হলং বাংলোর গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পদক্ষেপ করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। বুধবার, সাংবাদিক বৈঠকের পরে জানালেন রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hasda)। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে সব পদক্ষেপ করা হবে। একই সঙ্গে বন প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রেল দুর্ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে বিরোধীরা রাজনীতি করছেন। হলং বন বাংলোয় (Halang Forest Bungalow) কীভাবে আগুন, খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।“
এর পরই বন প্রতিমন্ত্রী জানান, হলং বনবাংলোয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানাধরনের খবর ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে আসার পর গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বিরোধীদের নিশানা করে বীরবাহা আরও বলেছেন, “রেলের দুর্ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে রাজনীতি করছেন। বিরোধীরা রাজনীতি করার জন্য নানা রকম রাজনীতি করবেন।“ এই বিষয় নিয়ে বিরোধীদের অযথা রাজনীতির বিষয় নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, দুঃখজনক ঘটনা। এটা নিয়ে তদন্ত হবে। মন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে যাবেন। এই বিষয় নিয়ে অযথা রাজনীতি করছে বিরোধীরা। কুণালের কথায়, “আপত্তিকর ঘৃণ্য প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। মাননীয়া মন্ত্রী সাংবাদিকদরে যথাযথভাবে বলেছেন। তদন্ত কমিটি তৈরি হচ্ছে। তাঁরা যাচ্ছেন। আগামী দু-একদিনের মধ্যে দফতরের অন্য কাজ সেরে সেখানে যাবেন বীরবাহার হাঁসদা। মনোজ টিগ্গাকে জিজ্ঞাসা করা হোক – রেল দুর্ঘটনা কেন হচ্ছে। বেসরকারি হাতে গোটা রেল সাম্রাজ্যটা তুলে দেওয়ার জন্য? রেলের ঘন ঘন দুর্ঘটনা হচ্ছে কী পরিকল্পনা করে?“ তীব্র কটাক্ষ কুণালের।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের পর্যটনের গর্ব তথা ঐতিহ্যবাহী হলং বন বাংলো। মাদারিহাটে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গভীরে অবস্থিত হলং বন বাংলো। প্রাথমিক অবস্থায় বনকর্মীরাই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু বন বাংলোটি কাঠের তৈরি বলে দ্রুত আগুন বিশাল আকার ধারণ করে। খবর পেয়ে হাসিমারা ও ফালাকাটার থেকে দুটি ইঞ্জিন সেখানে পৌছায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায় তখনও পুড়ে যাওয়া বাংলো থেকে হালকা ধোঁয়া উঠছে। বন বাংলোর দাঁড়িয়ে থাকা কংক্রিটের পিলার গুলো শুধু সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে গৌরবময় ইতিহাসের।
এদিন সকালে জলদাপাড়া আসেন উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জে ভি। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে হলং বাংলোতে যান ডি এফ ও জলদাপাড়া প্রভিন কাসোয়ান। পুড়ে যাওয়া বন বাংলো পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করার আগে, জলদাপাড়া গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে ভাস্কর জে ভি জানান, “এই ঘটনায় সমস্ত দিক মাথায় রেখেই তদন্ত করা হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে আমরা অনুমান করছি শট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। আমরা তদন্তের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারের মতামত নেব। পাশাপাশি পুলিশের সহায়তাও নেওয়ার হবে।”
তদন্তের কাজে এদিন বিকেল চারটে নাগাদ জলদাপাড়া পৌঁছান আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল এদিন নদী ভাঙন পরিদর্শন করতে জলদাপাড়া এলাকায় গিয়েছিলেন, তিনি জানিয়েছেন ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক দল কাজ শুরু করেছেন পুড়ে যাওয়া বাংলোতে। জলদাপাড়ার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ইতিমধ্যেই পর্যটন ব্যাবসায়ীদের তরফে বন দফতরকে পুনরায় পুরোনো বাংলোর মতোই বাংলো নির্মাণের অনুরোধ করা হয়েছে।