আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক। এরকম বাজেট এর আগে কবে দেখেছে বাংলা মনে করতে পারছেন না তাবড় অর্থনীতিবিদরাও। মহিলা থেকে আদিবাসী, ছাত্র-যুব থেকে তাঁত শিল্পী, পরিযায়ী শ্রমিক থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ার সকলের জন্যই কিছু না কিছু উপহার রইল। লোকসভা ভোটের আগে আগাগোড়া চমকে মোড়া রাজ্য বাজেট (State Budget) পেশ করলেন রাতের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিপুল অর্থ প্রাপ্য রাজ্যের। তা স্বত্তেও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাজেটে সাধারণ, গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের দিকে তাকিয়ে একাধিক নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন চন্দ্রিমা।

বৃহস্পতিবার ২০২৪- ২৫ আর্থিক বছরের জন্য ৭ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। বাজেটের মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বেশকিছু নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। পুরনো বেশকিছু প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধির কথাও জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারী কর্মীদের আরও ৪ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মে মাস থেকে তা কার্যকর করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণা মতো একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ করে যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের বকেয়া ভাতা দিতে বাজেটে ৩ হাজার ৭শো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজের বিকল্প হিসেবে বাজেটে ৫০ দিনের কাজ সুনিশ্চিত করতে নতুন কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরের মে মাস থেকে তা কার্যকর হবে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকাভুক্তদের কেন্দ্রীয় সরকার আগামী একমাসের মধ্যে প্রাপ্য টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই তাদের বাড়ি তৈরির টাকা দেবে বলে বাজেট ভাষণে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলার ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাজেট, শুভেন্দুর ল্যাজে পটকা ফাটানোর বাজেট: কুণাল ঘোষ

সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশদের মাসিক পারিশ্রমিক ১ হাজার টাকাবাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাদের অবসরকালীন সুবিধাও বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

চুক্তি ভিত্তিক রাজ্য সরকারি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন যথাক্রমে ৩ হাজার ও সাড়ে তিন হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

রাজ্য বাজেটে (State Budget) মিড ডে মিলে রাঁধুনি ও সহায়কদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁরা প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পাবেন।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, রাজ্যের দরিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা ৪৯ শতাংশ কমেছে। ১ কোটি ২৭লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার ওপরে উঠেছেন। রাজ্যের রাজস্ব আদায় গত আর্থিক বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী সমুদ্র উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্র সাথী নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকে। রাজ্য সরকার সমুদ্রসাথী প্রকল্পের অধীনে এই দুই মাসে ৫ হাজার টাকা করে মৎস্যজীবীদের প্রদান করবে। এই খাতে ২শো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। উপকৃত হবেন প্রায় ২ লক্ষ মৎস্যজীবী।

হ্যান্ডলুম এবং খাদিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁত শিল্পীদের জন্য বাজেটে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই খাতে বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫শো কোটি টাকা। ৪ লক্ষ তাঁত শিল্পী এতে উপকৃত হবেন।

তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় এবার থেকে একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারাও মোবাইল ও ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে পাবেন।

পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। নিজেদের কর্মস্থলেই এর সুবিধা পাবেন তাঁরা। এতে ২৮ লক্ষের বেশি পরিযায়ী উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন চন্দ্রিমা।

সব মিলিয়ে এক কথায় শুধু জনমুখী বাজেট নয়, বাংলার আপামর জনসাধারণ কোনো না কোনো ভাবে এই বাজেট থেকে উপকৃত হবেন।
