ফি নিয়ে মক্কেলদের সঙ্গেই প্রতারণা বিকাশের! তীব্র ক্ষোভ, ধুয়ে দিলেন কুণাল

ফি নিয়ে নিজের মক্কেলদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠল বাম নেতা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার, আদালতের ভিতরে ও বাইরে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এদিন শুনানিতে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষাই বাতিলের দাবি জানান তিনি। এই নিয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিকাশকে। আর আদালতের বাইরে যাঁদের হয়ে বিকাশ মামলা লড়ছেন, তাঁরা প্রশ্ন করেন, যদি পরীক্ষাই বাতিল হয়, তাহলে তাঁরা কোথা থেকে সুবিচার পাবেন! মক্কেলদের থেকে মামলা লড়ার টাকা নিয়ে কেন তাঁদের সঙ্গেই প্রতারণা করছেন বিকাশ! আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের এই চাকরি বাতিলের দাবি নিয়ে তাঁকে ধুয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

মঙ্গলবার হাইকোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে প্রাথমিকের নিয়োগ নিয়ে শান্তনু শীল ও বাবলু পালের মামলার ছিল। ২০১৪-এ তাঁরা টেট দেন। এরপর ৬ নম্বর একটি ভুল প্রশ্নে উত্তর দিয়ে তাঁদের নম্বর বাড়ে। কিন্তু তার পরেও তাঁরা পাশ করতে পারেননি। এবার তাঁরা দাবি করেন ওটা তাঁদের OMR নয়। এই অভিযোগে শান্তনু শীল ও বাবলু পাল নিজেদের OMR দেখতে চান। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী, ২ বছর পরে আর OMR দেখানো হয় না। তবু, পর্ষদ জানায়, OMR-এর ডিজিটাইজ কপি তারা দেখাতে পারবে। এদিকে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জনের অভিযোগ, ডিজিটাইজ কপি এডিট করা যায়। কিন্তু এই দুজনের OMR যে এডিট হয়েছে তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে এদিনের শুনানিতে বারবার ২০১৪-র TET বাতিলের দাবি জানান বিকাশ। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ হন রাজাশেখর মান্থা। তিনি বলেন, অন্য কোনও উপায় থাকলে সেটা বলুন, বারবার প্যানেল বাতিলের দাবি তুলছেন কেন! এই পরিস্থিতি মামলার শুনানি হবে ৮ সপ্তাহ পরে। এরপরই আদালত থেকে বেরিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন বিকাশ ভট্টাচার্য। চাকরিপ্রাপকরা তাঁকে ঘিরে ধরে প্রশ্ন তোলেন, “আপনি খিদে পেলে ভাত খান। চাকরি খাচ্ছেন কেন?” কর্মরত শিক্ষক কিংশুক দে জানান, তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে, ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। ৭বছর ধরে চাকরি করছেন। এখন যদি কারও নম্বর নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তার জন্যে প্যানেল বাতিলের দাবি করা হচ্ছে কেন? যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের দোষ কোথায়? প্রশ্ন কর্মরতদের।

আর বিকাশের মক্কেল, যাঁদের চাকরি পাইয়ে দেবেন বলে মামলার ফি বাবদ হাজার হাজার টাকা নিয়েছেন বিকাশ, তাঁরাও তাঁকে ধরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের প্রশ্ন, আপনি কেন প্যানেল বাতিল করতে চাইছেন? তাহলে আমরা কীভাবে চাকরি পাব? সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অপ্রস্তুত বামপন্থী আইনজীবী। কোনও মতে পালিয়ে মুখ বাঁচান।

আরও পড়ুন- নির্বাচনের আগে কেন গ্রেফতার? কেজরি মামলায় ইডি-কে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

এই বিষয় নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিকাশকে ধুয়ে দেন কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যোগ্য প্রার্থীদের যাতে চাকরি থাকুক, তাঁদের যাতে চাকরি হয় তার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের আইনজীবীরা সব চাকরি অনিশ্চিত করে দিতে চাইছেন। তাঁরা দ্বিচারিতা করছেন। তাঁরা চাকরি প্রার্থীদের বলছেন, আমরা চাই যোগ্যরা চাকরি পাক। আবার আদালতে গিয়ে বলছেন প্যানেল বাতিল হোক।“ কুণালের কথায়, এদিন রাজাশেখর মান্থাও পর্যন্ত বলেছেন, “প্যানেল বাতিল চাইছেন কেন বারবার? বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।” সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির আইনজীবীদের মুখোশ ক্রমশ খুলে যাচ্ছে। তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাঁরা এদিন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা কোনওভাবেই বিতর্কিত নন। তাঁরা কর্মরত। তাঁরা যোগ্য। তাঁরা চাকরি করছেন। সস্তার রাজনীতি করতে আদালতে গিয়ে চাকরি খেতে, চাকরি আটকাচ্ছেন বিকাশদের মতো আইনজীবীরা।

কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিতে আইনি লড়াইয়ে টোপ দিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হোক। এই নিয়ে কোনও চক্র গড়ে উঠছে কি না তা দেখুক রাজ্য প্রশাসন।

 

 

Previous articleনির্বাচনের আগে কেন গ্রেফতার? কেজরি মামলায় ইডি-কে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
Next articleম্যাচ জিতেও বিপাকে কলকাতা, নির্বাসিত এক ক্রিকেটার