Friday, November 28, 2025

হাঁসফাঁস গরমে ফের মন টানছে আন্টার্কটিকা, যেন অন্য এক জগৎ

Date:

Share post:


অর্ণব চৌধুরী, অধ্যাপক

আধ মিনিট লেগেছিল সিদ্ধান্ত নিতে। আর এখন মনে হয় জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত এই আন্টার্কটিকা ভ্রমণে রাজি হওয়া। আমি কলেজে পড়াই। আর বেড়াই। আমার কলেজের লাইব্রেরিয়ানও ভ্রমণ পিপাসু। তিনিই একদিন কলেজে জিজ্ঞাসা করলেন, আন্টার্কটিকা (Antarctica) যাবেন? মাত্র আধ মিনিট ভেবেই উত্তর ছিল, হ্যাঁ। আর সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক সেটা বুঝলাম ওখানে গিয়ে। যা দেখেছি, তা ঠিক যেন রূপকথা। সাদা হিমশৈল ভেসে চলেছে জলে। কোথাও তার উপর অলস আড়মোড়া ভাঙছে সিল। শান্ত পেঙ্গুইনরা কালো সামলা গায়ে এখনই বোধহয় ছুটবে কোর্ট রুমে! সমুদ্রে মাঝে মাঝেই মাথা তুলে শ্বাস নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তিমি। একটা অন্য এক জগৎ সেটা।

এখন প্রতিদিন গলদগর্ম হয়ে কলেজে আসার সময় যেন আরও বেশি করে মনে পড়ে সদ্য বেড়িয়ে আসা আন্টার্কটিকার (Antarctica) কথা। কলকাতা থেকে মোট ৮জন গিয়েছিলাম। তার মধ্যে ৪জন আমার সহকর্মী। আর বাকি ৪জন তাঁদের পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ ও মহিলার বয়স ৭৫ ও ৭২। তবে, যাতায়াত মিলিয়ে ১৬দিনের ট্যুরে তাঁদের উৎসাহ কোনও অংশে কম ছিল না। আমরা প্রথমে যাই দিল্লি। সেখানে থেকে থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে আদ্দিস আবাবা। সেখানে পরের বিমানের জন্য সাড়ে ৩ ঘণ্টার অপেক্ষা। আদ্দিস আবাবা থেকে ব্রাজিলের সাউ পাওলোতে থেমে সেখান থেকে বুয়েনস আয়ার্স। সেখানে একরাত থাকি আমরা। এরপরে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে নেয় যে ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে গিয়েছিলাম তারা।

এই ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় গত মে মাসে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই আমায় বেশি টানে। সেই কারণে আন্টার্কটিকা যাওয়ার প্রস্তাবে আধ মিনিটে রাজি হয়ে যাই। এটাই আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা, আর সেই গন্তব্য আন্টার্টিকা- এটা ভেবে প্রথম থেকেই একটা রোমাঞ্চ ছিল। আন্টার্কটিকা নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করলাম। প্রস্তুতি বলতে গরম জামা আমার ছিল কারণ হিমালয় রেঞ্জে ঘোরা আমার অভ্যাস। তবে, ওখানে যাওয়ার জন্য ওয়াটার প্রুফ গরম পোশাক কিনতে হয়েছিল কিছু। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা যেতে গেলে ইয়েলো ফিভার ভ্যাকসিন নিতে হয়। সেটা নিয়েছি আরজি কর হাসপাতাল থেকে। আর বলা হয়েছিল ওষুধ নিতে। কারণ ড্রেক প্যাসেজের ক্রসিং- অর্থাৎ অ্যাটল্যান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগস্থলে জাহাজে দুলুনিতে কষ্ট হতে পারে। সেই কারণেই ওষুধ বা কানের পিছনে প্যাচ লাগাতে বলে। তবে, আমি তেমন ওষুধ নিইনি। রোজকার যা খাই সেগুলিই নিয়ে গিয়েছিলাম।

১০ দিন-রাত শুধু সমুদ্রে থাকা। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা। চারিদিকে শুধু জলরাশি। নবকুমারের মতো বলতে ইচ্ছে করছিল, “আহা কী দেখিলামজন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না”। দূর থেকে হিমশৈল ভেসে যাচ্ছে দেখে প্রথমেই মোহিত হয়ে গেলাম। অত গভীর সমুদ্রে কিছু পাখি উড়ছে জাহাজের পাশে। কোথায় ডানা জুড়বে তারা! কোথাও তো দ্বীপ নেই। মাঝে মাঝে ভুস করে ভেসে উঠছে হাম্পব্যাক তিমি। আবার ভুস করে ডুবে যাচ্ছে। জাহাজের ভিতরে সায়েন্স সেন্টারে সেমিনার হত রোজ। সেমিনারে বলা হয় কী কী দেখা যাবে। আন্টার্কটিকার ইতিহাস ও ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হত। জাহাজের ভিতরেই একটা ছোটো মিউজিয়াম ছিল। ছিল লাইব্রেরি। সেখানে আমার পছন্দের বিষয়ে নিয়ে বেশ কিছু বই পড়ি।

খাওয়ার বিষয়টিও বেশ আলাদা। সবই কন্টিনেনটাল ডিশ। অন্তত ১০০ রকমের পদ সাজানো থাকত। প্রচুর ফল, কেক জাতীয় খাবার থাকত। ভারতীয় ডিশ ছিল না অবশ্য। মাংসের পদগুলি খেতে বেশ ভালো। তবে, বাঙালির রসনায় সিদ্ধ বা কাঁচা মাছের স্বাদ খুব একটা সুস্বাদু ঠেকেনি।

যাওয়ার আগে যে ঠাণ্ডার ভয় দেখিয়ে ছিল সবাই, তত ঠাণ্ডা লাগেনি। ঠাণ্ডা ছিল, তবে সেটা অসহ্য নয়। হাওয়া দিলে একটু কষ্টকর হত। ফ্রিডটজফ নানসেন নামে জাহাজে আমরা প্রধানত তিনটি দ্বীপে অবতরণ করি- নেকো হারবার, অর্ন হারবার ও মিকেলসেন। শুধু ডিসেপশনে নামতে পারিনি খারাপ আবহাওয়ার কারণে।

এবার আসি তাদের কথায়, যাদের দেখতে যাওয়া। পেঙ্গুইন, সিল, তিমি। দুই ধরনের পেঙ্গুইন ছিল সেখানে- জেন্টু এবং চিনস্ট্র্যাপ। দুই ধরনের সিল- চিতাবাঘ এবং পশম। তিমি বেশিরভাগই হাম্পব্যাক। পেঙ্গুইনকে আমার একেবারের বন্ধু বলে মনে হয়েছে। ক্যামেরা দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়েছে। আর কদিন থাকলে হয়ত সেল্ফিও তুলতে দিত!

বেড়ানোর খরচ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬লাখ টাকা। আর আন্টার্কটিকা শুনেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা জীবনে একবার যাওয়ার ডেস্টিনেশন হতেই পারে। কারণ, একটু খরচ সাপেক্ষ হলেও, ওই যে বললাম, যেন রূপকথা, অন্য জগত।




spot_img

Related articles

সমস্যা মিটিয়ে বিয়ে করবেন স্মৃতি-পলাশ? বড় ঘোষণা সুরকারের মায়ের

বিগত কয়েক দিন ধরেই স্মৃতি মান্ধানা-পলাশ মুচ্ছলের(Palash muchhal-Smriti Mandhana) সম্পর্ক নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। বিয়ের দিনেই ঘটেছে বিপর্যয়। তারপর...

একনজরে আজ পেট্রোল-ডিজেলের দাম 

২৮ নভেম্বর (শুক্রবার), ২০২৫ কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১০৫.৪১ টাকা, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৯২.০২ টাকা দিল্লিতে...

ইচ্ছা থাকলেই উচ্চশিক্ষা: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে পড়ূয়াদের সংখ্যা পেরলো ১ লক্ষ! খুশি মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী

আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের পাশে দাড়িয়েছিল বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(mamata banarjee) সরকার। উচ্চশিক্ষায় সহায়ক হওয়ার লক্ষ্যে তৃতীয়বার ২০২১ সালে...

এসআইআরের চাপে হার্ট অ্যাটাক, কাজ করতে করতে মৃত্যু মুর্শিদাবাদের বিএলও-র 

রাজ্যে এসআইআরের (SIR) বলি আরও এক। স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের কাজের অত্যাধিক চাপ সহ্য করতে না পেরে এবার হার্ট...