পরিবারবাদ মানেন না। সেই কারণে নিজের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Swapan Banerjee) ওরফে বাবুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পিছুপা হননি তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার, সাংবাদিক বৈঠকে নিজের কড়া অবস্থান জানিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর সেটা জানার মুহূর্তের মধ্যেই সুর নরম বাবুনের। রীতিমতো স্যোশাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে বাবুন জানিয়ে দেন, তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন এটা ফেক নিউজ। তৃণমূলের সঙ্গে, নেত্রীর সঙ্গেই থাকবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সভানেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাবুনের পরিচয় যেন তাঁর ভাই বলে না দেওয়া হয়। আর ভিডিওর প্রথমেই নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বলেই পরিচয় দেন স্বপন ওরফে বাবুন।
এদি সকাল থেকেই সংবাদ মাধ্যম তোলপাড়, টিকিট না পেয়ে নাকি বিজেপির (BJP) সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়বেন বাবুন। ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Swapan Banerjee) ওরফে বাবুনের সম্পর্কে এই খবর কানে যাওয়ার পরেই সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার, শিলিগুড়ির সাংবাদিক বৈঠকে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বাবুনের সঙ্গে তাঁর বা তাঁর পরিবারের আর কোনও সম্পর্ক নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমি যে দিন থেকে দল করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা মাটি মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ।’’
মমতার (Mamata Banerjee) কথায়, ‘‘আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’’
একই সঙ্গে মমতা জানিয়ে দেন, তিনি পরিবারবাদে বিশ্বাস করেন না। সেই কারণেই নিজের রক্তের সম্পর্কের লোকেদের নয়, যাঁরা কাজ করেন তাঁদের টিকিট দেন। এই ঘটনায় সেই কথা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।
বাবুনের অনেক কাজ নিয়েই যে তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষুব্ধ সে কথাও গোপন করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ‘‘ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি।’’ মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘যে যেখানে খুশি যেতে পারে। স্বাধীন ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু হাওড়া সদরে তৃণমূলের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নয়।’’ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর দায়িত্ব তৃণমূল নেত-কর্মীদের আরও বেড়ে গেল বলে বার্তা দেন নেত্রী।
বাবুন সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিবারের কথাও জানান মমতা। বলেন, “অভিষেককে বলছিলাম যখন বাবা মারা যায় ওর বয়স তখন আড়াই বছর। আমি ৪৫ টাকা মাইনে পেতাম দুধের ডিপোয় কাজ করে। বাকি সবাইকে মানুষ করেছি। তখন থেকে রাজনীতি করতাম বলেই হয়তো ওকে মানুষ করতে পারিনি”।
দিদি মমতা একথা বলার পরেই, সংবাদ মাধ্যমে একেবারে ইউ টার্ন বাবুনের। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তিনি বলেন, দিদি যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। সেটাকে আমি আশীর্বাদ হিসেবে নিচ্ছে। হাওড়া সদরে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকেও তিনি সরে এসেছেন বলেও জানান বাবুন।