সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার! দেড়শ বছরের রহস্যময় গবেষণায় আলো দেখালেন বাংলার মেয়ে

বঙ্গতনয়া বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায় (Bahata Ansumali Mukherjee) গত দশ বছর ধরে এই প্রহেলিকার সমাধান নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

নরম পাথর খোদাই করে তৈরি ছোট্ট একটা চৌকো টুকরো। তার মাঝে একটা জন্তুর ছবি এবং চারপাশে অনেকগুলো ‘অক্ষর’। একঝলকে দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। শুধু ধারণা করা যায় যে এটাই বোধহয় প্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন। তা ঠিক। এমন প্রায় চার হাজার সিলমোহর পাওয়া গিয়েছে সিন্ধু নদীর পাড় বরাবর তৈরি হওয়া বিভিন্ন নগরের অবশেষ থেকে। অতএব সিন্ধু সভ্যতার (Indus Civilization) শিলালিপি উদ্ধার যে ইতিহাসবিদ আর গবেষকদের কাছে সহজ হবে না তা আগাগোড়াই অনুমান করা যায়। তাই ১৫০ বছরের গবেষণা কোনও সঠিক দিশা দেখাতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গতনয়া বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায় (Bahata Ansumali Mukherjee) গত দশ বছর ধরে এই প্রহেলিকার সমাধান নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা এবার সভ্যতা আর ইতিহাসকে নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চলেছে। তাঁর রিসার্চ রিপোর্ট বলছে সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে সফল বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায় (Bahata Ansumali Mukherjee) ।

পেশায় সফটওয়ার বিশেষজ্ঞ বঙ্গকন্যা প্রায় ১০ বছর ধরে পড়ে রয়েছেন রহস্যময় ওই লিপির মর্ম উদ্ধারে।তিনি নাছোড়বান্দা, বিশ্বাস করেন অতীতের কথা না জানা সভ্যতার মূর্খামির পরিচয়। কিন্তু এতদিন ধরে যে রহস্যের সমাধান হয়নি তার দিশা পেলেন কী করে? আসলে এতগুলো বছর ধরে নানা গবেষক যে পদ্ধতিতে পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেছেন, বহতার কাজ তাঁদের থেকে একেবারে ভিন্ন পথে এগিয়েছে। সিন্ধু নদীর পাড় বরাবর যে অবশেষ উদ্ধার হয়েছে এর মধ্যে হরপ্পা এবং মহেনজো-দড়োই প্রধান। সিলমোহরের লেখা বা অক্ষরের অর্থ নিয়ে বিশ্বের তাবড় তাবড় প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং এপিগ্রাফারের দল একাধিক দাবি করলেও তা ধোপে টেকেনি। উঠেছে আরও প্রশ্ন। তবে সিন্ধুসভ্যতার (Indus Script) লিপি নিয়ে বাঙালি মেয়ের ছ’টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনটে প্রবন্ধ বেরিয়েছে লন্ডনের ‘নেচার’ গোষ্ঠীর জার্নালে আর বাকি তিনটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সেমিনারের পিয়ার রিভিউ প্রোসিডিংসে।

এই মর্মদ্ধার নিয়ে বহতা জানান, যে সিন্ধুলিপিতে লেখা বার্তাগুলো লোগোগ্রাফিক লেখা। এতদিন ধরে প্রায় ৯০ শতাংশ গবেষকই লিপিগুলোকে রেবাস পদ্ধতিতে পড়ার চেষ্টা করেছেন। অতীতে পদ্মশ্রী ইরাভতম মহাদেবনের মতো পণ্ডিতও এই লিপিকে লোগোগ্রাফিক বলেই মনে করেছেন। আবার, অন্য দিকে আসকো পারপোলার মতো বিশ্ববরেণ্য ভারততত্ত্ববিদ ‘রেবাস পদ্ধতি’ ব্যবহার করেন এই লিপির পাঠোদ্ধারের জন্য। বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ওখানকার লিপি উৎকীর্ণ সিলমোহর আর মাটির-ট্যাবলেটগুলো আজকের দিনের স্ট্যাম্প, মুদ্রা, টোকেন ইত্যাদির সঙ্গে তুলনীয়। মুদ্রা বা স্ট্যাম্পের বিশেষ বিশেষ অংশে যেমন বিশেষ বিশেষ তথ্য দেওয়া থাকে, ঠিক সে রকমই এগুলোর বিশেষ বিশেষ স্থানে বিশেষ ধরনের বা শ্রেণির শব্দচিত্র থাকে, যারা ফাংশনালি এক রকমের। এদের মধ্যে ‘ডকুমেন্ট স্পেসিফিক সিনট্যাক্স’ আর ‘লিঙ্গুইস্টিক সিনট্যাক্স’, এই দু’রকমের সিনট্যাক্স বা গঠন পদ্ধতিই দেখা যায়।’ বাঙালি গবেষকের ধারণা যে উদ্ধার হওয়া সিলমোহরে ব্যবহৃত জন্তুর ছবি আসলে কোনও বিজ়নেস হাউজ় বা গিল্ডের চিহ্ন। কিন্তু সফটওয়ার বিশেষজ্ঞ হয়ে হঠাৎ এমন কাজে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বহতা উল্লেখ করেন মাইকেল ভেন্ট্রিসের প্রসঙ্গ। যিনি স্থপতি হয়েও গ্রিক লিনিয়ার-বি লিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন। বাঙালি মেয়ের কথায় , এই লিপি অনেকটা ধাঁধার মতো।এর উত্তর খুঁজে পেতে ফোনেটিক্স, লিঙ্গুইস্টিকস, পুরাতত্ত্ব, ইতিহাস, যেমন প্রয়োজন তেমনই গণিত, প্রাচীন সভ্যতার অর্থনীতি, কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজের মতো আরও একাধিক বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়। সেটাই অনেক বেশি করে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।


Previous articleইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কি পরের দুই টেস্টে খেলবেন কোহলি? এল আপডেট
Next articleআদালতে ফের জয় কুণালের, সারদার একটি মামলায় নির্দোষ ঘোষণা এমপি-এমএলএ কোর্টে