আসানসোলে অভিষেকের নিশানায় আলুওয়ালিয়া, নাম না কর তোপ অগ্নিমিত্রাকেও

গেরুয়া শিবিরকে তুলোধনা করেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

দীর্ঘ ৮ বছর আপনারা বিজেপির সাংসদকে সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু বিজেপি আসানসোল-সহ বাংলার মানুষকে নিপীড়ন, বঞ্চনা আর লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু দেয়নি। আসানসোলে দলীয় প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে এভাবেই গেরুয়া শিবিরকে তুলোধনা করেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শুক্রবার, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের আর্যকন্যা স্কুল মোড় থেকে সিটি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রোড শো-র শেষে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন অভিষেক। বলেন, “২০২২ সালে আপনারা আসানসোলে উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহাকে জিতিয়েছেন। শেষ ২ বছরে আমরা নতুন করে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করেছি, সেই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞকে বাধা দিয়ে বিঘ্নিত ও থমকে দেওয়ার জন্য বিজেপি আবার উঠেপড়ে লেগেছে।“

আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি (BJP) যাকে প্রার্থী করেছে, সেই সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া আগে ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করছে গেরুয়া শিবির। কটা করে অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, “এখানে যাঁকে প্রার্থী করেছে, সে ৫ বছর আগে বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী হয়েছিলেন। তার ৫ বছর আগে দার্জিলিংয়ের প্রার্থী হয়েছিলেন। বিজেপির সেই প্রার্থী এসএস আলুয়ালিয়া, নিজে একজন শিখ সমাজের প্রতিনিধি। এই বিজেপির নেতারা বাঙালিকে দেখলে রোহিঙ্গা বলে, সংখ্যালঘুদের মুসলিমদের দেখলে পাকিস্তানি বলে আর শিখদের দেখলে খালিস্তানি বলে। এই বিজেপিকে ভোট দেবেন আসানসোলের মা-ভাইরা? যারা বাংলায় বিচ্ছিন্নতাবাদ, বিভাজন ও বৈষম্যের রাজনীতি করে, যারা উন্নয়ন নিয়ে মুখে বড়বড় ভাষণ দেয়। কিন্তু ভোটের পর চোখে দেখা যায় না, আসানসোলের মানুষ কি এঁদের গ্যারান্টিতে বিশ্বাস করে? যারা ৫ বছর ধরে বাংলার মানুষকে পেটে-ভাতে মারার চেষ্টা করেছে, বাংলার গরিব মানুষের টাকা আটকে রেখেছে, তাদের ১৩ মে উচিত শিক্ষা দেবেন?“

এদিন মনোনয়ন জমা দিয়েই আসানসোলে চলে আসেন অভিষেক। আলিপুরের জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সন্দেশখালি ইস্যুতে বিজেপিরে বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক। এদিন আসানসোলেও রোড শো থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আপনারা গত সাত-দশদিন ধরে দেখেছেন, বাংলাকে কীভাবে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র করেছিল বিজেপি। সন্দেশখালির মায়েরা আজকে বলছে, জোরজবরদস্তি সাদা কাগজে সই করিয়ে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করিয়ে বিজেপি কমপ্লেন করেছিল। কিন্তু আদৌ কোনও ধর্ষণ হয়নি। সন্দেশখালির অপমান বাংলার অপমান, আর বাংলার অপমান আসানসোলের অপমান। যারা ২ হাজার টাকার বিনিময়ে মহিলাদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে বাংলার নাম-মর্যাদা-সম্মান সারা দেশের কাছে ছোট করেছে, এই বাংলা বিরোধী বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দেবেন কি না?“

আসানসোলবাসীকে আশ্বাস দিয়ে তৃণমূল সাংসাদ বলেন, “যেভাবে গত দশবছর ধরে ডায়মন্ড হারবারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে ডায়মন্ড হারবারকে দেশের মধ্যে একনম্বর করেছি, তেমনি আগামি দিনে আসানসোলের দায়ভার আমি আমার কাঁধে তুলে নিচ্ছি। যে ১৩ তারিখ বাংলায় পরিবর্তন এসেছিল, আগামী সেই ১৩ তারিখ আপনারা ভোট দিয়ে দিল্লিতে পরিবর্তন আনবেন। দিল্লির পরিবর্তন শুধু সময়ের অপেক্ষা।“ অভিষেকের কথায়, ২০১৪ থেকে ২০২২, আটবছর ধরে আসানসোলে বিজেপির সাংসদ ছিল, কী করেছে? আর অমিত শাহ ৫ দিন আগে এখানে এসে বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোকে আমরা খুলব। দশবছর ধরে নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন? এখন ভোটের আগে বাংলার কথা মনে পড়েছে?

নাম না করে বিজেপি বিধায়িকা যিনি এবার মেদিনীপুরে প্রার্থী হয়েছেন, সেই অগ্নিমিত্রা পালকেও নিশানা করেন অভিষেক। বলেন, “আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা ভাষণ দিয়ে বলেছিল আমরা সন্দেশখালিকে নন্দীগ্রাম করব। গদ্দার অধিকারীর লেজুর, মেদিনীপুরে দাঁড়িয়েছে। গোহারা হারলে ফের আসানসোলে ঢুকতে দেবেন না।“

বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বঞ্চনা কথা তুলে তৃণমূল সাংসদ বলেন, “দশ বছর ধরে বাংলার টাকা বন্ধ। জিএসটির কারণে আজকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। গরিবের রান্নায় থাকে জিরে, যে জিরেতে ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপিয়েছে। আর বড়লোকদের বাড়িতে থাকে হিরে, যার উপর জিএসটি শূন্য। এই গরিব বিরোধী বিজেপিকে আগামীদিনে একটা ভোটও দেবেন না। আসানসোলের প্রত্যেকটা জায়গায় ভারতীয় জনতা পার্টির জল্লাদদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবেন না। গণতান্ত্রিকভাবে এমনভাবে জবাব দেবেন, যাতে মানুষকে মিথ্যা বলার আগে এরা ১০ বার ভাবে।“




Previous articleবেনজির, কিশোরী বাগদত্তার মাথা কেটে খুন করল হবু স্বামী!
Next articleকাঠগড়ায় উঠতেই ‘ভয় দেখানো’র তত্ত্ব! EC-তে অভিযোগ জাতীয় মহিলা কমিশনের