প্রথম দু’দফায় দেশজুড়ে কমেছে ভোটের হার, সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি!

গত কয়েকটি লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যাবে বিরোধীদের দাবি অমূলক নয়। তথ্য-পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ দিচ্ছে

এবার ৪০০ পার! এবার লোকসভা ভোটের শুরু থেকেই দেশজুড়ে এমন হাওয়া তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির সর্বস্তরের নেতানেত্রীরা। কিন্তু প্রথম দুই দফা ভোটের পর চারশোর হাওয়া অস্তমিত। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাহুল গান্ধী—কেউই বিজেপির ২০০ উপর আসন দেখছেন না! শুধু বিরোধীদের দাবি নয়, এবার সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে খোদ বিজেপি নেতানেত্রীরা।

গত কয়েকটি লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যাবে বিরোধীদের দাবি অমূলক নয়। তথ্য-পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ দিচ্ছে। প্রথম দুই পর্বে ভোটের হারে পতন উদ্বেগ বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরে। সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে। বিগত পাঁচটি লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করলেই এই ধারণার একটা রূপরেখা পাওয়া যাবে।

ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ভারতে সাধারণভাবে দু’রকম ভোটের হার দেখা যায়—হয় ৫২-৬২ শতাংশ, না হলে ৬২ শতাংশের বেশি। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গিয়েছে, ভোটের হার যদি ৬২ শতাংশ ছাপিয়ে যায়, তবে ফায়দা লুটেছে বিজেপি। কিন্তু ভোটের হার ৬২ শতাংশের কম থাকলে অ্যাডভান্টেজ কংগ্রেস।

কার্গিল হাওয়ায় ১৯৯৯ সালের ভোটে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সেবার ভোট পড়েছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৪টি আসন। অন্যদিকে অটলবিহারী বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন বিজেপির দখলে গিয়েছিল ১৮২ আসন। চার বছর পরে ২০০৪ সালের ভোটে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ বা ‘ভারত উদয়’ স্লোগান তুলে ভোটে লড়েছিলেন বাজপেয়ি। তাবড় তাবড় বিশেষজ্ঞরা বলেই দিয়েছিলেন, বাজপেয়ির ক্ষমতায় ফেরা নেহাতই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সেবার প্রায় দু’শতাংশ কম ভোট পড়ে। আর সামগ্রিকভাবে কংগ্রেস জিতে নেয় ১৪৫টি আসন। বিজেপির দখলে? ১৩৮টি আসন। ইউপিএ জোট গড়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। ২০০৯ লোকসভা ভোটেও সেই প্রবণতা বজায় ছিল। ভোট পড়েছিল ৫৮.২০ শতাংশ। কংগ্রেস জিতেছিল ২০৬টি আসন। অন্যদিকে লালকৃষ্ণ আদবানির নেতৃত্বাধীন বিজেপির দখলে গিয়েছিল ১১৬টি। গঠিত হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার।

২০১৪ সালের ভোট ছিল সবদিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্রুসেডের ডাক দিয়েছিলেন বিজেপির নতুন পোস্টার বয় নরেন্দ্র মোদি। সাড়া দিয়েছিল ভারতীয় জনতাও। একলাফে ভোটের হার বেড়ে গিয়েছিল আট শতাংশের বেশি। ইতিহাসের সর্বনিম্ন ফল হয় শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের। মাত্র ৪৪টি আসন পায় তারা। আর মোদি লহরে ভর করে বিজেপি জেতে ২৮২ আসন। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালের ভোটে সবচেয়ে বেশি চর্চা শুরু হয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে। পাকিস্তানের বালাকোটে বায়ুসেনার হামলার কাহিনি জনমানসে তীব্র প্রভাব ফেলে। ভোটের হারও বেড়ে যায়—৬৭ শতাংশের বেশি। ফলও হাতেনাতে পেয়েছিল বিজেপি। ৩০৩টি আসন জিতে ফের ক্ষমতায় ফেরেন মোদি। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ৫২টি আসন।

চলতি নির্বাচনের প্রথম দু’টি পর্ব সমাপ্ত। প্রথম পর্বে ১০২টি আসনে ভোট পড়েছে ৬২.৪ শতাংশ। গতবার এই আসনের গড় ভোটদান ছিল ৬৯.৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় সাত শতাংশের ধস। আর দ্বিতীয় পর্বে ভোট হয়েছে ৮৮টি আসনে। মোদি-শাহের আবেদন ও সরকারি প্রয়াস সত্ত্বেও এই দফায় ভোট পড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। ভোটের হার এবার কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় তথ্য হল, যেসব রাজ্য থেকে বিজেপি বেশি আসনের আশা করছে, অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে ভোটের হার বেশ কম। দু’শতাংশ ভোটের হেরফের হলেই যেখানে সরকার বদলে যায়, সেখানে উত্তরপ্রদেশে ৭ শতাংশ, বিহারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৯ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। এই তথ্যই চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপির। এখনও অনেকগুলি পর্বের ভোট বাকি। তবে ভোটের হারের এই প্রবণতা বজায় থাকলে দেশ আরও একবার ৬০ শতাংশের নীচের ভাগে প্রবেশ করবে। এই তথ্য কিন্তু বিজেপির পক্ষে বেশ বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Previous articleআইএসএল ফাইনালে উঠে কী বললেন হাবাস?
Next articleদ্বিতীয়বার কি বাবা হতে চলেছেন ধোনি? সাক্ষীর পোস্ট ঘিরে জল্পনা