Tuesday, November 11, 2025

জমিদার-স্বৈরাচারী অধিকারী পরিবারকে জবাব দিতে তৈরি কাঁথি-তমলুক

Date:

একটি পরিবারের হাতেই জেলা ও শহরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ। যুগ যুগ ধরে এটাই চলে আসছে। যুগ যুগ ধরে মানুষের ক্ষোভও সঞ্চার হয়েছে। লোকসভার আগে শান্তিকুঞ্জের অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে ফুঁসছেন কাঁথির মানুষ। সুযোগ পেলেই জবাব দিতে তৈরি ভোটাররা।

বছরের পর বছর জমিদারি ব্যবস্থার কয়েক করেছে অধিকারী পরিবার। ২০২০ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের ছত্রছায়ায় যা ব্যাপকভাবে ছিল। আসলে নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিবারের চোখ দিয়ে গোটা পূর্ব মেদিনীপুরকে দেখতেন। বিশ্বাস করতেন কাঁথির শান্তিকুঞ্জের সদস্যদের। কিন্তু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি অধিকারী পরিবার। দল ও নেত্রীর সঙ্গে বেইমানি করেছে, সর্বোপরি কাঁথির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর পরিবার।

একটা সময় তৃণমূলের জার্সি পরে পার্টি থেকে প্রশাসন, সবই ছিল অধিকারী জমিদারদের কব্জায়। কাঁথি, তমলুক, হলদিয়া সহ গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে এই অধিকারী পরিবার এমন কোনও প্রশাসনিক ও দলীয় পদ ছিল না, যা নিজেদের দখলে রাখেনি। সমবায়, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার কমিটিগুলিকেও নিজেদের কব্জায় রেখেছিল শুভেন্দুরা।

উঠতে দেয়নি পার্টির আনুগত্য অন্যান্য নেতাদের। ফলে শুধু বিরোধীরাই নয়, দলের কর্মীরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ২০২০ সালের পর থেকে জমিদারি অনেকটা খর্ব হলেও স্বৈরাচারী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি শান্তিকুঞ্জের সদস্যরা। এখন তো আরও বড় শক্তি সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

এরই মাঝে চলে এসেছে আরও একটি লোকসভা ভোট। আগামী ২৫ মে কাঁথি ও তমলুকে ভোটগ্রহণ। কাঁথি ও তমলুক লোকসভা আসনটা তৃণমূল ও বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। প্রায় দু’দশক এখানে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ ছিল অধিকারী পরিবারের হাতে। শুধু পার্টির নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এই পরিবারের সদস্যদের কথায় চলত। আর চলবে নাই বা কেন? জেলার দু’টি লোকসভা আসন। দু’টিই ছিল এই পরিবারের কব্জায়। জেলায় দু’টি উন্নয়ন পর্ষদ। দু’টিই অধিকারীদের হাতে। তাছাড়াও মন্ত্রী, পুরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর সবই পরিবারের অথবা তল্পিবাহকদের দখলে। গোটা অধিকারী পরিবারটাই এখন জার্সি বদলে বিজেপি।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উঠতে বসতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে কটাক্ষ করেন বিরোধীদের। অথচ তাঁর দল একই পরিবার থেকে একজনকে বিধানসভায় পাঠিয়েছে, আর একজনকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে। কারণ, অধিকারী পরিবারের কাছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আত্মসমর্পণ করেছে। তার জন্য দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। কিন্তু কেউ মুখে খোলার সাহস পায় না। কারণ তৃণমূলের মতো বঙ্গ বিজেপিতেও অধিকারী পরিবারের ‘নিরঙ্কুশ প্রাধান্য’।

তবে চাকা ঘুরছে। তৃণমূল কাঁথিতে যাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি জেলা রাজনীতিতে ‘টাফ ম্যান’ বলে পরিচিত। উত্তম বারিকের জন্যই কাঁথি আসনের লড়াই জমে গিয়েছে। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের দম এই জেলার যে ক’জন তৃণমূল নেতার আছে, উত্তম তাঁদের অন্যতম। চাপের সামনে মাথা নোয়ান না। আয়কর নোটিশ পাওয়ার পরেও তাঁর বুক চিতিয়ে লড়াই সেটাই প্রমাণ করেছে। তাই প্রতিপক্ষ অধিকারী পরিবারের সদস্য শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু হলেও, লড়াইটা একতরফা নয়।

অন্যদিকে, তমলুক কেন্দ্রে প্রাক্তন বিচারপতিকে এনে যে তাস শুভেন্দু খেলতে চেয়েছিল, তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। বিরোধী দলের দুই প্রার্থী তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য ও বামেদের প্রার্থী তরুণ আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেষল্যাপের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন স্বেচ্ছাবসর নেওয়া অহংকারী, দাম্ভিক, বদমেজাজি বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।


 

Related articles

ধর্মেন্দ্রর অবস্থার অবনতি, রাতেই হাসপাতালে ছুটলেন শাহরুখ-সলমন

বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর (Dharmendra) শারীরিক অবস্থার অবনতি। রাতেই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে গেলেন শাহরুখ-সলমানরা (Shahrukh Khan - Salman...

সলমনই হামলার মাস্টারমাইন্ড? দিল্লি বিস্ফোরণে গ্রেফতার ব্যবহৃত গাড়ির মালিক

সাদা রঙের একটি হুন্ডাই আই–২০ গাড়ি ধীরে ধীরে এসে ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে থামতেই মুহূর্তের মধ্যে ঘটে বিস্ফোরণ। সোমবার...

দিল্লি বিস্ফোরণের জের: কলকাতার সব থানাকে সতর্ক করেছে লালবাজার, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চলছে নাকা চেকিং

দিল্লির লালকেল্লার কাছে মেট্রো স্টেশনের এক নম্বর গেটের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জেরে দেশের রাজধানীর পাশাপাশি হাই অ্যালার্ট (High...

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর! ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গ্রেফতার গাড়ির মালিক

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার ১। বিষ্ফোরণ হওয়া গাড়ির মালিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের...
Exit mobile version