সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার শিবু হাজরা! শান্তি ফেরানোর পক্ষে সওয়াল রাজ্য পুলিশের ডিজির

রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফ জানান, সন্দেশখালির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেশখালির এক মহিলার গোপন জবানবন্দীর ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

সন্দেশখালিতে (Sandeskhali) স্বাভাবিক জনজীবন ফেরানোই লক্ষ্য। আর সেকারণেই অভিযোগ পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তৎপর রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police)। শনিবার সন্দেশখালিকাণ্ডে অভিযুক্ত উত্তম সিং ও শিবপ্রসাদ হাজরার বিরুদ্ধে মামলায় গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ হওয়ার পরেই ন্যাজাট থেকে শিবুকে গ্রেফতার (Arrest) করল পুলিশ। রবিবারই তাঁকে বসিরহাট আদালতে পেশ করা হবে বলে খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, এক মহিলা আদালতে পুলিশের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এবার উত্তম ও শিবুর বিরুদ্ধে মামলায় যোগ করা হল গণধর্ষণের ধারা। এদিকে শনিবারই উত্তমকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত তাঁকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে ধৃত বিজেপি নেতা বিকাশ সিং-কেও এদিন ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তবে উত্তম গ্রেফতার হলেও এতদিন অধরা ছিল শিবপ্রসাদ। শনিবার সন্ধেয় তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফ জানান, সন্দেশখালির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেশখালির এক মহিলার গোপন জবানবন্দীর ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রাজীব আরও জানান, ৬ ফেব্রুয়ারির আগে আমরা এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেতেই তৎক্ষণাৎ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। তবে এদিন শিবপ্রসাদ হাজরা গ্রেফতার হতেই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, পুলিশ রাজধর্ম পালন করছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ধারা যোগ করেছে। কিন্তু এতে প্রমাণ হয় না মহিলাদের উপর লাগাতার গণধর্ষণ হয়েছে এবং চাপে পড়ে পুলিশ ধারা যোগ করেছে।

রাজীব কুমার এদিন আরও জানান, সন্দেশখালির যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, রাজ্য পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই একটি দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক মহিলার সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করবেন। তবে কোনও অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এদিন পরিষ্কার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। পাশাপাশি বিরোধীদের লাগাতার ১৪৪ ধারা জারি প্রসঙ্গে রাজীবের সাফ জবাব, শান্তি ব্জায় রাখতেই সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনা করে তবেই পুলিশ ধীরে ধীরে ১৪৪ ধারা নিয়ন্ত্রণ করবে বলেও সাফ জানিয়েছেন রাজীব। এছাড়া তিনি জানান, রাজ্য পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। শেখ শাহজাহানকে কেন ইডি গ্রেফতার করল না তা নিয়েও প্রশ্ন তলেন তিনি।

ঘটনা প্রসঙ্গে শনিবার বসিরহাট মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী অরুণ পাল জানান, সন্দেশখালির এক নির্যাতিতার অভিযোগ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দার তাঁকে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর গোপন জবানবন্দি বসিরহাট মহকুমা আদালতে নেওয়া হয়। সেই গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতেই মামলায় দুটো ধারা যুক্ত হয়েছে। ৩৭৬ (ডি) এবং ৩০৭ গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তমের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলায় ৩৭৬(ডি) এবং ৫১১ নম্বর ধারা রয়েছে। ওই মামলাতেই উত্তমকে নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। গত সপ্তাহেই সন্দেশখালিতে দফায় দফায় হিংসা ছড়ানোর ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল উত্তম ও শিবপ্রসাদের। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।

এদিকে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান জানান, সন্দেশখালি এখন নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বলেই ধারা যোগ করা হয়েছে। গোটা বিষয়টিই তদন্ত করে দেখা হবে। কোনোরকম অভিযোগ থাকলে স্থানীয়দের পুলিশের কাছে এসে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার আরও জানান, তদন্ত চলছে। সবদিক খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করা হবে।

Previous articleসন্দেশখালিকাণ্ড: পুলিশ রাজধর্ম পালন করছে, গণধ.র্ষণের ধারা যোগ মানেই, ঘটনা প্রমাণিত নয়: কুণাল
Next articleএক গোলে পিছিয়ে থেকেও নর্থইস্টকে ৪-২ গোলে হারাল মোহনবাগান