সরকারি জমি বেদখল, রাস্তা অপরিষ্কার, পথবাতির দেখভালের অবহেলা- নাগরিক পরিষেবার অবহেলা নিয়ে জনপ্রতিনিধি থেকে আমলা সবাইকে তীব্র ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। সোমবার নবান্ন (Nabanna) সভাঘরের বৈঠকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও উচ্চ পদস্থ সরকারি আমলার নাম করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, “দেখেন না, লজ্জাও লাগে না? জনগণ পরিষেবা না পেলে পুরসভা-পঞ্চায়েত রেখে লাভ কী?“ মমতা জানান, কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা থাকলে সেটাও খুলে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কেন সেই সব রুখতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না! কেন জল অপচয় হচ্ছে? স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?
হাওড়ার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ টাকা খেয়ে, কেউ টাকা খাইয়ে এ সব করাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। হাওড়া পুলিশকে বলব একটা তদন্ত করার জন্য। চিফ সেক্রেটারিকেও অর্ডার দিচ্ছি।“ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “রাম-শ্যাম, যদু-মধু যে-ই হোন, আমিও যদি হই, ছাড়বেন না। লোভ বেড়ে যাচ্ছে। লোভটাকে কমাতে হবে। সরকারি জমি দখল করে একটার পর একটা বড় বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সরকার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। তার রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। কেন এ সব হবে? দেখার দায়িত্ব কেবল আমার?“
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বার থেকে জমি বণ্টন থেকে সৌরশক্তি, যে কোনও কাজের টেন্ডার আর স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে পরিচালনা করা হবে না। “এগুলি উপর থেকে দেখতে হবে। এর জন্য কমিটি গড়ে দেব। কিন্তু লোকালি কাকে দিয়ে করব এগুলো? এসডিওকে দিলেও যা, ডিএমকে দিলেও তাই।“
মন্ত্রী-সহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন করেন, “হাতিবাগানে কখনও তাকিয়ে দেখিয়েছেন? কী অবস্থা ওখানে। গড়িয়াহাটে হকার বসিয়েছেন। সে দিন ওয়েবেলের সামনের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। দেখলাম একের পর এক দোকান বসিয়ে দিয়েছে। দেখতে ভাল লাগছে?“ সরাসরি মন্ত্রী সুজিত বসুর না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজারহাটে সুজিত লোক বসাচ্ছে কম্পিটিশন করে।“
পুলিশকেও ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “সবাই চোখে ঠুলি পরে আছে! কারও চোখে কিচ্ছু পড়ছে না। অবৈধ ভাবে তালার পর তালা উঠছে। দু’- এক জনকে অ্যারেস্ট তো করুন! বেআইনি যদি হয়, ‘স্টার্ট ফ্রম মাই হাউস।’ কেন বাইরের লোক বসবেন এখানে? একটা করে ত্রিপল লাগাচ্ছে, এক জন করে বসে পড়ছে।“ তীক্ষ্ণ স্বরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হোয়াই? হোয়াই? হোয়াই?“
দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি থাকার প্রয়োজনীয়তা কী? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “সেখানে তো পুরসভা আছে। লাভটা কী? এ রকম ভাবে তো চলতে পারে না।“ তিনি জানান, এ বার থেকে কেউ কোনও কাজ করলে তার রিভিউ হবে। তদন্তও হবে।