রাঙাপানি রেল দুর্ঘটনায় প্রথমদিনই মৃত মালগাড়ির চালকের উপর সব দোষ চাপিয়ে গোটা রেল ব্যবস্থার গাফিলতি ও কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করেছিল রেল বোর্ড। তদন্ত শুরু হতেই রেল বোর্ডের যাবতীয় পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যেতে লাগল। এবার তদন্তকারী চিফ লোকো ইন্সপেক্টরের রিপোর্টে দাবি করা হল যে পেপার সিগনাল মালগাড়ির চালককে দেওয়া হয়েছিল সেটাই ভুল ছিল। তদন্তকারীদের অধিকাংশ একপেশে মত প্রকাশ করলেও বিরোধিতা করেন এক আধিকারিক। অন্যদিকে যে TA-912 ফর্ম নিয়ে এত আলোচনা, সেই ফর্ম দিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখা।

কাঞ্চনজঙ্ঘা রেল দুর্ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত সিআইএল-দের দলের ছয় সদস্যের মতে সিগনাল বিকল হলে যে নিয়ম পালন করা উচিত ছিল তা পালন করেনি মালগাড়ির চালক। এমনকি তিনি অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেন। সপ্তম সদস্যের দাবি, সিগনাল বিকল থাকলে রাঙাপানি ও ছাতের হাট স্টেশনের মধ্যে অ্যাবসলিউট ব্লকেজ থাকার কথা ছিল। যার ফলে আগের ট্রেন ছাতের হাট স্টেশন ছেড়ে না গেলে পরের ট্রেনকে রাঙাপানি থেকে যাওয়ার সিগনাল দেওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে কোনও ধরনের পেপার সিগনাল দেওয়াই নিয়ম বিরুদ্ধ।

সেই সঙ্গে ইন্সপেক্টরের দাবি, TA-912 যা পেপার সিগনাল হিসাবে মালগাড়িকে দেওয়া হয়েছিল তাতে গতির বাধা ছিল না। যদি TA-912 ফর্মের বদলে মালগাড়িকে TD-912 দেওয়া হত তাহলে সেই ফর্মেই গতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা দেওয়া হত। যে নির্দেশ TA-912 ফর্মে কখনই দেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে মালগাড়ির গতিও অতিরিক্ত ছিল বলে মানেননি সপ্তম ইন্সপেক্টর। তাঁর মতে যেভাবে মালগাড়ি সব ধরনের ব্রেক কষেছিল তাতে স্পষ্ট গাড়ি বেশি গতিতে ছিল না। ব্রেক মারার পর থেকেই মালগাড়ির কামরাগুলি লাইনচ্যুত হতে থাকে। শুক্রবারই মালগাড়ির ইঞ্জিনটি পরীক্ষা করতে ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারী দল।

অন্যদিকে যে TA-912 ফর্ম নিয়ে দুর্ঘটনার পর থেকে রহস্য দানা বেঁধেছে, সেই ফর্মের ব্যবহার আপাতভাবে বন্ধ করে দিল পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন। এতদিন রেলের পক্ষ থেকেই দাবি করা হচ্ছিল পেপার সিগনালে গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল মালগাড়ির চালককে। কিন্তু রেলের এই ব্যাখ্যা পুরদস্তুর মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পরই বিতর্কিত ফর্ম বাতিল করল রেল। রেলের এই সিদ্ধান্ত ফের প্রশ্ন তুলে দিল কোনও কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিনা, তা নিয়েও।

