জয়িতা মৌলিক

উত্তর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর। একের পর এক পদযাত্রা, প্রশাসিক সভা, পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার, মমতা ম্যাজিকে মাতল দুই দিনাজপুর। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) গিয়েছেন, সেখানেই প্রিয় ‘দিদি’কে দেখতে উচ্ছ্বাস দেখতে উপচে পড়েছে মানুষের ভিড়। লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এই জনোচ্ছ্বাস নিঃসন্দেহে তৃণমূলের ভরসা অনেকটা বাড়িয়ে দিল।

এদিন, চোপড়ায় পদযাত্রা দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সকাল ১১ টা নাগাদ উত্তরকন্যা থেকে বেরিয়ে শিলিগুড়ি থেকে হেলিকপ্টারে চোপড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। চোপড়ার অস্থায়ী হেলিপ্যাড থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকেই পদযাত্রা শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূল নেত্রীকে দেখার জন্য রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। শুধু তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক নন, ছিলেন অগণিত স্থানীয় মানুষ। তাঁদের হাতে ছিল রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পের নাম। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও সরব হন চোপড়াবাসী। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বাংলার মেয়ে-কে দেখতে উদ্বেল স্থানীয়রা। মহিলা কর্মী সমর্থক থেকে শিশু, যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তৃণমূল সভানেত্রী। পদযাত্রা শেষ করে পৌনে বারোটা নাগাদ ইসলামপুরের উদ্দেশে রওনা দেন।

ইসলামপুরের রোড শোতেও মমতা ম্যাজিক। পদযাত্রা শুরুর নির্ধারিত জায়গার প্রায় ৩০০ মিটার আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার দুধারে তাঁকে এক ঝলক দেখতে অসংখ্য মানুষের ভিড়। সবার সঙ্গে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কারও সঙ্গে হাত মেলান, কাউকে আবার আশীর্বাদ করলেন। ভিড়ের মধ্যে একটি শিশুকে কোলে তুলে নেন। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে একবার ছুঁয়ে দেখতে চান স্থানীয়রা। কাউকেই নিরাশ করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেখানেও হেঁটে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশলেন নেত্রী। জনসংযোগের চূড়ান্ত উদাহরণ।
চোপড়া থেকে বেলা ১২ টা নাগাদ ইসলামপুর রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সোয়া ১২টা নাগাদ চৌরঙ্গী মোড়ে বিশ্বকবির মূর্তিতে মাল্যদান করেই জনসংযোগ শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। রাস্তায় হাঁটার পথে এক সদ্যোজাতর দিকে চোখ যায় মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁকে কোলে নিয়ে আদর করেন, তাঁর নামকরণও করেন তিনি। ঘরের মেয়ের ক্যারিশমাতেই ম্যাজিক ছড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। পদযাত্রার মধ্যে পড়ুয়াদের লেখাপড়ার খোঁজ নিলেন, তাঁদের আবদার মিটিয়ে সেলফি তুললেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবসে ইসলামপুরের পদযাত্রাতে গান্ধী মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করতে দেখা যায় তাঁকে। পাশাপাশি ইসলামপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিতেও শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর ইসলামপুর হাই স্কুলের মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাড থেকেই রায়গঞ্জের দিকে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: বিজেপির নারী বিদ্বেষের প্রতিবাদে রাজপথে মহিলা তৃণমূলের ‘চলো পাল্টাই’

রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পা মেলালেন স্থানীয় মতুয়া সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ। উত্তরবঙ্গে সফরের শুরু থেকে রাজ্যের সব প্রান্তের সব সম্প্রদায়ের মানুষকে এক সুতোয় গাঁথার কাজ শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারই প্রতিফলন পাওয়া গেল জনসংযোগ যাত্রার সর্বত্র।

রায়গঞ্জের বকুলতলা মোড় থেকে রায়গঞ্জ স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রার শুরুতেই তিনি মাল্যদান করেন পঞ্চানন বর্মার মূর্তিতে। সেখানেই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে জনসংযোগ সারেন। তাঁর সঙ্গে আগের দুই জনসংযোগ যাত্রার মতোই ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেই সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও বিধায়ক গোলাম রব্বানি। রায়গঞ্জ বাজার এলাকায় শুরুতেই ঢাক বাজিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান স্থানীয় মানুষ। গান্ধীমূর্তিতে মাল্যদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেই সকলে চমকে দিয়ে ঢাকিদের থেকে কাঠি চেয়ে নিজেই ঢাক বাজান মমতা।

ছাত্র-যুব থেকে তৃণমূলকর্মী-সমর্থক- মুখ্যমন্ত্রীর ম্যাজিকে তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। মহিলাদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানেই থেমে ফ্রক পরা একটি ছোট্ট মেয়েকে আদর করে জড়িয়েও ধরেন মমতা। পদযাত্রার মধ্যেই থেমে অনুরাগীদের ছবি তোলার আবদারও মেটান। কোথাও বা দাঁড়িয়ে পড়ে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেন চিরাচরিত ভঙ্গিতে।

পথমধ্যে বিশেষভাবে সক্ষম এক ব্যক্তিকে দেখে এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। এভাবেই সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে প্রায় দু কিলোমিটার পথে হেঁটে রায়গঞ্জ স্টেডিয়ামে পৌঁছান তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী যখন স্টেডিয়ামে ঢুকছেন তখন যেন মনে হচ্ছে কোনও টিম স্টেডিয়ামে ঢুকছে। তেমনই ওয়েব ওঠে জনতার মধ্যে। একের পরে এক ঘোষণা করছেন মমতা। আর উপস্থিত জনতা করতালিতে ফেটে পড়ছে।

শেষে বালুরঘাট। মঞ্চের ব়্যাম্প দিয়ে যখন হাত নেড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন শুধু আওয়াজ- দিদি, দিদি। সঙ্গে খেলা হবে থেকে নানা স্লোগান। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁকে সমর্থন করেছে জনতা। ২ তারিখ থেকে বকেয়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় যে বিপুল জনসমর্থন হবে, তারই ইঙ্গিত দেয় এই সভাগুলি। কন্যাশ্রী থেকে যুবশ্রীর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নবীন প্রজন্মের মধ্যে তুমুল সাড়া। হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান যুবরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জনতা গর্জে ওঠে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে। সভা শেষে স্লোগান ওঠে ‘জয় বাংলা’।