জীবনচর্যা ও নৈতিক মূলবোধের আধারে অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী জন্মশতবর্ষ উদযাপন

তাঁরই উদ্যোগে WBCUTA-র মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করেন

ব্যাক্তিগত জীবনচর্যা ও নৈতিক মূলবোধের আধারে একজন কী ভাবে অনুকরণ যোগ্য ব্যাক্তি হতে পারেন তার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্ত্তী। জন্ম পূর্ববঙ্গের ঢাকা বিক্রমপুরের ষোলোঘর গ্রামে। শিশুকালে পিতৃহীন-মাতৃহীন। স্কুল শিক্ষা প্রথমে ঢাকা পরে কলকাতায়, কলেজের শিক্ষা গৌহাটির কটন কলেজে অর্থনীতির অনার্সে প্রথম স্থান, স্বর্ণপদক প্রাপ্ত। কলকাতায় ফিরে এম.এ ও আইন পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ, সরকারী উচ্চপদ প্রত্যাখ্যান, শিক্ষকতার জীবন শুরু শিলচর গুরুচরণ কলেজে। কলকাতায় ফিরে চারুচন্দ্র ও উমেশ চন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু।

সেই সময় অধ্যাপকদের কম, মর্যাদাহীন অবস্থা। অধ্যাপক সংস্থা থাকলেও প্রাণবন্ত নয়। তাঁরই উদ্যোগে WBCUTA-র মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। যার পরিনামে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদনে শিক্ষামন্ত্রী এম.সি. চাগলার সাথে চুক্তি, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে রাজ্যস্তরে ভদ্রস্থ বেতন হার এবং মর্যাদা প্রাপ্তি। WBCUTA-র সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিরূপে সফল নেতৃত্ব দানের পর AIFUCTO গঠনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী।

একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আলোকবর্তিকা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরলস যোদ্ধা এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য হিসাবে তাঁর উত্তরাধিকার, অবদানকে সম্মান জানিয়ে আজকের এই শতবর্ষ স্মরণসভার আয়োজন করেছে অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবোধচন্দ্র সিনহা (প্রাক্তন মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)। বক্তব্য রাখেন কিরণময় নন্দ (পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী), মঞ্জু মোহন (বিশিষ্ট সমাজকর্মী, নয়াদিল্লি), শাহরিয়ার কবির (বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মানবাধিকার কর্মী, ঢাকা), অরুণ শ্রীবাস্তব (জাতীয় আহ্বায়ক, নির্বাচনী সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই), সুধাংশু ভট্টাচার্য (সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতি) এবং আরও অনেকে।
কিরণময় নন্দ বলেন, দিলীপ দার অবদান ইতিহাসে লেখা আছে তার নিরলস সংগ্রাম সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথ দেখিয়েছে। আজকে সেই পথেই আমাদের এগোতে হবে। তিনি শুধু শিক্ষাবিদ ছিলেন না ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক।

প্রসঙ্গত , ১৯৭১ সালে বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের সহায়তার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এর জন্য তাঁকে ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার অ্যাওয়ার্ড দিয়ে মরণোত্তর স্বীকৃতি জানায়।
১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পর তিনি জনতা পার্টির হয়ে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর ওপর আক্রমণের পরে হাসপাতালের বিছানা থেকে প্রচার চালিয়েও প্রচুর ভোটে জেতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াইয়ের জন্য পরিচিত চক্রবর্তী শিলচর ভাষা আন্দোলন, তিব্বত আন্দোলন, চিনা আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং আসাম উদ্বাস্তু আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

 

Previous articleআজ দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর!
Next articleবাগুইআটি বিস্ফোরণে নয়া মোড়, ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক টিম