সেই ২০০৯ সালে লোকসভা ভোট (Loksabha Election) থেকে মানুষ মুখ ফেরাতে শুরু করেছে। আজ ১৫ বছর পেরিয়ে সেই ধারা এখনও অব্যাহত। যত দিন গিয়েছে বামেদের রক্তক্ষরণ বাড়তে থেকেছে। এরপর ২০১৯ লোকসভা, ২০২১ বিধানসভা এবং সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ লোকসভা ভোটে বামেদের শূন্য হাতে ফিরিয়েছে বাংলার মানুষ। দলগত ভাবে বামফ্রন্ট হোক কিংবা সিপিএম (CPIM), এখন এই বাংলার বুকে জীবন্ত জীবাশ্ম।
তবে এবার লোকসভা ভোটে চেষ্টায় খামতি রাখেনি সিপিএম। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কেন্দ্রে নতুন মুখকে প্রার্থী করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়েছে আলিমুদ্দিনের ম্যানেজারেরা। “ক্যাপ্টেন” মীনাক্ষীকে সামনে রেখে সৃজন, সায়ন, দীপ্সিতারা লড়াইয়ের ময়দানে নজর কেড়েছে। কিন্তু দিনের শেষে হাল ফেরেনি লালের। বরং শিবরাত্রির সলতের মতো টিম টিম করে জ্বলতে থাকা বামেদের ভোট আরও কমে গেল।
ভোটপ্রাপ্তির হারে বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহতই থাকল। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে ৩০টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। ‘ঝকঝকে’ তরুণ মুখরাও লালের পালে হাওয়া দিতে পারল না। এখন সিপিএমকে খেসারত গুনতে হবে লক্ষাধিক টাকা। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তরুণদের। সবমিলিয়ে বামেদের ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৮ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কোনওরকমে জামানত বাঁচিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তী।
সেলিম মুর্শিদাবাদ লোকসভায় দ্বিতীয় হতে পেরেছেন। তিনি পেয়েছেন ৫ লক্ষ ১৮ হাজার ২২৭টি ভোট অর্থাৎ ৩৩.৬২ শতাংশ। আর দমদমে তৃতীয় হয়ে সুজনবাবু পেয়েছেন ১৯.১১ শতাংশ ভোট। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রদত্ত ভোটের একের ছয় ভাগ বা ১৬.৬৬ শতাংশ পেলে সেই প্রার্থীর জামানত রক্ষা পায়। সেখানেই ঝুলি প্রায় শূন্য বামের। আর জামানত-অঙ্ক ছুঁতে না পারার তালিকায় রয়েছেন তমলুকের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, বারাকপুরের দেবদূত ঘোষ, কলকাতা দক্ষিণের সায়রা শাহ হালিম, ডায়মন্ডহারবারের প্রতীক-উর-রহমানের মতো পরিচিত প্রার্থীরা। জামানত খুইয়েছেন বরানগর উপ নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যও। সেদিক থেকে যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্য ও শ্রীরামপুরের দীপ্সিতা ধরের একেবারে কানের পাশ দিয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সৃজন ও দীপ্সিতা জামানত রক্ষা থেকে যথাক্রমে ০.১৪ শতাংশ ও ০.৪৬ শতাংশ দূরে থেমে গিয়েছেন।
এবার বামেদের ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে সিপিএমের কাস্তে-হাতুড়ি-তারার প্রার্থী ছিলেন ২৩ জন, সিপিআই-ফরওয়ার্ড ব্লকের ২ জন করে এবং আরএসপির ৩ জন। পুরুলিয়াতেও সমঝোতা ভেঙে প্রার্থী দিয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। যদিও এই বাজারে একমাত্র দীপ্সিতা বামেদের খানিক অক্সিজেন জুগিয়েছেন। তিনি গত লোকসভার তুলনায় ৮৬ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। তবে হ্যাঁ, এই প্রাপ্তিতে কংগ্রেসের ভোটও কিন্তু রয়েছে। গতবার জোট না থাকায় যেটা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এবং পাটি গণিতের হিসেব বলছে, বামের ভোট যেখানে যত শতাংশ কমেছে, এবারও ঠিক সেই সেই জায়গায় রাম অর্থাৎ বিজেপির ভোট ততটাই বেড়েছে। আর দু’একটি জায়গায় যেখানে সামান্য কিছু ভোট বাম প্রার্থীর বেড়েছে, সেখানে বিজেপির ঠিক ততটাই কমেছে। ফলে হিসেব পরিষ্কার, বামের ভোট রামে যাওয়াতেই এ রাজ্যে গেরুয়া আগ্রাসন কিছুটা হলেও রয়েছে।