আদানি-আম্বানিকে ছাপিয়ে গেলেন, সর্বাধিক ইলেক্টোরাল বন্ড ক্রেতা স্যান্টিয়াগো আসলে কে?

আয়কর ফাঁকি, লোক ঠকানো, আর্থিক তছরুপ মামলায় নাম জড়ায় ফিউচার গেমিং সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেডের। যদিও এর মধ্যেই ২০০৮ সালে কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার ও তাঁদের মুখপত্রের জন্য আর্থিক অনুদান দেন মার্টিন।

ইলেক্টোরাল বন্ডের তথ্য সামনে আসতেই জাতীয় রাজনীতিতে সবার ওপরে উঠে এল এক অখ্যাত ব্যবসায়ীর নাম। যারা ভেবেছিলেন আদানি, আম্বানি গোষ্ঠীর থেকে পাওয়া টাকার হিসাব পাওয়া যাবে, তাঁদের স্বপ্নে জল ঢেলে সবার ওপরে উঠে এল স্যান্টিয়াগো মার্টিনের (Santiago Martin) নাম। তাঁরই ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এসবিআই (SBI)-এর পেশ করা তালিকায় সবার ওপরে। রাজনৈতিক দলকে সবথেকে বেশি অর্থ দিয়ে সাহায্য করা ব্যবসায়ী কেন দেশের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি সক্রিয়? এত বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলের পাশে দাঁড়াতে পারার পিছনে কোন শক্তি কাজ করেছে। কখনও সিপিআইএম (CPIM), কখনও ডিএমকে (DMK) আর সবশেষে বিজেপির হাত বদল করতে থাকা ব্যবসায়ীর খুঁটির জোর কীভাবে তৈরি হল, তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা।

এসবের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল সময়ের সঙ্গে কোন দল কখন ক্ষমতাসীন হবে সেই দূরদৃষ্টিই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল স্যান্টিয়াগোর যে সফর, তা যে একসময় রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাবে তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে লটারির জগতে পা দেন মার্টিন। সেই সূত্রে লটারি ক্রেতা ও বিক্রেতা চক্রের সঙ্গে তাঁর ব্যাপক মেলামেশা ও সদ্ভাব শুরু হয়। এরপরই কোয়েম্বাটুর শহরকে কেন্দ্র করে মার্টিন লটারি টিকিটস-এর ব্যবসা শুরু করেন। কেরালা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, বাংলা থেকে সিকিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে লটারির ব্যবসা।

প্রথম থেকেই উচ্চাকাঙ্খী মার্টিন দেশে কেরালা থেকে সিকিম পর্যন্ত তাঁর ব্যবসার জাল ফেলেছিলেন। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল দেশের বাইরের বাজার ধরা। অবিশ্বাস্য হলেও মার্টিন গ্রুপ অফ কম্পানিজের দুটি শাখা ছিল মার্টিন মায়ানমার ও মার্টিন ইয়াংগন তৈরি হয়। তাঁর সংস্থা ওয়ার্ল্ড লটারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার কৃতিত্বও অর্জন করেছিল। এরপরই লটারি কিং (Lottery King) শুধুমাত্র লটারিতে আটকে না থেকে নির্মাণ ব্যবসা, পোশাক, আপ্যায়ন সংস্থার মতো ব্যবসাতেও লগ্নী শুরু করেন। কিন্তু যত উপরে উঠতে থাকেন স্যান্টিয়াগো, তত বাড়তে থাকে দুর্নীতি। আর তার থেকে রেহাই পেতেই শুরু হয় তাঁর রাজনীতির আশ্রয় নেওয়া।

আয়কর ফাঁকি, লোক ঠকানো, আর্থিক তছরুপ মামলায় নাম জড়ায় ফিউচার গেমিং সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেডের। যদিও এর মধ্যেই ২০০৮ সালে কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার ও তাঁদের মুখপত্রের জন্য আর্থিক অনুদান দেন মার্টিন। পরে অচ্যুতানন্দ ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য সেই অনুদান ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তল্পি গুটিয়ে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র শরণাপন্ন হন। পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক দলেও সামিল করতে শুরু করেন। এরপরই ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির মঞ্চে দেখা যায় তাঁর স্ত্রী লিমা রোজকে। এত যোগাযোগের পরও তদন্ত এড়াতে পারেননি তিনি। ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বারবার আয়কর বিভাগ ও ইডি-র তল্লাশি অভিযান চলে তাঁর দফতরগুলিতে। তবে ২০২৩-এ মার্টিনের ছেলে চার্লস তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সঙ্গে বৈঠকের পর সুদিন ফিরতে থাকে ফিউচার গেমিংয়ের। আর তারপরেও দেখা যায় ইলেক্টোরাল বন্ডে তাঁদের কোটি কোটির লেনদেন। এসবিআই-এর পক্ষ থেকে যদিও ইলেক্টোরাল বন্ডের (Electoral Bond) পুরো তথ্য পেশ করা হয়নি, তথ্য সামনে আসলে কোন ঝুলিতে লটারি কিং-এর টাকা ঢুকেছে তা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

Previous articleবিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচ, আফগানদের বিরুদ্ধে ২৫ সদস্যের দল ঘোষনা ভারতের
Next articleতল্লাশি চালিয়ে শহরের বুকে ৫৪ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত পুলিশের!