অসমে উৎসবে টাকা ছাড়ছে, বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতদের বাড়ি বানানোর অনুমতি নেই! কমিশনকে ‘বাংলা বিরোধী’ কটাক্ষ অভিষেকের

আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীনই অসমে বিহু উৎসব পালনের জন্য টাকা দেওয়ার অনুমতি কমিশন দিয়েছে। কিন্তু জলপাইগুড়িতে ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার অনুমতি কমিশন দিচ্ছে না রাজ্যকে! তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে রাজভবন থেকে বেরিয়ে এমনটাই জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। পাশাপাশি কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘না ঘর দেব, না ঘর দিতে দেব, এটাই মোদিজির নতুন স্লোগান’।

এদিন রাজভবন থেকে বেরিয়ে অভিষেক জানান, ‘দুর্ভাগ্যবশত, দুপুরে কমিশনের তরফে রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ, যাঁদের ঘর মাটিতে মিশে গিয়েছে, তাঁদের বাড়ি তৈরির টাকা রাজ্য দিতে চাইলেও কমিশন অনুমতি দেবে না। আমরা টাকা দিচ্ছি, তাও বাড়ি তৈরির অনুমতি দিচ্ছে না কমিশন। আপনি বাড়ির টাকা দেবেন না, রাজ্য সরকার টাকা দিলেও অনুমতি দিচ্ছে না। এর পরই অসমের প্রসঙ্গ টানেন অভিষেক। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, ‘অসমে বিহু পালনের জন্য গত পরশু রাজ্যের ২০০০টি কমিটিকে কমিশন দেড় লক্ষ টাকা করে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন উৎসব পালনের জন্য এই টাকা দেওয়া হল। উৎসব নিয়ে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলার যখন প্রয়োজন, তখন কমিশন অনুমতি দিল না। কারণ বাংলায় বিজেপি সরকার নেই। অসমে রয়েছে। এর থেকেই প্রমাণিত, বিজেপি বাংলাবিরোধী।’

অভিষেক আরও বলেন, ‘রাজ্যকে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া যাবে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামতির জন্য টাকা দেওয়া যাবে। অল্প ক্ষতি হলে পাঁচ হাজার টাকা এবং বেশি ক্ষতি হলে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, এরা বাংলা বিরোধী নয় তো কারা বিরোধী?’ অভিষেক বলেন, আগামী পরশু জলপাইগুড়ি যাচ্ছেন তিনি। সভার পর ক্ষতিগ্রস্ত ১৬০০ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। পাশাপাশি দিল্লিতে যে প্রতিনিধি দল কমিশনের অফিসে গিয়েছিল, তাঁরাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন। দরকার পড়লে রাষ্ট্রপতির কাছেও যাবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক।

রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, সিভি আনন্দ বোস তাঁদের জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি মতোই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফোন ধরেননি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। বাকি দুই কমিশনারের সঙ্গে রাজ্যপালের কথা হয়েছে। বাংলার সমস্যার কথা তিনি তাঁদের জানিয়েওছেন। কিন্তু তার পরেও বুধবার দুপুরে কমিশন রাজ্য সরকারকে জলপাইগুড়িতে বাড়ি বানানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অভিষেকের কথায়, বাংলার রাজ্যপাল বলেই হয়তো ফোন ধরেননি কমিশনার। বাংলার দাবিদাওয়া তুলতে পারেন ভেবেই ফোন ধরেননি।

তাঁর নিশানায় এদিন উঠে অমিত শাহের নামও। বুধবার বালুরঘাটে সভা ছিল অমিত শাহের। অভিষেককে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি দূরের কথা, বাংলার জায়গার নামও ঠিকঠাক জানেন না অমিত শাহ। অমিত শাহ না হয় বালুরঘাটের নাম ঠিকঠাক জানেন না, সুকান্ত মজুমদার তো ঠিক বলে দিতে পারতেন। বলেননি কারণ বললেই চাকরি চলে যাবে।’

কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অভিষেক বলেন, বিজেপির তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। কেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে না? অভিষেকের কথায়, ২০২১-এ যে পরিণতি হয়েছিল, এবারের লোকসভা ভোটে তার থেকেও খারাপ পরিণতি বিজেপির হবে। সরাসরি নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক। বলেন, “আপনি যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েন তাহলে মহারাষ্ট্রে কীকরে অজিত পাওয়ার আপনাদের সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন? কেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা? শুভেন্দু অধিকারী, নারায়ণ রানে সবার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছে আগে তাঁদের গ্রেফতার করুন। আপনি মানুষকে বোকা ভাবছেন? আপনি ভাবছেন, নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে হাতের পুতুলের মত নাচাবো। ইলেকশন কমিশন এতদিন নির্ভীকভাবে কাজ করেছে, তারা আজকে নিজেদের মেরুদণ্ড বিজেপির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।”

আরও পড়ুন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচারের পাল্টা ধুইয়ে দিল তৃণমূল

Previous articleস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিথ্যাচারের পাল্টা ধুইয়ে দিল তৃণমূল
Next articleখুশির ইদে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা বার্তা মমতার, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন অভিষেক