নজরে লোকসভা ভোট, লোক দেখানো খ্রিষ্টান তোষণের অভিযোগ মোদির বিরুদ্ধে

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে লোকদেখানো তোষণ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভোটের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে খ্রিস্টানদের ব্যবহার করার এই ফন্দি সমর্থনযোগ্য নয়। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মোদি সরকারের সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব নিয়ে সতর্ক করে দিলেন ক্রিশ্চান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু এবং সামাজিক কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি হিংসার বলি ক্রিশ্চানরা।

২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার তার বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান বহু খ্রিস্টান ধর্মগুরু, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বহু বিশিষ্ট মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের। খ্রিস্টানদের পবিত্রদিনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য, এদিন সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি এবং আরএসএস-এর উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্রিশ্চানরা। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি ক্যাথলিক চার্চের প্রেসিডেন্ট এ সি মাইকেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ক্যাথলিক নান মেরি স্কারিয়া, অল ইন্ডিয়া খ্রিস্টান কাউন্সিলের সেক্রেটারি-জেনারেল জন দয়াল এবং সমাজকর্মী শবনম হাশমি।

বাংলা-সহ গোটা দেশেই সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। অভিযোগ সেই অংশের সমর্থন বিশেষ পায় না বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায় যে বিজেপির লক্ষ্য, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একমাত্র খ্রিস্টান রাজ্য বলে পরিচিত কেরালা সফর এবং দিল্লির চার্চে প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শন নিয়ে। মোদি মন্ত্রিসভায় কোনও মুসলমান প্রতিনিধি না থাকলেও রয়েছেন বাংলা থেকে একমাত্র খ্রিশ্চান প্রতিনিধি জন বারলা। ২০২৪ এর আগে তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একমাত্র খ্রিস্টান মুখকে আসরে নামিয়েছে গেরুয়া শিবির, অভিযোগ বিরোধীদের।

এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লি ক্যাথলিক চার্চের প্রেসিডেন্ট এসি মাইকেল বলেন, টানা ৯ মাস ধরে জ্বলছে মণিপুর। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্বেগ দেখা যায়নি অথচ লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে দেশের বিভিন্ন জায়গার খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের নিয়ে ফটোসেশন করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। অভিযোগ ২০১৪ এর পর থেকে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৭ থেকে ৮টি চার্জ জ্বালানো হয়েছে। সারাদেশে ২২ থেকে ২৩ টি রাজ্যে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অত্যাচার চলছে। বিজেপিশাসিত ডবল ইঞ্জিনের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি হিংসার বলি খ্রিস্টান। ৭ হাজারেরও বেশি মণিপুরী মানুষ এই মুহূর্তে দিল্লি-এনসিআর-এ এসে আশ্রয় নিয়েছে। সে বিষয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করেননি প্রধানমন্ত্রী। এমনকি যারা বড়দিনের উৎসবে যোগদান করেছিলেন তারাও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাননি।

সমাজকর্মী শবনম হাশমি বলেন, আমরা বুলডোজার যুগে বাস করছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি অত্যাচারের পরও চুপ থাকেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী অথচ হঠাৎ করেই লোকসভা ভোটের আগে খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের ডেকে তিনি বলেন, আমি তাদের সমর্থন করি। ডিভাইড এবং রুলের নীতি নিয়ে চলছে বিজেপি। এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে অভিযোগ তোলা হয় মণিপুরের ঘটনায় কতজন মৃত কত চার্চ জালানো হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেন্দ্রের কাছে নেই। জন দয়াল বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ৬ বার কেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে কিন্তু বরাবরই বিভিন্ন অজুহাতে কেন্দ্র তা এড়িয়ে গিয়েছে। কর্ণাটক নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রকাশ্যে বজরং দলের সমর্থন করেছিলেন। উত্তর ভারতে সেই বজরং দলের হাতেই খ্রিস্টানদের সব থেকে বেশি নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে ২৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি যেটা করেছেন তা লোকদেখানো, ছল এবং ধোকা ছাড়া আর কিছুই নয়, অভিযোগ দিল্লি ক্যাথলিক চার্চ এর প্রেসিডেন্ট এ সি মাইকেলের।

Previous articleজানুয়ারির প্রথমেই নিয়োগ মামলার অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে পারে সিবিআই
Next articleবাংলায় বিজেপিকে রুখতে পারে তৃণমূল, দেশে লড়বে I.N.D.I.A. : মমতা