Thursday, August 28, 2025
উৎপল সিনহা

” ইক বরহামন নে কহা হ্যায়

কে ইয়ে সাল আচ্ছা হ্যায়”
” জুল্ম কি রাত বহুত জল্দ
ঢলেগি অব তো
আগ চুল্হো মে হর ইক
রোজ জ্বলে গি অব তো
ভুখ কে মারে কোই বাচ্চা
নেহি রোয়েগা
চৈন কি নিন্দ হর ইক শক্স
ইয়াহাঁ সোয়েগা … ”

আশা ও স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন । অন্তহীন আশাবাদের এই গান লিখেছেন জনাব মির্জা গালিব । এক ব্রাক্ষ্মণ বলেছেন এ বছরটা ভালো যাবে । পীড়নের দুঃসহ রাতের অবসান হবে । ঘরে ঘরে উনুন জ্বলবে , রান্না হবে । খিদের জ্বালায় কোনো শিশু কাঁদবে না । প্রতিটি মানুষ শান্তিতে ঘুমোনোর অবকাশ পাবে এবার । সবার জন্য শুভ হবে এই বছরটা । ভালো কাটবে এই বছর ।

গীত , বাদ্য ও নৃত্যের সুসম সমন্বয়ের নাম সঙ্গীত ।‌সঙ্গীতের সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই । আদিকাল থেকেই অর্থাৎ আধুনিক রূপ গ্রহণের বহু আগে থেকেই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গানবাজনা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে নি । সুরবাদ্য , তালবাদ্য এবং নানা ধরনের গান যুগে যুগেই মানুষের জীবন যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে। সুরের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সর্বজনবিদিত । এ নিয়ে চর্চারও কোনো শেষ নেই । সুর যেমন মুমূর্ষু অন্তরের অবিরাম শুশ্রূষা , ঠিক তেমনই গানের বাণী অর্থাৎ কথাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । শ্রোতার হৃদয়ে আলোড়ন তোলে অতি সহজেই । ভাঙা মনে নতুন আশার সঞ্চার করতে , দুমড়ে যাওয়া কোনঠাসা হৃদয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগাতে কথাপ্রধান গানের কোনো বিকল্প নেই । কথায় আছে , আশায় বাঁচে চাষা । হতাশ ও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা আরো জমাট অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় । মানুষ বারবার ব্যর্থ ও বিফল হওয়ার পরেও , এমনকি সর্বস্ব হারানোর পরেও ভালো কিছুর আশা ছাড়তে পারে না । স্বপ্নের যেমন মৃত্যু নেই , ঠিক তেমনই ‘ আশা ‘ যতই কুহকিনী ও ছলনাময়ী হোক না কেন , মানুষ শেষ পর্যন্ত আশাবাদী । দিন বদলের স্বপ্ন মানুষের রক্তে । তাই , যে গান মানুষকে নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠার প্রেরণা জোগায় , সেই গান শ্রোতারা বারবার শুনতে চান ।

” আঁধি নফরত কি ঢলেগি
না কহিঁ অব কে বরস
প্যার কি ফস্ল উগায়েগি
জমি অব কে বরস
হ্যায় ইয়কিন অব না কোই
শোর-শরাবা হোগা
জুল্ম হোগা না কহিঁ
খুন-খরাবা হোগা … ”

ঘৃণা , হিংসা ও বিদ্বেষের বিষঝড় এবার আর তছনছ করবে না জীবন । প্রেমের ফসলে উথলে উঠবে এবার মানবজমিন । চিৎকার , চেঁচামেচি , হাতাহাতি , লাঠালাঠি এবার আর হবে না , এই ভরসা আছে । খুন ,জখম , অত্যাচার এবার আর হবে না , এই ভরসা আছে ।
সভ্য সমাজ তো এমনই আশা করে । সাধারণ মানুষ তো চায় এমনই শান্তশীতল , প্রাণোচ্ছল জীবন । যেখানে থাকবে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পারস্পরিক নিবিড় আদান-প্রদান । একজন আরেকজনের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবে , কাঁধে রাখবে ভরসা ও আশ্বাসের বিশ্বস্ত হাত ।

” ঔস অউর ধুপ কে সদমে
ন সহেগা কোই
অব মেরে দেশ মে
বেঘর ন রহেগা কোই
নয়ে ওয়াদোঁ কা জো ডালা হ্যায়, বো জাল আচ্ছা হ্যায়
রহনুমাওঁ নে কহা হ্যায়
কে ইয়ে সাল আচ্ছা হ্যায়
দিল কে খুশ রখনে কো গালিব ইয়ে খয়াল
আচ্ছা হ্যায় ” ।

মৃদু অথবা তীব্র আঘাতে বিদীর্ণ হবে না কোনো হৃদয় । এবার আমাদের দেশে কেউ থাকবে না গৃহহারা । স্বপ্নসম নতুন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে এবার । প্রজ্ঞাবান দিশারীবৃন্দ আশা করছেন , এ বছরটা ভালো যাবে । গানের অন্তিমে এসে গালিব বলছেন , মন ভালো রাখার জন্য এমন ইতিবাচক ভাবনা খুবই উপাদেয় , খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ।

‘ মিরাজ ‘ অ্যালবামের এই গানটি গেয়েছেন জগজিৎ সিং । দুর্বোধ্য শব্দচয়নের জন্য তাঁর সমকালে নিন্দিত মির্জা গালিব কত সহজ শব্দবন্ধের সমাহারে এই গানটি লিখেছেন ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় । আজ থেকে ২০০ বছর আগে তৎকালীন সমাজের সমস্ত বিধিনিষেধ ও প্রচলিত ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে স্বপ্ন দেখার কবিতা লিখে গেছেন গালিব । তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সমাজচিন্তক । ছিলেন মনুষ্যত্বের পূজারী । তাঁর ধর্ম ছিল মানবধর্ম ।‌

আশা ও প্রত্যয়ের এমন অপূর্ব সমন্বয় ছাড়া কোনো গান কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠতে পারে না । নিজের সমকাল থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন গালিব । তিনি জানতেন তাঁর লেখাগুলি সময়কে অতিক্রম করে যাবে । হয়েছেও ঠিক তাই । আমাদের আলোচ্য গানটি প্রকৃতই উত্তরাধুনিক ।

সহজ-সুন্দর শব্দচয়ণে রচিত এই গানের অন্তর্বস্তু আশা ও আস্থায় পরিপূর্ণ । দু’শো বছর আগে লেখা কবিতা নিজের সুরে ও নিজস্ব শৈলীতে যখন গাইছেন শিল্পী জগজিৎ , তখন মনে হচ্ছে গানটি যেন কয়েক মুহূর্ত আগে লেখা । স্তোত্রের মতো , মন্ত্রের মতো , তীব্র দাবদাহে পরম আকাঙ্ক্ষিত প্রসাদবারীর মতো ঝরে ঝরে পড়ছে অমোঘ ও অপরূপ শব্দধারা , নৈরাশ্যের অতল অন্ধকারের বুক চিরে যা বেরিয়ে আসছে ভোরের স্নেহস্নিগ্ধ আলোর মতো । দুর্গত , হতাশ ও বিপন্ন জনসাধারণের জন্য যে আলো বয়ে আনছে একরাশ আশা ও আশ্বাসের দৃপ্ত প্রতিশ্রুতি ।

আরও পড়ুন- মার্চের শুরুতেই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ! বাংলায় কত দফায় নির্বাচন? বড় আপডেট কমিশনের

 

 

Related articles

সাত লুকের ‘বহুরূপ’ সোহমের, চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমকে দিলেন অভিনেতা

যা কখনও হয়নি তা এখন হবে, এবার হবে। সেলিব্রেটিদের রিল - রিয়েলের আলাদা রূপ আর লুক নিয়ে কম...

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...
Exit mobile version