অহংকারী-বদমেজাজি-কুকথার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তমলুকে দেবাংশুর খেলা সহজ করেছেন

তমলুকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পথে কাঁটা স্বয়ং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! প্রাক্তন বিচারপতির লড়াইটা খুব সহজ নয়। এবং তিনি হেরে গেলে সেটাকে “অঘটন” বলতে নারাজ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তমলুকের ত্রিমুখী লড়াইয়ে প্রকৃত অর্থে তিন দলের তিন প্রার্থী মানুষের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। নিয়োগ মামলার বিচারক হিসেবে গত দু’বছরে খবরের শিরোনামে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আবার গত ৬ বছরে নতুন প্রজন্মের সুবক্তা হিসেবে তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্যের আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে, বাম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোশ্যাল মিডিয়া ও টিভি চ্যানেলের বিতর্কে ক্ষুরধার বক্তব্যের জন্য বেশ পরিচিত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে শুরু থেকেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

স্বেচ্ছাবসর নেওয়া হাইকোর্টের বিচারপতি রাজনীতিতে আসাটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির জার্সি গায়ে চাপানোর পর দিনই তাঁর “সৎ” ইমেজে ফাটল ধরেছে। মুখ আর মুখোশের পার্থক্য মানুষ চিহ্নিত করেছে। আসলে বিচারপতির চেয়ারকে তিনি শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির কাছে বিক্রি করেই যে “মহান” হয়েছিলেন, এখন তা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। অর্থাৎ, যেভাবে বিচারপতির আসনে থেকেও তিনি ভিতর ভিতর বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন, সেটাও কম দুর্নীতি নয়!

এখানেই শেষ নয়, প্রাক্তন বিচারপতি একজন অহংকারী-বদমেজাজি মানুষ, সেটা সাধারণ ভোটাররা তো বুঝতেই পারছেন, সেইসঙ্গে তমলুকের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরাও টের পাচ্ছেন এখন। আর যাইহোক, প্রাক্তন বিচারপতি মানুষের নেতা হতে পারবেন না। মাটিতে তাঁর পা পড়ে না। দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সংসদে পাঠালে তিনি আরও দাম্ভিক হয়ে উঠবেন বলেই ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যাযয়ের মুখের ভাষা, কুকথা ও বাচনভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিজেপির কালচার খুব দ্রুত রপ্ত করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁর মতো একজনের কাছ থেকে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর ও আপত্তিকর ভাষা অন্তত তমলুকের শিক্ষিত মানুষ আশা করেন না। তমলুকে কান পাতলেই শোনা যাবে, দিলীপ ঘোষ আর অভিজিৎ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নেই। তাঁর সঙ্গে পার্থক্য নেই প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বসুর।

আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় তমলুকে ভোট গ্রহণ। অভিজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই নতুন প্রজন্মের নেতা দেবাংশু ও সায়ন যখন ঝড়, জল, বৃষ্টিতে চোষে ফেলছেন তমলুকের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, তখন ঠান্ডা ঘরে বসে চটুক ভাষায় সংবাদ মাধ্যমকে ইন্টারভিউ দিতেই ব্যস্ত অভিজিৎ। ভোটের আগেই যদি মানুষের থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকেন, তাহলে আগামীতে
কী হবে সেটা সকলেই আঁচ করতে পারছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি, দুয়ারে দুয়ারে হাতজোড় করে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ভোট চাইতে দেখা যায়নি সেভাবে। হয়তো মানুষের কাছে হাতজোড় করতে তাঁর আত্মসম্মানে লাগছে।

সবমিলিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ঢাকঢোল পিটিয়ে যেভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, এখন ভোটে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছেন, রাজনীতি তাঁর জন্য নয়। এবং সেই জায়গা থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন তিনি। কখনও হতাশ হয়ে পড়ছেন। ভুগছেন ইগোর সমস্যায়। অন্যদিকে, সিপিএমের প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে প্রচারে ঝাঁজ বাড়িয়েছে, তাতে বামের ভোট রামের থেকে ফেরৎ এলে আর তৃণমূল সংগঠনের জোরে ভোট মেশিনারিকে কাজে লাগাতে পারলেই প্রাক্তন বিচারপতির খেলা শেষ!!!

আরও পড়ুন- রাজভবন-কাণ্ডে আরও ৪ জনকে তলব লালবাজারের!