সওয়াল-জবাব শেষ, মুখ্যমন্ত্রী বিরুদ্ধে করা রাজ্যপালের মামলার অন্তর্বর্তী নির্দেশ মুলতুবি রাখল হাই কোর্ট

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Anand Bose) মানহানির অভিযোগ মামলার সওয়াল-জবাব শেষ। সোমবার সেই মামলার অন্তর্বর্তী নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। গত বুধবার সেই মামলার শুনানি থাকলেও, কোনও মন্তব্যই করেনি আদালত। অথচ অতি উৎসাহী হয়ে এই শুনানি নিয়ে আদালতের নির্দেশ বলে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দেয় রাজভবন। পরে বিতর্ক ছড়ালে পোস্ট (Post) মুছতে বাধ্য হয়। শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের অভিযোগে এতটাই চাপে রাজ্যপাল, ফলে সব কিছুই ঘেঁটে ফেলছেন বলে অভিযোগ। এদিন মামলা নিয়ে কোনও অভিযোগ করতে চাননি বিচারপতি কৃষ্ণা রাও। জানানো হয়নি পরবর্তী শুনানি দিনও।এদিন শুনানিতে রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, “রাজ্যপাল সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে। ২ নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথ নিয়ে রাজ্যপাল চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে কোনও ভয়ের কথা না থাকলেও মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পান— এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। এটা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা হয়েছে।“

পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবীর সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “২টি অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। রাজভবনের এক তরুণী কর্মী এবং এক জন নৃত্যশিল্পী অভিযোগ করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্য মানহানিকর নয়। তিনি জনস্বার্থেই এমন কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন সবাইকে রাজভবনে যেতে হবে? মহিলারা সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না। মহিলারা তাঁকে সে কথা বলেছেন। এটা মানহানি হতে পারে না। জনসমক্ষে রয়েছে, এমন কথাই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এটা তাঁর বাক্‌স্বাধীনতা।“

শুনানির বিচারপতি জানতে চান, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে কি না? রাজ্যপালের আইনজীবী জানান, “রাজ্যপাল যে হেতু সাংবিধানিক পদে রয়েছেন সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে নয়, তাঁর ওএসডি-র বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই নিয়ে হাই কোর্টে মামলাও হয়েছে। হাই কোর্ট ওই এফআইআরের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।“

২ পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শুনানি মুলতুবি করেন বিচারপতি। এদিও তিনি কোনও রকম মন্তব্য করেননি। কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশও দেননি। শুনানি শেষ হলেও মামলা চলবে। তবে পরবর্তী শুনানি কবে, তা এখনও জানানো হয়নি।

গত বুধবার হাই কোর্টে Calcutta High Court মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজ্যপালের দায়ের করা এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানে বিচারপতি কৃষ্ণা রাও জানান, ১৫ জুলাই মামলাটির শুনানি হবে। এদিন এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না তিনি। কিন্তু অতি সক্রিয়তা দেখিয়ে শুনানির পর এ বিষয়ে রাজভবন থেকে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে রাজভবন থেকে আদালতে মামলার শুনানিতে কী কী ঘটেছে সেটি লিখতে গিয়ে বলা হয়, “কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court) মৌখিক ভাবে নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও অবমাননাকর মন্তব্য করা যাবে না।“ পোস্টে রাজভবনের তরফে দাবি করা হয়, রাজ্যপালের আইনজীবীর সূত্রে খবর যে, “মানহানির মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আদালত মৌখিক ভাবে জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে কোনও অবমাননাকর মন্তব্য করা যাবে না। অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে আবেদন সোমবার শোনা হবে।“ বেলা ১২টা ৫৯ মিনিটে পোস্টটি করা হয়। এরপরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। জানা যায়, মামলার বিষয়ে এদিন বিচারপতি কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। আনন্দ বোসের আইনজীবী আর্জি জানান, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যগুলি করা হচ্ছে, তা যেন আর না করা হয়- তার নির্দেশ পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত দিক আদালত। কিন্তু বিচারপতি জানিয়ে দেন, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। পরবর্তী শুনানি অর্থাৎ আগামী সোমবার বিষয়টি শোনা হবে। অর্থাৎ তাদের আবেদনকেই আদালতের নির্দেশ বলে পোস্ট করে দেয় রাজভবন। ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। তখনই বিপাকে পড়ে পোস্ট মুছে ফেলে রাজভবন। না হলে বড় আইনি প্যাঁচে পড়ে যেতে পারত বলে মত আইনজীবী মহলের।

সম্প্রতি নবান্নের একটি বৈঠক থেকে মমতা বলেছিলেন, “জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবেন? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।“ তার পরই হাই কোর্টে মানহানি মামলা করেন রাজ্যপাল।