প্রাকৃতিক ফসল আর পিঠের সুঘ্রাণে মহানগরীতে ‘সন্দেশখালি চাউল কথা’

বৈশাখের তপ্ত শনিবারে সকাল থেকেই উত্তর কলকাতার ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের টালা পার্কের পাশের সার্কাস ময়দানে পিঠেপুলির সুঘ্রাণ মন কাড়ছে এলাকাবাসীর। কারণ এখানেই আয়োজিত হয়েছে 'সন্দেশখালি চাউল কথা'।

সন্দেশখালি দিয়ে বিগত কয়েক মাসে অনেক রটনা খবরের শিরোনামে জায়গা করেছে। কিন্তু সেখানকার আসল ছবিটা তুলে ধরতে এবার শহরে এলেন উত্তর ২৪ পরগনার এই ছোট্ট ভূখণ্ডের এক ঝাঁক মহিলা। সঙ্গে আনলেন প্রায় কুড়ি সের দুধ, বারো সের চালের গুঁড়ো এবং দেড় ডজন নারকেল। বৈশাখের তপ্ত শনিবারে সকাল থেকেই উত্তর কলকাতার ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের টালা পার্কের পাশের সার্কাস ময়দানে পিঠেপুলির সুঘ্রাণ মন কাড়ছে এলাকাবাসীর। কারণ এখানেই আয়োজিত হয়েছে ‘সন্দেশখালি চাউল কথা’। সন্দেশখালি মানেই নারী নির্যাতন আর হিংসা নয়, শহরবাসীকে নিজেদের রন্ধনপটিয়সী দক্ষতার পরিচয় দিলেন সেখানকার মহিলারা।

জৈব কৃষিজাত ফসলের প্রসার নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। সন্দেশখালির মহিলারা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যদি নিজেদের রান্না শহরে বাবুদের খাওয়ানোর সুযোগ হয়। একেবারে হাতে কলমে কলকাতাবাসীর রসনা তৃপ্তি করাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কালিন্দী নদী পেরিয়ে প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে উত্তর কলকাতার মতো জায়গায় তাঁদের নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ করে দিতে সেতুবন্ধনের কাজ করেন পূর্ণেন্দু বসু, দোলা সেনরা। অকাল পিঠে পার্বণ ‘সন্দেশখালি চাউল কথা’ পরিবেশনায় বসুন্ধরা অর্গানিক। অনুষ্ঠানে উৎসাহ প্রদানে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, সন্দেশখালি প্রাকৃতিক ফসলে সমৃদ্ধ, তা দিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরি হয়। তাঁদের কাজ সকলের সামনে তুলে ধরতে বারবার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এছাড়া উত্তর কলকাতার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তরুণ সাহা এই ধরনের ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। সন্দেশখালি যে প্রাকৃতিক সম্ভার তার উদযাপনে ওখানকার মানুষ এখানে এসে রান্না করছেন আর এখানকার মানুষ তা খাচ্ছেন। এটা সত্যি এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন বলেন, পূর্ণেন্দু বসু যখন কৃষি দফতরের দায়িত্ব সামলাতেন তখন তিনি জৈব চাষ করেন যাঁরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁকে সন্দেশখালি মহিলারা বলেন যে এত নেতিবাচক প্রচার হচ্ছে অথচ তাঁদের ভাল থাকার কথা কোথাও জানানো হচ্ছে না। এই উদ্যোগের প্রশংসা করার পাশাপাশি শনিবারের বিশেষ মেনু গাঁদাল পাতা দিয়ে তৈরি চুনো মাছের কথা উল্লেখ করেন দোলা সেন।

পূর্ণেন্দু বসু জানান কৃষি বিজ্ঞানী রবিন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও কিছু জৈব চাষের প্রতি আগ্রহী মানুষের সহযোগিতায় এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তাঁর কথায়, সন্দেশখালি নিয়ে অপপ্রচার বেশি হয়েছে, তাই সেখানকার মহিলারা চেয়েছিলেন নিজেদের ভাল থাকার কথা, পরিশ্রমের কথা, প্রাকৃতিক ফসল চাষ এবং রান্নার কথা সকলের সামনে তুলে ধরতে পারেন। পুরুষানুক্রমে রান্নার যে বৈচিত্র তাঁরা বহন করে চলেছেন সেটাই শহর কলকাতার কাছে তুলে ধরাই ছিল মূল লক্ষ্য। এদিন বহু মানুষ সন্দেশখালির রান্নার স্বাদ উপভোগ করতে সার্কাস ময়দানে হাজির হন। মেনুতে ছিল চোদ্দ শাক, চৈতি মুগের ডাল ,সজনে পাতার বড়া, দেশীয় বিভিন্ন রকমের চালের পান্তা ভাত, মরিচ বোটা লাল চালের সাদা ভাত, কালো মোটা চালের পান্তা ভাত, চিংড়ি মাছ দিয়ে কচু শাক, খাম আলু দিয়ে পোনা মাছ ইত্যাদি। কৃষি বিজ্ঞানী রবিন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন এত মানুষের স্বতঃস্ফূর্তি উপস্থিতি নিঃসন্দেহে জৈব ফসল চাষের প্রসার এবং সন্দেশখালির মহিলাদের রন্ধন দক্ষতার বার্তা পৌঁছে দিল তিলোত্তমাকে।


 

Previous article“আমি তো যা-ই করি তা-ই মিম!” প্রচারে বেরিয়ে পাল্টা কটাক্ষ রচনার
Next articleকন্যাসন্তান জন্মের পরে স্ত্রীকে বিতাড়ন, জালে ‘অমানবিক’ স্বামী!