এক্ষেত্রে হামলাকারীদের সঙ্গে যেহেতু বিজেপি সাংসদের যোগাযোগ স্পষ্ট এবং খাতায়কলমে সেই প্রমাণ যেহেতু অস্বীকার করার উপায় নেই, ফলে চাপে পড়েছে মোদি সরকার। বিজেপি সাংসদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে তদন্তকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং হামলাকারীদের সরকারবিরোধী স্লোগানকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। হামলার চারদিন পেরিয়ে গেলেও দিল্লি পুলিশের কাছে উত্তর নেই কীভাবে বিজেপি সাংসদের নামে পাস ইস্যু করে রংবোমা নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুই যুবক!

বিরোধীদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি তোলা হচ্ছে, এই হামলাকারীদের সঙ্গে বিজেপির মাইসোরের সাংসদের যোগ কীভাবে, তা নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হোক। গভীর যোগাযোগ না থাকলে কোনও সাংসদ নিজের নামে কোনও ব্যক্তিকে সংসদে ঢোকার পাস ইস্যু করবেন না। ফলে বিজেপি সাংসদের সঙ্গে ধৃতদের গভীর যোগাযোগ ও পরিচয় যে ছিল তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে সাংসদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টে অন্যান্য রাজ্য, সংগঠন বা বিদেশি যোগ খোঁজার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাস- রহস্যের সমাধান করতে মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহাকে (Pratap Simha) জিজ্ঞাসাবাদ করা যে চক্ষুলজ্জার খাতিরেও গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পারছেন তদন্তকারীরা। সমালোচনার চাপে পড়েই তাই দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বিজেপি সাংসদকে অন্তত একবার লোকদেখানো জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

লোকসভার (loksabha) ভিতরে ঢুকে আসা হামলাকারী সাগর শর্মার থেকে দর্শকাসনে বসার যে পাস পাওয়া গিয়েছে তা ইস্যু করেছিলেন মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহাই। এই আসনে বসার পাস ইস্যু করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র সাংসদদের। বিশেষ পরিচিত না হলে কীভাবে সেই পাস ইস্যু করেছিলেন তিনি? প্রকাশ্যে ধৃতদের চেনেন না বলে দাবি করা প্রতাপ সিমহা এই হানার পর স্পিকার ওম বিড়লাকে জানিয়েছেন উল্টো কথা। তিনি নাকি ধৃত সাগর শর্মার বাবার বারবার অনুরোধেই সেদিন তাঁকে একটি পাস ইস্যু করেন। সাংসদ স্পিকারের কাছে এই তথ্য দেওয়ার পরও বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা ইস্যুতে এখন মৌন রয়েছে এথিকস কমিটি। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর এবার দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সাংসদ প্রতাপ সিমহাকে। সেজন্য লোকসভার স্পিকারের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারা। যদিও রুটিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংসদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেবে, এমন আশা করছেন না কেউই। লোকসভা ভোটের আগে এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করার চাপ তো আছেই, সেইসঙ্গে বিজেপি সাংসদের নাম চলে আসার বাড়তি অস্বস্তি। দুই অস্বস্তি কাটাতে তদন্তে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে যে চাপানো হবে না তার নিশ্চয়তা নেই।

আরও পড়ুন- বড়দিনের পরই শুরু সোদপুর থেকে ব্যারাকপুুুর বিটি রোড সম্প্রসারণের কাজ

Previous articleপ্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে নজির গড়লেন অর্শদীপ
Next articleDawood Ibrahim: করাচির হাসপাতালে ভর্তি দাউদ? নতুন জল্পনায় উত্তাল নেট দুনিয়া