সীমান্তে অবাধে গো-মাংসের চোরাচালানের ছাড়পত্র! মোদির মন্ত্রী শান্তনুর ঠাকুরের চিঠি ফাঁস!

আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। এবার একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়লেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রে মোদি। মন্ত্রিসভার সদস্য শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)! তাঁর বিরুদ্ধে গো-মাংস চোরাচালানের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এক্স হ্যান্ডেলে শান্তনু ঠাকুরের একটি লেটার হেড পোস্ট করে চোরাচালানের মারাত্মক অভিযোগ তুললেন। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি!

কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur) ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় অবাধে চোরাচালান চালাতে মদত দিচ্ছেন। বিএসএফ যাতে কোনওরকম সমস্যা তৈরি না করে, তার জন্য অবাধে ছাড়পত্র মিলছে শান্তনু ঠাকুরের কাছে গেলেই। কোনও সাদা কাগজ বা চিরকুটে নয়, রীতিমতো নিজের লেটারহেডে লিখিত অনুমোদন দিচ্ছেন তিনি। যা সিলমোহর ও সই করা সেই চিঠি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রহরার দায়িত্বে থাকা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কর্তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। আর বনগাঁর বিজেপি সাংসদের সেই চিঠি দেখালেই চোরাচালানে কোনও বাধা থাকছে না।

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকা স্বরূপনগর, ঘইরাডাঙা, হাকিমপুর, কিটিন্ডা, পেট্রাপোল পাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আর পাচারের “বৈধ স্বীকৃতি” হিসেবে বিজেপি সাংসদের চিঠি ব্যবহার করছে একশ্রেণির চোরাচালান কারবারীরা!

বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের অফিসিয়াল লেটারহেডে এহেন সুপারিশের চিঠি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে। এমনই একটি চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, গত ২ জুলাই নিজের লেটারহেডে জনৈক জিয়ারুল গাজি নামের এক ব্যক্তিকে অনুমোদন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। জিয়ারুল হাকিমপুরের বাসিন্দা। সীমান্ত এলাকায় ৩ কেজি করে গো-মাংসের কারবার চালানোর জন্য তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছেন শান্তনু। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের ৮৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাকে চিঠি দিয়েছেন মোদির মন্ত্রী।

এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গরুপাচার নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। আসলে সর্ষের মধ্যেই ভূত! বোঝাই যাচ্ছে, কারা আসলে সীমান্তে গরুপাচার ও চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এক্স হ্যান্ডেলে শান্তনু ঠাকুরের সেই চিঠি পোস্ট করে কটাক্ষ করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও তথাকথিত গো-রক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহুয়া লিখছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিএসএফের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য ভারত-বাংলা সীমান্তে চোরাচালানকারীদের জন্য “পাস” ইস্যু করে অফিসিয়াল লেটার হেডে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন। à§© কেজি গরুর মাংসের চোরাচালানের অনুমতিও দেওয়ার জন্য চিঠি দিচ্ছেন।

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, সীমান্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সহায়তায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ব্যবসা। স্থানীয় স্তরে এই ধরনের অবৈধ কারবার চালানোর জন্য প্রথমে নিলাম ডাকা হয়। বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কয়েকজন মাতব্বর সেই বরাত পান। তারপর চড়া দামে বিক্রি করা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই ‘লিখিত পারমিট’। সেটা দেখিয়ে বিনা বাধায় চলে চোরাচালান।

এদিকে মতুয়া ঠাকুর বাড়ির সাংসদ সদস্য এভাবে সীমান্তে সরাসরি গো-মাংসের চোরা কারবারকে উৎসাহিত করায় ক্ষুব্ধ আরএসএস। সঙ্ঘের গো-সেবা গতিবিধির পশ্চিমবঙ্গ শাখার কো-অর্ডিনেটর ললিত আগরওয়াল বলেন, বেআইনি বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জড়িত থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। আরএসএসের শীর্ষ আধিকারিকদের বিষয়টি জানানো হবে বলেও জানান তিনি। বাগদা উপনির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি।

আরও পড়ুন; আজ সুপ্রিম কোর্টে NEET UG মামলার শুনানিÂ