নিট দুর্নীতি থেকে ১৯৭৫-র ‘এমারজেন্সি’: সোনিয়ার নিশানায় মোদি-বিড়লা, সমর্থন লালুর

সংবিধানের উপর লাগাতার আঘাত হানা হচ্ছে। আর সেকারণেই বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে ১৯৭৫ সালের এমারজেন্সির (Emergency) কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে (Om Birla) আক্রমণ করলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। শনিবার সোনিয়া বলেন, লাগাতার সংবিধানের উপর আঘাত হানছে মোদি তথা বিজেপি সরকার (BJP)। আর সেদিক থেকে নজর ঘোরাতেই এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী-স্পিকার। ‘প্রিচিং কনসেনসাস, প্রোভোকিং কনফ্রন্টেশন’ নামে এক প্রতিবেদনে সোনিয়া গান্ধী লেখেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দলের নেতারা লোকসভায় জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন। অদ্ভুতভাবে সে প্রসঙ্গ লোকসভায় উত্থাপন করেন খোদ স্পিকার। যাকে ‘পক্ষপাতহীন’ বলেই চিহ্নিত করা হয় সংসদে। এদিন সোনিয়া গান্ধী আরও বলেন, এমারজেন্সির পর ১৯৭৭ সালে জনতা যে রায় দিয়েছিল তা মাথা পেতে মেনে নেওয়া হয়। তবে ঠিক তার তিন বছরের মধ্যেই কংগ্রেস ফের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। যা প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এখনও ছুঁতে পারেনি। তবে কংগ্রেস স্পিকার পদে শপথ নেওয়ার পরেই জরুরি অবস্থার সময় নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ওম বিড়লা। সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে একই ইস্যু উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। ঘটনার পরে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। স্পিকারকে সাফ জানিয়ে দেন, সংসদে এমন মন্তব্য করা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে বিরোধী শিবির। এমন ঘটনা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

তবে এখানেই শেষ নয়, নিট দুর্নীতি নিয়েও সরব হয়েছেন সোনিয়া। প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠান করেন তিনি আজ নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে চুপ কেন? এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে কতগুলি পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে বসেছে। এদিকে সংসদের অধিবেশন শুরুর প্রথম দিন থেকেই নিট প্রশ্নপত্র ফাঁস ইস্য়ুতে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। এদিকে আলোচনার দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকেই সরব হন বিরোধীরা। ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে এই মর্মে আলোচনা চাওয়া হলেও তাতে রাজি হননি স্পিকার। অভিযোগ ওঠে, রাহুল গান্ধী এই ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে সংসদে তাঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়।

যদিও এদিন সোনিয়ার মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব (Lalu Prasad Yadav)। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনেককে জেলে ভরেছিলেন বটে, তবে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। এক্স হ্যান্ডেলে সাংবাদিক নীলম ভার্মার ‘The Sangh Silence in 1975’ নামের একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে বিজেপিকে আক্রমণ করেন লালু। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ১৯৭৫ সালটি দেশের গণতন্ত্রের উপর একটি কালো দাগ। কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই যে ২০২৪ সালে বিরোধীদের সম্মান করা হয় না। লালু মনে করিয়ে দেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক জারি করা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে জয়প্রকাশ নারায়ণ যে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছিলেন তার আহ্বায়ক ছিএন তিনি। দীর্ঘ ১৫ মাস জেলে ছিলাম।

লালু মনে করিয়ে দেন, আজকে বিজেপির যে মন্ত্রীরা এমারজেন্সি নিয়ে এত কথা বলছেন, সেই সময় তাঁদের অধিকাংশের নামও শুনিনি। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, সেকালে নরেন্দ্র মোদি, জেপি নাড্ডা-সহ এনডিএ মন্ত্রিসভার অধিকাংশই ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তি। এর পরেই আরজেডি প্রধান মন্তব্য করেন, ইন্দিরা গান্ধী আমাদের অনেককে জেলে ভরেন, কিন্তু তিনি কখনও আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। কিংবা তাঁর মন্ত্রীরা আমাদের ‘দেশবিরোধী’ বলে তোপ দাগেননি। যাঁরা সংবিধান রচয়িতা আম্বেদকরের স্মৃতিকে কলুষিত করতে চায়, তাঁদের ইন্ধন দেননি।

Previous articleমন্দিরে বৃষ্টির জল, রামপথে খানাখন্দ! অযোধ্যার বেহাল দশা নিয়ে কটাক্ষ তৃণমূলের
Next articleভেঙে পড়ছে মোদি সরকার! তিন বিমানবন্দর দুর্ঘটনায় কটাক্ষ তৃণমূলের